রিপন শান
সুস্থ সুন্দর উন্নত প্রগতিশীল ভোলা জেলা বাস্তবায়নের জন্য ভোলার মানুষের বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ ও সাংস্কৃতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করা জরুরি বলে মনে করছেন ভোলা জেলার জনবান্ধব প্রশাসক আরিফুজ্জামান। তিনি মনে করছেন- ভোলার আর্থ সামাজিক অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি যদি ভোলার মানুষকে বহুমাত্রিক সাংস্কৃতিক উন্নয়ন উপহার দেয়া যায় ; তাহলে ভোলার অগ্রগতি সাধন হবে বিপুল বৈভবে ।
এজন্য তিনি ভোলা জেলা শিল্পকলা একাডেমি সহ ভোলার সকল উপজেলা শিল্পকলা একাডেমিকে দ্রুত সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন । ২৮ আগস্ট ২০২৪ দুপুরে ভোলা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে গৃহীত এক দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে এক প্রশ্নের জবাবে আরিফুজ্জামান বলেন- আবহমান কাল থেকেই দ্বীপজেলা ভোলাতে বহুমতের মিশ্র এক অবিমিশ্র সংস্কৃতির উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায় । প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ ভোলার জনজীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ । নদীবিধৌত পলিমাটির জনপদ ভোলার জনজীবন প্রকৃতির বিচিত্র স্বাদ ও সাধনায় ভরপুর । এখানকার মানুষের বিচিত্র জীবন ও জীবিকা, লোকেদের ব্যবহার করা রকমারি আঞ্চলিক ভাষার বিষয় ও বৈচিত্র্য, যুগ যুগ ধরে লালন করা অতিথিপরায়নতা, বিয়েবাড়ির বহুমাত্রিক আয়োজন, গ্রামীন খেলাধূলার বাহার, ঈদ ও পূজা পার্বণে সার্বজনীন উৎসবমুখরতা, কৃষিভিত্তিক জীবনসংগ্রাম, মাছ ধরার নানানরকম উৎসব ইত্যাদি নানান জীবানুসঙ্গ দ্বীপজেলা ভোলার সংস্কৃতিকে ব্যাপকভাবে সমৃদ্ধ করেছে। ভোলার সংস্কৃতি সমৃদ্ধ বলেই ভোলার সাহিত্য উর্বর ।জাতীয় মঙ্গলের কবি মোজাম্মেল হক , কথাসাহিত্যিক মোশাররফ হোসেন শাজাহান দেশবরেণ্য সুরকার শহিদুল ইসলাম, উপমহাদেশের বিখ্যাত কণ্ঠশিল্পী পাপড়ি সারোয়ার, বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত কবি নাসির আহমেদ, শিক্ষাবিদ প্রফেসর মোহাম্মদ হানিফ, শিক্ষাবিদ সালাউদ্দিন আহমাদ মিয়া, ইতিহাস গবেষক অধ্যাপক মোহাম্মদ হোসেন, মোস্তফা হারুন, মুহাম্মদ শওকাত হোসেন, কবি ও গবেষক অধ্যক্ষ কায়সার আহমেদ দুলাল, কবি ও কণ্ঠশিল্পী হাসান মাহমুদ, সাংবাদিক ও সংগঠক নজরুল হক অনু, কবি অনন্ত জাহিদ, কবি শাহ মতিন টিপু, কবি ও নাট্যকার রিপন শান, কবি ফয়সল নোই, কবি মাসুদ হাসান , কবি জুননু রাইন, কবি নীহার মোশাররফ , শিশুসাহিত্যিক মামুন সারওয়ার, কবি হাওলাদার মাকসুদ, কবি আল মনির , কবি জুলফিকার আলী, কবি দিলরুবা জ্যাসমিন, কবি জেসমিন জাহিদ,কবি কামাল হোসেন শাহীন, কবি গাজী তাহের লিটন, কবি এরশাদ সোহেল, কবি ফারজানা স্নিগ্ধা, অভিনেতা সাঈদ তপু, অভিনেতা রাশেদ সীমান্ত, আবৃত্তিশিল্পী সামস মিঠু, নেয়ামত উল্যাহ, মশিউর রহমান পিংকু, নাট্যশিল্পী মরহুম আবুল কাশেম দুলাল, শাহজামাল দুলাল, অতনু করঞ্জাই, নাসির লিটন, মনির আহমদ শুভ্র, আবুল কাশেম মেলেটারী, বাদল কৃষ্ণ দেবনাথ, জিল্লুর রহমান তুহিন, মাঈনুল ইসলাম মনির, কণ্ঠশিল্পী আলম আরা মিনু , মনজুর আহমেদ, মনি দে, উত্তম ঘোষ, রেহেনা ফেরদৌস, বাঁধন তালুকদার , আবিদুল আলম, ফারজানা লিয়ানা, নৃত্যশিল্পী নাদিয়া হাওলাদার মিস্টি সহ একঝাঁক আলোকিত মানুষ তাদের জীবন ও কর্মের অমূল্য আরশীতে ভোলার স্হানীয় ইতিহাসসহ জাতীয় সাংস্কৃতিক ইতিহাসকে আলোকিত ও সমৃদ্ধ করেছে। ক্ষেত্রবিশেষে এই আলো পৌঁছে গেছে বৈশ্বিক পরিমন্ডলে।
ভোলার সংস্কৃতিবান্ধব ডিসি আরিফুজ্জামান বলেন- ভোলাতে আমার জন্ম না হলেও ভোলাকেই আমি আমার জন্মস্থান জ্ঞান করছি । প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর ভৌগলিক শোভায় আমার গ্রাম আর ভোলার গ্রামের মধ্যে কোনো তফাত নেই। ভোলাকে আমি ভীষণভাবে ভালোবাসে ফেলেছি এবং ভোলাকে আমি হৃদয়ের সমস্ত অনুভব দিয়ে উপভোগ করছি ।
ডিসি আরিফুজ্জামান আরো বলেন – এমনও দেখা গেছে, আমরা সরকারি আয়োজন ছাড়াই ভোলার শিল্পীরা ভোলার শিক্ষার্থীরা জাতীয় পর্যায়ে নিজেদের ট্যালেন্ট থ্রো করে নানান পুরস্কার নিয়ে এসেছে। ভোলার মুখ উজ্জ্বল করছে ।
অন্য এক প্রশ্নের জবাবে আরিফুজ্জামান বলেন- আমি জেলা প্রশাসক হিসেবে ভোলাতে এসেছি আজ একবছর এক মাস । আমি লক্ষ্য করেছি ভোলায় জেলা শিল্পকলা একাডেমির কোন সুসংগঠিত কমিটি নেই। জেলা কালচারাল অফিসারকে দিয়ে সাধারণ সম্পাদকের শূন্যস্থান চালিয়ে নেয়া হয় । আমার কখনোই কালচারাল অফিসার কে খুব একটা কালচারড মনে হয়নি । ভোলার সাংস্কৃতিক অঙ্গনে নানান প্রতিভার সমাবেশ আমি লক্ষ্য করেছি । কিন্তু তাদের মধ্যে ঐক্য নেই । আমি মনে করি ভোলার সাংস্কৃতিক কর্মীদের মধ্যে দলাদলি ও গ্রুপিং মোকাবেলা করে যদি একটি সার্বজনীন ঐকতান তৈরি করা যায় , তাহলে জেলা শিল্পকলা একাডেমির সর্বজন গ্রহনযোগ্য একটি শক্তিশালী কমিটি গঠন করা যাবে । আর জেলা শিল্পকলা একাডেমি ঠিক হলে, সকল উপজেলা শিল্পকলা একাডেমি এমনিতেই ঠিক হয়ে যাবে।
অতিসম্প্রতি জেলা প্রশাসন আয়োজিত পিঠা উৎসবের বর্ণনা দিতে গিয়ে ডিসি আরিফুজ্জামান বলেন – পিঠা উৎসবের পারফরম্যান্সে আমি লক্ষ্য করেছি উপজেলাগুলোর পরিবেশনা তেমন গুছানো নয়। অনেক উপজেলার পারফরমেন্স ছিল “করার জন্যই করা” গোছের। এর কারণ- দক্ষ এবং যোগ্য লিডারশিপের অভাব। বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক বিবেচনায় গঠন করা উপজেলা শিল্পকলা একাডেমির ‘পকেট কমিটি’ আর নামসর্বস্ব রিহার্সাল দিয়ে তো আর অধিকতর ফলন আশা করা যায় না !!
আরিফুজ্জামান আরো বলেন- অনতিবিলম্বে ভোলা জেলা শিল্পকলা সহ সকল উপজেলা শিল্পকলা একাডেমির মেয়াদোত্তীর্ণ ও অকার্যকর কমিটি বিলুপ্ত করে দক্ষ যোগ্য দায়িত্বের প্রতি কমিটেড দেশপ্রেমিক ব্যক্তিদের সংযুক্ত করে ভোলার সকল শিল্পকলার কমিটি গঠন করা হবে । দায়িত্ব জ্ঞানহীন, সামাজিকভাবে বিতর্কিত ও মাদকাসক্ত কেউ যেন কমিটিতে আসতে না পারে ; সেজন্য সর্বোচ্চ সতর্ক থাকবো ।
জেলা সাহিত্য মেলা ২০২২(২০২৩) এর সফলতা উল্লেখ করে আগামী দিনে এটি কন্টিনিউ করবে কীনা এমন এক প্রশ্নের জবাবে সম্পুর্ন সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে থেকে উঠে আসা দ্বীপজেলা ভোলার ডিসি আরিফুজ্জামান জানান- আমার সর্বাত্মক চেষ্টা থাকবে। ভোলাতে জাতীয় কবিতা পরিষদের কমিটি গঠন হয়েছে শুনে আমি ভীষণ আনন্দিত এবং অভিভূত। যে কোনো সভ্যতার উৎকৃষ্ট ব্যারোমিটার হচ্ছে তার কবি সাহিত্যিক। জাতীয় কবিতা পরিষদ ভোলা ; ভোলার আবহমান ইতিহাস ঐতিহ্য ও লোকসংস্কৃতির নির্যাসকে হৃদয়ে ধারণ করে বহুদূর এগিয়ে যাবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস । শুধু জেলা প্রশাসক হিসেবে নয় একজন কবিতাশ্রমিক হিসেবে আমি আছি ভোলার কবিদের সাথে। আমি মনে করি কবিতা পরিষদ আমাকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করলে খুব শীঘ্রই কুইন আইল্যান্ড ভোলাতে একটি “নদীমাতৃক জাতীয় কবিতা উৎসব” সফলভাবে আয়োজন করা সময়ের ব্যাপার মাত্র । আপনারা আমাকে দোয়া করবেন, বৈষম্য বিরোধী আজকের এই নতুন বাংলাদেশে শিক্ষা শিল্প সাহিত্য ও সংস্কৃতির সৌরভে আমি যেন এক নতুন ভোলা উপহার দিয়ে যেতে পারি। এক্ষেত্রে দেশপ্রেম ও ঐক্যবদ্ধতার কোনো বিকল্প নেই। আর আমাদের মনে রাখতে হবে- ভোলা মানে শুধু ভোলা সদর নয় । ইলিশার প্রান্ত থেকে চরকুকরিমুকরির সাগরছোঁয়া সর্বশেষ সীমান্ত অর্থাৎ ভোলা সদর, বোরহানউদ্দিন, দৌলতখান, লালমোহন, তজুমদ্দিন, চরফ্যাসন , মনপুরার প্রতিটি জনপদের সম্মিলিত নাম দ্বীপজেলা ভোলা । ভোলায় জনম যার শতমুখি গর্ব তার ।
সংবাদটি শেয়ার করুন