৯ই মার্চ ২০২১ ইং | ২৪শে ফাল্গুন ১৪২৭ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১০:৪০ পূর্বাহ্ণ, মে ১৯, ২০১৮
হাসান মামুন
পলাশ চৌধুরীর বাবার নাম যে স্নেহাশীষ চৌধুরী, সেটা জানা ছিল না কিংবা মাঝে দীর্ঘদিন চলে গেছে বলে ভুলে গিয়েছিলাম। তার সংগে বোধকরি একবারই দেখা হয়েছিল ময়মনসিংহ শহরে ওদের মহারাজা রোডের বাড়িতে।
মনে পড়ে, একা ট্রেনে করে মোটামুটি দু’ঘণ্টায় পৌঁছে গিয়েছিলাম ওই সাদামাটা শহরে। সেটাই আমার প্রথম আলাদা করে ময়মনসিংহ যাওয়া। গিয়েছিলাম অসুস্থ সহকর্মী পলাশকে দেখতে। তখন আমরা বেক্সিমকোর বাংলা সংবাদপত্র ‘মুক্তকণ্ঠে’ কাজ করি। পলাশকে দেখে সেদিনই সম্ভবত বাসে করে ঢাকা ফিরেছিলাম।
পলাশের বাবা-মা ও ভাইটি বড় আদর করে খাইয়েছিলেন। বোধহয় না বলেকয়েই চলে গিয়েছিলাম তাদের বাসায়। এমনটা অস্বাভাবিক ছিল না তখন। হঠাৎ কারও দেখা পেয়ে আমরা তখন কতই না আনন্দিত হতাম। সেইসব দিন কী আর ফিরে পাব?
যাহোক, পলাশদের দোতলা সেই বাড়ির ছবি দেখছি ক’দিন ধরে তার স্ট্যাটাসে। তিনি দিনের পর দিন জানাচ্ছেন যে, কোনো এক ক্ষমতাবান দখল করে নিতে চাইছেন বাড়িটি। আদালতের নির্দেশনাও তিনি/তারা নাকি মানছেন না।
কালকেই খুব মনে হলো, দেখি তো বিষয়টা একটু খতিয়ে। পলাশ চৌধুরীর সংগে প্রত্যক্ষ যোগাযোগ নেই আজ অনেকদিন। তাই ফেসবুকেই খতিয়ে দেখতে হলো। তো দেখতে গিয়ে আমাকে পড়ে ফেলতে হয় তার বাবা স্নেহাশীষ চৌধুরীর একটি কষ্টকম্পিত, অশ্রুসিক্ত লেখা। কী পরিস্থিতিতে বহু বছরের স্মৃতিগন্ধময় ওই বাড়ি ছেড়ে তাদের পথে নামতে হচ্ছে মাথা নিচু করে — নীরবে, বিনা বাক্যব্যয়ে, সে দৃশ্যটি তিনি এঁকেছেন ওখানে।
জানি না, পলাশ কিংবা তার বাবার অভিযোগ কতটা সত্য। কিন্তু হতবাক মি. স্নেহাশীষের কাতর বর্ণনা আমাকে প্ররোচিত করে এটা বিশ্বাস করতে যে, তার অভিযোগ সত্য। সবচেয়ে সত্য এ কথাটি যে, বাংলা নামের এ বয়োবৃদ্ধ দেশপ্রেমিক মানুষটির মন একেবারেই ভেঙে পড়েছে চারপাশের প্রায় সবার এড়িয়ে চলা দেখে।
স্নেহাশীষ বাবুকে আমার হালকা মনে পড়ে যায়। যে ছায়া-ছায়া ঘরটিতে বসে আশ্চর্য অতিথি আমি দুপুরে খেয়েছিলাম, তা মনে পড়ে আরও বেশি। পলাশের মায়ের মুখখানিও মনে পড়ে কিছুটা। তিনি নাকি গত হয়েছেন এর মধ্যে। অতএব, তাকে আর দেখতে হচ্ছে না এইসব। ভাঙা মন নিয়ে কোথাও থেকে বেরিয়ে আসার ক্ষণটি তো বেদনায় পেয়ালা ভরে ওঠার মতো।
আমার এখন মনে পড়ছে ওয়াহিদুল হকের কথা। ওই অল্প সময়ের সফরেই জেনেছিলাম, ময়মনসিংহ গেলেই তিনি একবার না একবার যান মহারাজা রোডের এ বাড়িতে। পরে পলাশের মাধ্যমেই আমার পরিচয় হয় এ ক্ষণজন্মা মানুষটির সংগে, যার মতো অসাম্প্রদায়িক ব্যক্তি আজ অব্দি দেখিনি। দেখবও না বোধহয়।
ভালোই হলো, ওয়াহিদ ভাইও আর বেঁচে নেই। নইলে স্নেহাশীষ চৌধুরীর লেখাটি পড়ে তিনি আরও অনেক বেশি কষ্ট পেতেন। হতেন বেদনাবিদ্ধ। আর ভাঙা মন নিয়ে ভাবতেন, এরকম একটি দেশের জন্যই কি সারাটা জীবন এইভাবে ব্যয় করলাম!
Corporate Office:
6/A Eskatan Garden
Dhaka, Bangladesh.
Mobile: 017111-66826
Email: mansoumit@yahoo.com
Helpline - +88 01719305766