এসবিএন নিউজ: সিলেটের চারদিক ঘিরে রয়েছে সীমান্ত এলাকা। আর সীমান্ত এলাকা ঘিরেই গড়ে উঠেছে মাদক ব্যবসায়ীচক্র। মরণ নেশা সীমান্ত অতিক্রম করেই ঢুকে পড়ে আমাদের এদেশে।
এছাড়া স্থানীয়ভাবেও মাদক তৈরী হচ্ছে। আর এসব মাদক সেবন করে নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে আমাদের তরুণ ও যুব সমাজ। তাদেরকে এখনই এ পথ থেকে ফেরাতে না পারলে এদেশ গভীর সঙ্কটে পড়বে।
এখনই মাদককে না বলতে হবে। এই মরণ নেশা থেকে তাদেরকে ফেরাতে হবে। বর্তমানে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে, আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর কার্যক্রমের মধ্যদিয়ে এই যুদ্ধ আমরা অনেকই কমবেশী সকলেই অবগত হয়েছি।
কিন্তু তারপরও সাফল্য আমাদের কাঙ্খিত পর্যায়ে উন্নীত হচ্ছেনা, উপনিত হচ্ছেনা। কারণ নিশ্চয়ই আমরা আমাদের সাফল্য সুত্র ভুলে গেছি।
বক্তারা বলেন- সাফল্য সুত্র হচ্ছে আমরা ৭১ সালে বিশাল একটি সামরিক বাহিনীর সাথে যুদ্ধ করে এদেশকে স্বাধীন করেছিলাম। কেমন ছিল আমাদের সে যুদ্ধ? সেই যুদ্ধ একটি সামরিক যুদ্ধ আমি বলব না, সেটি ছিল জন যুদ্ধ, সর্বাত্তক যুদ্ধ। সেই যুদ্ধে কৃষক, শ্রমিক, মেহনতি মানুষ ও সেনাবাহিনী, বিজিবিসহ সবার অংশগ্রহন ছিল। সবার অংশগ্রহনের মাধ্যমেই আমরা আমাদের কাঙ্খিত স্বাধীনতাকে ছিনিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছিলাম, দেশকে স্বাধীন করতে সক্ষম হয়েছিলাম।
এরমধ্য দিয়ে একটি সত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ‘সর্বাত্তক যুদ্ধ যদি শুরু হয়, জন যুদ্ধ যদি শুরু হয়, সবার অংশগ্রহনে যে যুদ্ধ সেই যুদ্ধ যদি শুরু হয় তাহলে সাফল্য অনির্বায। বর্তমানে নতুন করে আমাদেরকে মাদকবিরোধী এই যুদ্ধে সেই ভাবেই সবার ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।’ মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচাররোধে সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে।
শনিবার সকালে মাদকবিরোধী মাসব্যাপি অভিযান ও প্রচার-প্রচারণার সমাপনী দিন উপলক্ষে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদফতর সিলেট আয়োজিত বর্ণাঢ্য র্যালি পরবতী আলোচনা সভায় বক্তারা এ কথাগুলো বলেন।
মদনমোহন কলেজের শহীদ সোলেমান হলে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার জামাল উদ্দিন আহমদ।
আলোচনা সভায় মদনমোহন কলেজ অধ্যক্ষ আবুল ফতেহ ফাত্তাহ’র সভাপতিত্বে ও শিক্ষক উজ্জল দাসের পরিচালনায় শুরুতেই পবিত্র কুরআন থেকে তেলাওয়াত করেন মাওলানা তাজুল ইসলাম ও গীতা পাঠ করেন ক্রয়ষাদ পাল।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন- সিলেট বিভাগীয় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক জাহিদ হোসেন মোল্লা।
বিশেষ অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন- বিজিবি ৪১ ব্যটালিয়নের সিও লে: কর্নেল শাহ আলম চৌধুরী, সিলেট রেঞ্জ’র অতিরিক্ত ডিআইজি আক্কাছ উদ্দিন ভূইয়া, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. আমিনুর রহমান, সিলেট বিভাগীয় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক জাফরুল্লা কাজল, গ্রামীণ জনকল্যাণ সংস্থার নির্বাহী পরিচালক মো. জামিল চৌধুরী, সিলেট প্রেসক্লাবের কোষাধ্যক্ষ আফতাব আহমদ, দৈনিক সমকালের স্টাফ রিপোর্টার ফয়ছল আহমদ বাবলু প্রমুখ।
এর আগে বর্ন্যাঢ্য র্যালি লামাবাজার মদনমোহন কলেজ থেকে শুরু হয়ে চৌহাট্রা পয়েন্ট ঘুরে সেখানে ফিরে আসে। র্যালিতে স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থী ছাড়াও বিভিণœ মসজিদের ইমাম, মাদকাসক্ত চিকিৎসা ও পুনবাসন কেন্দ্র এইম ইন লাইফ, প্রশান্তি, আদর, বাঁধনসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়।
র্যালিতে বিশাল আকৃতির তিন হাতির মুখে টানানো ব্যানার সকলের দৃষ্টি কাড়ে। এতে লেখা ছিল নেশা ছেড়ে কলম ধরি, মাদকমুক্ত সমাজ গড়ি। র্যালিতে অংশ গ্রহনকারীদের সাধূবাদ জানান সড়কের পাশে থাকা পথচারী ও ব্যবসায়ীরা। এছাড়াও বিজিবি, আনসার, কারা কতৃপক্ষ এবং পুলিশ বিভাগের সুসজ্জিত ব্যান্ডদল মাদকদ্রব্য অধিদপ্তরের ফেস্টুন সাঠানো হাতির দল র্যালির সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি করে।
আলোচনা সভায় বক্তারা আরো বলেন, আমরা আজকের বাংলাদেশকে যদি খোলা চোখে দেখি, তাহলে দেখব বাংলাদেশ উড়ছে, আকাশে উড়ছে। আবার বাংলাদেশ ধুকছে, মাদকে ধুকছে।
বাংলাদেশ আকাশে উড়ছে, এই মূহুর্তের আমরা লক্ষ্য নিয়েছি এই বছর আমাদের প্রবৃদ্ধি ৭.৩ প্রমাগত ভাবে পিছনের বছরগুলোতে আমরা ৬ এর উপরে প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছি।
গত বছর আমাদের প্রবৃদ্ধি ছিল ৬.৫। বক্তারা বলেন- আমরা নিজস্ব অর্থে পদ্মা সেতুর মতো বিশাল সেতু নির্মানের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। আমরা মেট্টোরেল করছি, বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমাদের যে সাফল্যের পতাকা সেটা বিশ্বের মধ্যে পথপথ করে উড়ানোর সাহস দেখাচ্ছি।
বক্তারা বলেন- অন্য দিকে যদি, আমাদের আরেকটি দৃশ্যে চোখ রাখি, তাহলে দেখব যুবসমাজের একটি অংশ মাদকের করালগ্রাসে ধুকছে, মৃত্যুর মুখোমুখি হয়ে অনেকটা অসহাত্বের মধ্যে মাদক গ্রহন করছে। মাদকাসক্ত যুবকরা পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রকে পঙ্গু করছে, এই যে দূরক্রমের বিষয় চলে আসছে আমাদের দেশে। এই পরিস্থিতিতে সরকার অনেকদিন ধরেই মাদকের বিরুদ্ধে স্পষ্ট যুদ্ধ ঘোষণা করেছে।
বক্তারা বলেন- বাংলাদেশে মাদক উৎপাদন হয়না কিন্তু মাদক পোষ হয়। ভারত-মায়ানমারসহ বিভিন্ন দেশ হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। সেই সুযোগে এদেশের কিছু অসাধু লোক মাদক ব্যবসার সাথে জরিয়ে যুবসমাজকে ধ্বংস করছে। আমরা সবাই সচেতন হয়ে মাদকের বিরুদ্ধে সরকার ঘোষিত যুদ্ধেও অংশগ্রহন করে স্বাধীনতা যুদ্ধের মতো সফল হতে হবে।
সংবাদটি শেয়ার করুন