২৯শে জুন ২০২২ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই আষাঢ় ১৪২৯ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৮:২০ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১৪, ২০২২
শেলী সেনগুপ্তা
মাদক এক ভয়াবহ ব্যাধি, যা এখন আর শুধু শহরে সীমাবদ্ধ নেই, ধনী-দরিদ্র, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে তৃণমূল পর্যায়ে বিস্তৃত হয়েছে। মাদকসেবীদের বড় অংশ বয়সে তরুণ যাদের উপর দেশ ও জাতির ভবিষ্যৎ নির্ভরশীল। এটি সৃজনশীল কর্মকান্ডের জন্য বিশেষ বাধাস্বরুপ।
মানবসভ্যতার আদিকাল থেকেই মাদক-ব্যবহারের প্রচলন ছিল। কিন্তু সেটি ছিল সীমিত আকারে। এখন এর ব্যাপ্তি সমাজের সর্বস্তরে। মাদকদ্রব্যের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এগুলো মস্তিস্কের বিশেষ বিশেষ স্থানকে উদ্দীপ্ত করে যার ফলে সাময়িকভাবে তীব্র ভালোলাগার অনুভুতি হয়। কিছুদিন ব্যবহারের পর এর মাত্রা আরো বাড়িয়ে দিতে হয়। এজন্য মাদক-ব্যবহারের পরিমাণ ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেতে থাকে যার ফল হয় দীর্ঘমেয়াদী আসক্তি।
মাদকাসক্ত ব্যক্তি দিনের বেশিরভাগ সময় ব্যয় হয় মাদক সংগ্রহ এবং এর দ্বারা সৃষ্ট শারীরিক ও মানসিক সমস্যা দূরীকরণে । এর ফলে দৈনন্দিন স্বাভাবিক কাজকর্ম, পড়াশুনা, চাকরি, ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মাদকের ব্যয় নির্বাহ করতে গিয়ে অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ে। পরিবারে একজন মাদকাসক্ত ব্যক্তি সেই পরিবারের জন্য কতটা অশান্তির কারণ তা ভুক্তভোগীরা খুব ভালো করেই জানেন। অনেক সময় মাতাপিতা সন্তানের মৃত্যু কামনা করে কিংবা পুলিশ হেফাজতে দেওয়ার মতো চরম সিদ্ধান্তও গ্রহণ করে।
সমাজ থেকে মাদকাসক্তি দূর করতে পরিবারের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পরিবারের সচেতনতা, ভালবাসা, দৃঢ় অংগীকার ও সক্রিয় ভূমিকা এ বিভীষিকাকে কঠোরভাবে প্রতিরোধ করতে পারে।
যদি দেখা যায় সন্তান অতিমাত্রায় রাগারাগি ও উত্তেজনা প্রকাশ করছে, দৃশ্যমান কারণ ছাড়াই অতিরিক্ত টাকা দাবি করছে এবং তা না পেলে ভাঙচুর ও মারামারিতে জড়িয়ে পড়ছে, সারারাত জেগে থেকে সারাদিন ঘুমাচেছ, যখন-তখন অকারণে বাইরে যাচ্ছে, ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা, বেশভূষা ও স্বাস্থ্যের দ্রুত অবনতি হচ্ছে, বেশি বেশি নতুন ও অজানা বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে চলাফেরা করছে, তাহলে মাদকাক্তির বিষয়টি সন্দেহের তালিকায় রাখতে হবে। নিশ্চিত হওয়ার জন্য আরও খোঁজ নিতে হবে। প্রয়োজনে মনোচিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে মূত্রপরীক্ষাও করাতে হবে।
এর সাথে খুঁজে বের করতে হবে মাদকাসক্তির কারণও।
এই জন্য পরিবারের প্রতি প্রথম পরামর্শ সন্তানকে বুঝতে হবে। অহেতুক সন্তানের সাথে দুরত্ব সৃষ্টি করা যাবে না। তাদের ভালোলাগা, মন্দ লাগাকে গুরুত্ব দিতে হবে।
প্রতিটি সন্তান চায় তার পরিবারের অভ্যন্তরের মা-বাবার মধ্যে সুসম্পর্ক বজায় থাকুক। তার পরিবর্তে মা বাবার দ্বন্দ্ব অনেক সন্তানই স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে পারে না। ফলে এসব সন্তান মাদকাসক্ত হয়ে অন্যভাবে মানবিক প্রশান্তি খোঁজার চেষ্টা করে। সন্তানের মঙ্গলের জন্য দাম্পত্য কলহ এড়িয়ে যেতে হবে।
পরিবারে নৈতিকতা বজায় রাখতে হবে। পরিবার থেকে নৈতিকতা শিক্ষা পেলে তা সারাজীবন কাজে লাগবে। আর পরিবারে অনৈতিকতার চর্চা হলে সে শিশু কখনোই নৈতিকতা শিখতে পারবে, এবং মাদকাসক্ত হওয়া ছাড়াও আরও অনেক অপকর্মে জড়িয়ে পড়তে পারে।
সন্তানের বদ্ধু হওয়ার চেষ্টা করতে হবে এবং কোয়ালিটি টাইম কাটাতে হবে। ছুটির দিনে বাইরে বেড়াতে নিয়ে যেতে হবে। এমন সব জায়গাতে নিয়ে যেতে হবে যেন সে উপভোগ করে এবং বার বার এমন সময় কাটানোর জন্য অপেক্ষায় থাকে।
সন্তান ছাড়াও পরিবারের সবার মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। সন্তানকে একটা সুন্দর পারিবারিক পরিবেশ উপহার দিতে হবে।
সন্তানকে অহেতুল সন্দেহ করা যাবে না। পরীক্ষার ফলাফল কিংবা অন্য কোন কারণে অন্যের সাথে তুলনা করে শাসন করা যাবে না। এমন কিছু বলা যাবে না যার ফলে তার মনে কোন বিরুপ ভাব উদয় হয়।
পারিবারিক এবং সামাজিকভাবে বিভিন্ন ধরনের সৃষ্টিশীল, প্রতিযোগিতামূলক অনুষ্ঠান, খেলাধূলা এবং মাদকবিরোধী সচেতনতামূলক অনুষ্ঠানাদির মাধ্যমে শিশু কিশোর ও তরুণ সমাজকে গড়ে তোলা আবশ্যক।
শিশু থেকে তরুণ বয়স পর্যন্ত বয়সটা পিতা-মাতা ও পরিবারের সংস্পর্শ কাটে তাই একটি পরিবার মাদকমুক্ত সমাজ গঠনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারে।
তারপরও যদি কোন কারণেই পরিবারের অজ্ঞাতে কোন ছেলে-মেয়ে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে তাকে ঘৃণা না করে বন্ধুসুলভ আচরণের মাধ্যমে বিভিন্ন কাউন্সিলিং এর মাধ্যমে মাদকের কুফল এবং সর্বনাসী মাদক নেশার ব্যাপারে জানাতে হবে।
পরিবারসহ সকল শ্রেণীর মানুষের সক্রিয় অংশগ্রহণ পূর্বক মাদকমুক্ত বিশ্ব গড়ে তুলে এ বিশ্বকে সবার বাস উপযোগী করে তুলতে হবে।
Editor in Chief
Contact: 017111-66826
National Desk In-charge
Sumon Suddha
Contact: 01710010218
RED TIMES LIMITED
116-117, Concord Emporium,
Kataban, Dhaka-1205.
Mobile: 017111-66826
Email: redtimesnews@gmail.com