মাশরুরা লাকি
আমার নানাবাড়ি এলাকায় অনেক হরিজন সম্প্রদায়ের লোকের বসবাস ছিল, এখনো আছে। আমি ছোটবেলায় দেখেছি, ওরা কী কষ্ট করেই না দিনাতিপাত করে। ওদের একমাত্র পেশা শহরটাকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা। বেতন বলতে এত কম টাকা পায় যে ওরা সকালে খায় চা/মুড়ি, দুপুরে খায় ডাল- ভাত আর রাতের খাবার না থাকায় বাংলা মদ খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। আবার যারা একটু বয়স্ক হয়ে যায়।তারা কাজ করার শক্তি সামর্থ্য হারিয়ে ফেলে।এবং তাদের কষ্টের কোন সীমা থাকেনা। কারণ তারা তো ভিক্ষাও করতে পারেনা। আবার অনেক মুসলিম পরিবার তাদেরকে ভিক্ষা দিতেও চায়না। আমি ছোটবেলায় দেখেছি, আমার নানাবাড়িতে অনেক ধরনের মানুষের আসা-যাওয়াই ছিল। তারমধ্যে হরিজন সম্প্রদায়ের অনেক লোকই আসতো। বিশেষ করে কিছু বয়স্ক মহিলারা বেশি আসতো। তারা এসে খাবার চাইত। আমার নানী এবং মামারা কাউকেই ফিরিয়ে দিতেন না। তবে ওদের প্লেট/ গ্লাস ওরা নিজেরা সবসময় সাথে করেই রাখতো। আবার এমনও দেখেছি, কোরবানির ঈদের সময় ওরা প্রতিটা বাড়ি বাড়ি গিয়ে মাংস তুলতো। অনেকেরই দেখেছি ওই সময় ১০--২০কেজি পর্যন্তও মাংস পেয়েছে। আমি একদিন কৌতুহল ভরে জিজ্ঞাসা করেছিলাম আপনারা এই মাংস দিয়ে কী করেন? একজন শোনে তো আর পাঁচজন খিলখিল করে হাসে,বলে আমরা এগুলো রান্না করে খাই লো। আমরা সারাবছর মাংস কিনে খেতে পারিনা।
আবার অন্যদিকে দেখেছি, রোজার সময় ওরা যাকাতের কাপড় ও ফিতরার টাকাও নিত।
ওদের বসবাসের জন্য সরকারিভাবে আবাসন দেয়া হয়েছিল। সেই ৩০--৩৫ বছর আগের বিল্ডিং। তখনই বৃষ্টি এলে ছাদ ছুঁইয়ে পানি গড়িয়ে পড়তো। প্রতিটা পরিবারের জন্য একটা করে কামরা বরাদ্দ ছিল। সেই কামরায় মা/বাবা, দাদা/দাদী ,ছেলে/মেয়ে সবাই একসাথে গাদাগাদি করে থাকতো ।ওদের ছেলে-মেয়েদের সাথে অন্য সম্প্রদায়ের ছেলে-মেয়েরা খেলা করেনা,গল্প করেনা, কথা বলতেও চায়না। ওদের জন্য একটা প্রাইমারী স্কুল আছে। সেই স্কুলে হিন্দু/ মুসলিম শিক্ষক নিয়মিত ক্লাস নিতে আসতো না।
হরিজন সম্প্রদায়ের স্বামী-স্ত্রী খুব ঝগড়া করতে পারে। ঝগড়া লাগলেই ওদের একটা সাধারণ কথা ছিল--- আরে এএএএএ বুক চাটিয়ে বেটি অথবা বেটা। আমার এখনো মনে পড়ে। আর ওদের কেউ মারা গেলে সৎকার করার জন্যও কোন টাকা--পয়সাও থাকেনা। সেই ভিক্ষা বৃত্তি করে তারপর মৃত লাশের জায়গা হয় শশ্মাসের এক কোনায় খুবই নিম্নমান এলাকায়। মাঝেমাঝে আমার জন্ম আর মৃত্যু নিয়ে খুবই রহস্যময় লাগে। খুব বেশি অদ্ভুত লাগে। একই রকমভাবে তৈরি সৃষ্টির সেরাজীব মানুষ, মানুষের ভেতর কত বৈষম্য !
আচ্ছা, এখন তো রমজান মাস। যারা বিত্তশালী আছেন তাঁরা কী তাদের যাকাতের কিছু টাকা পয়সা দিয়ে তাদের জন্য কী কিছু করা সম্ভব? অথবা ওদের জীবনের নির্ভরযোগ্য কিছু একটা করে দেয়া। যা দিয়ে পরবর্তীতে ভালোভাবে দুমুঠো খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকতে পারে।
RED TIMES LIMITED
116-117, Concord Emporium, Kataban, Dhaka-1205.
Mobile: 017111-66826
Email: [email protected]
Web Design by: SuperSoftIT.com