নার্গিস সোমা জাফর
ফেসবুকে মা কে নিয়ে ভালোবাসার জোয়ার বইছে । কিন্তু বাস্তবে তার কতটুকু?
মা কে ভালোবাসার জন্য কোন দিবসের প্রয়োজন হয় না । মায়ের ভালোবাসা প্রতিদিন, আমরা যারা আজকে মাকে ভালোবাসা জানিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছি তারা কি একজন ও মাকে জিজাসা করেছে মা তুমি কেমন আছো?
একবার ও বলেছি- মা ,তোমার কাছে আমি চির ঋণি । আমাকে এই সুন্দর পৃথিবীর আলো দেখাবার জন্য, যখন সবাই ঘুমিয়ে গিয়েছে তুমি আমার জন্য রাত জেগেছো, তোমার খাবারের প্রথম ভাগটুকু আমার মুখে তুলে দিয়েছো । পৃথিবীতে মা শুধু জানতে চায়, " ভাত খেয়েছিস"? আমার মার গল্পো বলতে শুরুটা হবে রান্না ঘর থেকে । আমার বাবা সরকারী চাকুরীজীবি ছিলেন পাঁচ ভাইবোন সবার পড়াশোনা খুব একটা সহজ ছিলোনা, একটা ডিম অর্ধেক করে ভাই বোনদেরকে মা খেতে দিতেন । সবার খাওয়া শেষে তিনি খেতেন। ঈদে কখনো মার জন্য নতুন শাড়ী হতো কখনো পুরানো শাড়ীতে মাড় দিয়ে পরতে দেখেছি । কিন্তুু আমাদের জন্য সব সময় থাকতো নতুন জামা, বাবাকে দেখেছি একটা শার্ট পরে সপ্তাহ পার করতে । আমার এসব কথা বলতে এতটুকু লজ্জা লাগছে না । আমার অহংকার হয় আমার মা- বাবা অনেক কষ্ট করে আমাদের বড় করেছেন। মানুষ হতে পেরেছি কিনা জানি না। শুধু আমার মা নয় প্রতিটা মা তার সন্তানদের কষ্ট করেই বড় করেন,
আমরা তাদের প্রতিদান দিচ্ছি কতটুকু? ফেজবুকে ভালোবাসা বন্ধুদের দেখানোর জন্য মায়ের জন্য আমরা কে কি করেছি? একবার ও কি বলেছি চলো মা আজকে সারাটা দিন তোমার যা ইচ্ছা তাই করবে তুমি যেখানে যেতে চাও যাবে আমি নিয়ে যাবো।আমার মবে হয় আমার ফেজবুক বন্ধুদের ১০০ জনের ভেতরে হয়ত হাতে গোনা ১/২ জন বলেছে।
আমাদের আশেপাশে যারা থাকে যাকেই বলেন না কেন চলো আজকে তোমাকে শপিং করাবো সে আপনাকে কখনোই না বলবে না কিন্তু একমাএ মা, বাবাই বলবে না এখন না টাকাটা রেখে দে তোর কাজে লাগবে এত খরচ করার দরকার নেই।
বিয়ের পর ছেলের বউ তার স্বামীকে নিয়ে ভালো থাকতে চায়,এমন মেয়ের সংখ্যা এখন কম নয়, সে ভুলপ যায় তার শ্বাশুরী তার স্বামীকে জন্ম না দিলে,ঠিকমত মানুষ না করলে তার আজকের সুখের সংসার হতো না, অনেক সময় মা ও তার আদরের ছেলেকে বিয়ে দেন ঠিকই কিন্তুু তার ছেলেকে ছোটই মনে করেন সব সময়ের মত, তার আদর তার সন্তানকে অন্যের ভালোবাসার অংশ করতে রাজি হন না তখনি হয় মৌন ভালোবাসার দন্দ শাশুরী বৌয়ের মাঝে, দিন দিন রুপ নেয় কলহের,আমরা সবাই ভালোবাসার কাছে বড় বেশী স্বার্থপর।
অনেক সন্তান আছে এই মা,বাবাকেই সংসারের পুরাতন ফার্নিচারের মত মনে করেন প্রয়োজন ফুরিয়ে যায় বৃদ্ধ বয়সে কারণ তখন সন্তান সচল, ফার্নিচারের জায়গা হয় স্টোর রুমে আর মা/ বাবার হয় বৃদ্ধাশ্রমে।
আমি অমার মাকে ভালোবাসি কারণ সে আমার মা । তার সাথে পৃথিবীর কোন জিনিসের তুলনা করা সম্ভব না ।কেউ করতে পারে কিনা আমি জানি না,একজন মা লেখাপড়া না জানলেও তিনি জানেন তার বাচ্চাকে কিভাবে বড় করতে হবে,তাকে কি খাবার দিতে হবে।
আগে মাকে শুধুই ভালোবাসতাম, যখন আমি নিজে একটা মেয়ের মা হলাম তখন বুঝতে পারলাম আমার মা আমাকে কতটা কষ্ট করে এত বড় করেছে। একটা মেয়ে যখন নিজে মা হয় তখন সে বুজতে পারে তার মাকে, কিন্তুু একটা ছেলের সেই কস্টো বোঝার ক্ষমতা কোনদিন ও হবেনা, তবে ছেলেরা কি মাকে কম ভালোবাসে?
হয়ত আবার হয়তবা না, আমরা আমাদের বন্ধু/ বান্ধবীর কাছে নিজের কস্টের কথা ভালোলাগার কথা গুলো আলোচনা করি এটা যদি নিজের মা/ বাবার সাথে সহজ ভাবে করতে পারতাম তাহলে অবেকেই জীবনে ভুল পথে যেতো না,আমরা আসলে সম্পর্ক গুলো সহজ করতে পারিনা, সহজে বলতে পারি না মা আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি, ভালোবাসি সহজে বলতে পারলে নিজের সমস্যার কথাটাও সহজে বলতে পারবো ।
লেখক ঃ শিক্ষক ও চিত্রশিল্পী
RED TIMES LIMITED
116-117, Concord Emporium, Kataban, Dhaka-1205.
Mobile: 017111-66826
Email: [email protected]
Web Design by: SuperSoftIT.com