ঢাকা ১৩ই অক্টোবর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৮শে আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ই রবিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি


মৌলভীবাজারে আওয়ামী লীগের ৭৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন

redtimes.com,bd
প্রকাশিত জুন ২৩, ২০২৩, ০৯:৫৭ অপরাহ্ণ
মৌলভীবাজারে আওয়ামী লীগের ৭৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন

কপিল দেব :

মৌলভীবাজারে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ৭৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত হয়েছে। এ উপলক্ষে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ, এক মিনিট নীরবতা পালন,  কেক কাটা এবং আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।

শুক্রবার (২৩ জুন) সন্ধ্যা ৭ ঘটিকায় স্থানীয় পৌর সভার হল রুমে জেলা আওয়ামী লীগের আয়োজনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

আলোচনা সভায় সভাপতিত্বে করেন মৌলভীবাজার রাজনগর -৩ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি নেছার আহমদ এমপি ।

জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সংসদ সদস্য নেছার আহমদের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মিছবাহুর রহমানের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।

বক্তারা বক্তব্যে বলেন,  জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে গড়া সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার জন্য বিশ্ব দরবারে বাঙ্গালী সমাজ আজ ধন্য। রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে তার সাফল্য এভারেস্টের সমতুল্য। বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বাংলাদেশের জন্য সৌভাগ্য বয়ে এনেছেন। একাত্তরে বাংলাদেশের অভ্যুদয় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর প্রিয় সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের আত্মত্যাগ ও জনগণের ঐকান্তিক প্রচেষ্টারই ফল। বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু এক ও অভিন্ন সত্তা। বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দলটি ছাড়া আমাদের স্বাধীনতা লাভ সম্ভব ছিল না। আর বঙ্গবন্ধু ব্যতীত আমরা বাঙালি জাতি হিসেবে বিশ্বে পরিচিত হতে পারতাম না। অন্যদিকে বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ গৌরবান্বিত রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে সারা বিশ্বের রোল মডেল।’ একমাত্র আওয়ামী লীগই পারে দেশের মানুষের কল্যাণ করতে। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। এই অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে ইনশাআল্লাহ।

বক্তৃারা আরও বলেন, ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন রাজনৈতিক দল হিসেবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পথচলা শুরু। পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক শাসকদের দমন-পীড়নের পরিবেশে টিকে থাকার লড়াইয়ে জিতেছিল দলটি। এই দলটি কারও অনুকম্পায় কখনোই পরিচালিত হয়নি। বরং আত্মত্যাগী নেতাদের নেতৃত্বের গুণে জনগণের ভরসাস্থল হয়ে উঠেছিল। আর স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস তৈরি করেছিলেন স্বয়ং বঙ্গবন্ধু। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট নিরঙ্কুশ বিজয় লাভ করে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনা চতুর্থবারের মতো শপথ নেন। মহমারী করোনার মধ্যেও নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত পদ্মা সেতুর উদ্বোধন আওয়ামী লীগের বিপুল অর্জনের মধ্যে একটি বিস্ময়কর সাফল্যের মাইলফলক। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটেছিল বলেই আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্ব মোড়লদের চোখ রাঙানিতে ভীত নন। সাহসী ও সম্মানজনক ভূমিকার জন্য তিনি আজ বিশ্বনন্দিত রাষ্ট্রনায়ক। সুতরাং আমাদের সজাগ ও ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে জননেত্রী শেখ হাসিনাকে আবারও প্রধানমন্ত্রী বানাতে নৌকাকে বিজয়ী করতে হবে।

আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আজমল হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র ফজলুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান কামাল হোসেন, মসুদ আহমেদ,অজয় সেন,প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সৈয়দ আব্দুর রউফ মানিক, উপ-দপ্তর সম্পাদক এডভোকেট নিখিল রঞ্জন দাস, শিল্প ও বাণিজ্যিক বিষয়ক সম্পাদক আবু সুফিয়ান, সদস্য আব্দুল বাছিত তরফদার ও আক্তারুজ্জামান, জেলা তাঁতী লীগ সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ লিয়াকত আলী,, পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক এম এমদাদুল হক মিন্টু, উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আকবর আলী, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালিক তরফদার সোয়েব, সাবেক ছাত্রনেতা ও  আমতৈল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সুজিত দাশ, চাঁদনীঘাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আক্তার হোসেন,  জেলা যুবলীগের সদ্য বিলুপ্ত কমিটির যুগ্ম  সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট গৌছ উদ্দিন নিক্সন  জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি নজমুল হক, সাধারণ সম্পাদক মোজাম্মেল রাব্বি, জেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন আহমদ চৌধুরী, জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি আমিরুল হোসেন চৌধুরী,  সাধারণ সম্পাদক মাহবুব আলম প্রমুখ।

এছাড়াও সভায় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ এবং ছাত্রলীগ,কৃষকলীগ, স্বেচ্ছাসবেক লীগ, সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীসহ সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

এ সময় জেলা, উপজেলা ও পৌর আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, কৃষকলীগ, স্বেচ্ছাসবেক লীগ, জেলা মহিলালীগসহ সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।

উল্লেখ” উপমহাদেশের অন্যতম প্রাচীন এবং ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের ৭৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ ২৩ জুন। ১৯৪৯ সালের এই দিনে পুরান ঢাকার কে এস দাস লেনের রোজ গার্ডেনে প্রতিষ্ঠা হয় এ দলটির। প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী এ রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্বেই এদেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয়। রোজ গার্ডেনে জন্মগ্রহণের পর থেকে নানা লড়াই, সংগ্রাম, চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে দলটি এখন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায়।
১৯৪৯ সালের ২৩ ও ২৪ জুন ঢাকার কেএম দাস লেনে অবস্থিত ঐতিহাসিক ‘রোজ গার্ডেন’ প্রাঙ্গণে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর অনুসারী মুসলিম লীগের প্রগতিশীল কর্মীদের নিয়ে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ’ নামে পাকিস্তানের প্রথম বিরোধী দলের আত্মপ্রকাশ ঘটে। সংগঠনটির প্রথম কমিটিতে মওলানা ভাসানী সভাপতি ও শামসুল হক সাধারণ সম্পাদক এবং জেলে থাকা অবস্থায় যুগ্ম-সম্পাদক নির্বাচিত হন শেখ মুজিবুর রহমান।

প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই ধর্মনিরপেক্ষ-অসাম্প্রদায়িক রাজনীতি, বাঙালি জাতীয়তাবাদ, গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি, শোষণমুক্ত সাম্যের সমাজ নির্মাণের আদর্শ এবং একটি উন্নত সমৃদ্ধ আধুনিক, প্রগতিশীল সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থা বিনির্মাণের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক দর্শনের ভিত্তি রচনা করে আওয়ামী লীগ। যার পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৫৫ সালের কাউন্সিলে অসাম্প্রদায়িক নীতি গ্রহণের মাধ্যমে সংগঠনটির নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ’।

আওয়ামী লীগ শুধু এ দেশের প্রাচীন ও সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক সংগঠনই নয়, বাংলাদেশের রাজনীতির মূলধারাও। স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ইতিহাস একসূত্রে গাঁথা। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ভাষা সংগ্রামের পথ ধরে ৬৬ সালে ৬ দফা, ৬৯-এর গণআন্দোলনসহ দীর্ঘ সংগ্রামের পর ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা লাভ করে বাঙালি জাতি। পৃথিবীর মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাসহ বাঙালি জাতির যা কিছু শ্রেষ্ঠ অর্জন, তার মূলে রয়েছে জনগণের এই প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্ব। জন্মলগ্ন থেকে এখনও পর্যন্ত আওয়ামী লীগের শক্তির উৎস জনগণ এবং সংগঠনের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।
আওয়ামী লীগ তার ৭৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী এমন একটি মহতী ক্ষণে উদযাপন করছে, যখন দলটির সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদৃঢ় নেতৃত্বে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সক্ষমতা ও আত্মমর্যাদার অনন্য প্রতীক পদ্মা সেতু উদ্বোধন হতে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগ সরকারের হাতেই বিশ্বকে চ্যালেঞ্জ করে নিজস্ব অর্থায়নে তৈরি এই স্বপ্নের সেতু আগামী ২৫ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করবেন।
৭৩ বছরের পথপরিক্রমায় দেশের বৃহত্তম ও প্রাচীন রাজনৈতিক দলটিকে অনেক চড়াই-উৎরাই পেরুতে হয়েছে। স্বাধীনতার পর ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর অনেকটা অস্তিত্ব সংকটেই পড়ে দলটি। আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করার চতুর্মুখী ষড়যন্ত্র করা হয়। দলের ভেতরেও শুরু হয় ভাঙন। এরমধ্যে আব্দুল মালেক উকিল-জোহরা তাজউদ্দীনের দৃঢ়তায় সংকট কাটিয়ে উঠতে শুরু করে দলটি। ১৯৮১ সালে দলের সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর দেশে ফিরতে সক্ষম হন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর এক দশক ধরে সারা দেশ ঘুরে দলকে সংগঠিত করেন তিনি। স্বৈরাচারবিরোধী তীব্র গণআন্দোলনও হয় তার নেতৃত্বে। ১৯৯৬ সালে তার নেতৃত্বেই ২১ বছর পর সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। ২০০৯ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকার পরিচালনা করছে। বর্তমানে টানা তিন মেয়াদে সরকারে রয়েছে দলটি। ৭৩ বছরের মধ্যে প্রায় ৫০ বছরই আওয়ামী লীগকে থাকতে হয়েছে রাষ্ট্র ক্ষমতার বাইরে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

October 2024
S M T W T F S
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031