এতো অল্পসময়ে প্রায় তিনশো পৃষ্ঠার একটা উপন্যাস লিখে শেষ করতে পারবো, গতমাসের শুরুতেও আমি তা কল্পনা করতে পারিনি। যেখানে আমার দুইখণ্ডে ‘তালপাতার পুথি’ উপন্যাসটা লিখতে সময় লেগেছে প্রায় দশবছর। এখনও তৃতীয় খণ্ড লেখা বাকি। সবকিছু সাজিয়ে রেখেও বাংলাদেশে গিয়ে আমাকে বেশ কিছু ফিল্ডওয়ার্ক করতে হবে তৃতীয় খণ্ড লেখার কাজ আপাতত থামিয়ে রেখেছি।
এরিমধ্যে মাত্র কয়েকমাস আগে ‘ঈশ্বর’ উপন্যাস লেখায় হাত দেই। তিনমাসে উপন্যাসটা লিখে, দেড়মাসে টাইপ করে, মাত্র পনেরো দিনের মধ্যে এডিট করে জানুয়ারির উনত্রিশ তারিখ উপন্যাসটা প্রকাশকের কাছে পাঠাই। পাঁচমাসের মধ্যে একটা উপন্যাস হাতে লিখে, টাইপ করে এবং এডিট করে পাঠানো আমার জন্য চারটিখানি কথা ছিল না। দূরদেশে বসবাস করি। বিদেশবিভূঁই, এখানে গৃহস্থালি কাজ বা অন্যান্য কাজে সহযোগিতা করার মতো লোকজন নেই। সবকাজ নিজেদের করতে হয়। বাজারসদাই, রান্নাবান্না, বাচ্চাদের স্কুলে আনা-নেওয়া, ছেলের ক্রিকেট, মেয়ের নাচের ক্লাস এবং বিভিন্ন সামাজিকতা!… এরিমধ্যে আমরা স্বামী-স্ত্রী করি ফুলটাইম জব। গত কয়েকমাসে এমনও দিন গেছে যে, দিনে দুইঘণ্টা-তিনঘণ্টা ঘুমিয়েছি। মাঝেমধ্যে জলি আমার লেখার টেবিলের কাছে এসে পিঠে হাত রেখে বলতো, “…তুমি কি পাগল হয়ে গেছে, এতো পরিশ্রম করছো?”…
কাজটা পাগলের মতোই করেছি। যখনই লিখতে বসেছি, খাতার পৃষ্ঠা থেকে কলম তুলিনি। মহান কোনো লেখক হবো, বিখ্যাত কোনো মানুষ হবো- এসব চিন্তা আমার মোটেও মাথায় নেই। বউ-ছেলেমেয়ে নিয়ে অনেক ভালো আছি। স্বর্গসুখে আছি। ছোটছোট ভালোলাগাগুলিই আমার ভালোলাগা, ছোটছোট ভালোবাসাগুলোই আমার ভালোবাসা। জীবনটা অতি ছোট!… কিন্তু তারপরও লিখি। যখন লিখতে বসি, তখন মনে হয় আমি যেন একটা স্বর্গীয় উদ্যানে বসে আছি। লেখাটা আমার শখ, ভালোবাসা। একটা লেখা শেষ হলে আমি কিছুক্ষণের জন্য পৃথিবীর একজন রাজা বা বাদশা হয়ে যাই, ব্যস এটুকুই!…
উপন্যাসটা বের হচ্ছে শোভা প্রকাশ থেকে। অমর একুশে বইমেলায় আঠারো নম্বর প্যাভিলিয়ন।
উপন্যাসটার প্রচ্ছদ করেছেন মোস্তাফিজ কারিগর।