১০ই ডিসেম্বর ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ | ২৫শে অগ্রহায়ণ ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৬:৫১ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ২০, ২০২৩
সৌমিত্র দেব
আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ভারতের সমর্থন , জাতীয় রাজনীতিতে বিএনপির ব্যর্থতা এবং অবকাঠামোর অভূতপূর্ব উন্নয়ন মূলত এই তিন কারণে আওয়ামী লীগ এখন অতীতের চেয়ে অনেক বেশী শক্তিশালী ।
সেটা শুধু দেশের প্রেক্ষাপটে নয় , আন্তর্জাতিক ভাবেও । মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অনেক হম্বি তম্বি করে শেষ পর্যন্ত নমনীয় হয়ে এসেছে ।
আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটে সব ধরণের দল আছে । এর মধ্যে বামপন্থী জাসদ , ওয়ার্কার্স পার্টি ও সাম্যবাদী দলের কারণে এই জোট পেয়েছে এক ধরণের প্রগতিশীল চেহারা ।
অন্যদিকে আনুষ্ঠানিকভাবে জামায়াতের সঙ্গে না থাকলেও বিএনপি তার প্রতিক্রিয়াশীল ছায়া থেকে মুক্ত হতে পারে নি। বিএনপির নেতৃত্বে কমিউনিস্ট ব্যাকগ্রাউন্ডের অনেক নেতা থাকলেও তারা বামপন্থীদের জোটে ভেরাতে পারেন নি ।
প্রতিবার নির্বাচনের আগে জাতীয় পার্টিকে নিয়ে বেশ বেগ পেতে হয় । বিশেষ করে চেয়ারম্যান হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ ছিলেন একজন খেলোয়াড় । ২০১৪ সালে তাঁকে অনেক কষ্টে ম্যানেজ করতে হয়েছিল । কিন্তু এ বছর এরশাদের স্ত্রী রওশন এরশাদ , যিনি সংসদে বিরোধী দলের নেত্রী শুরুতেই আওয়ামীলীগের সঙ্গে নির্বাচনী জোট করতে চেয়ে নির্বাচন কমিশনে চিঠি দিয়েছেন ।
তাছাড়া আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতি বরাবরই ভারতের ইতিবাচক দৃষ্টি ছিল।
সেই ১৯৭১ সাল থেকে ।
গত ১৫ বছরে সেটি প্রতিষ্ঠিত সত্য । বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে এ দফায় ভারত প্রকাশ্যে কোন তৎপরতা না দেখালেও কূটনৈতিকভাবে তারা থেমে ছিল না ।
সর্বশেষ দিল্লিতে অনুষ্ঠিত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ‘টু প্লাস টু’ বৈঠকে সেটি প্রকাশ্যে এসেছে।
বৈঠক শেষে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব ভিনয় কোয়াত্রা সাংবাদিকদের বলেন, একটি স্থিতিশীল, শান্তিপূর্ণ ও প্রগতিশীল রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশকে সে দেশের মানুষ যেভাবে দেখতে চায়, সেই ‘ভিশন’কে ভারত কঠোরভাবে সমর্থন করে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের নির্বাচন সেদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় এবং সেদেশের মানুষই তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।
ভারতের এ দৃষ্টিভঙ্গি নির্বাচনের পথে এগিয়ে যাওয়ার জন্য ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে সহায়তা করেছে কিনা- জানতে চাইলে সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির বলেন, ভারতের একটা প্রচ্ছন্ন সমর্থন তো আছেই। এবং এটা খুব স্বাভাবিক।
তিনি বলেন, এই বক্তব্যের মাধ্যমে ভারত পরিষ্কার করে দিয়েছে যে তারা কাদের ‘প্রগ্রেসিভ’ মনে করে। যদিও এটাতে কতটা সারবত্তা আছে সেটা ভিন্ন কথা। এখনকার দৃশ্যমান প্রেক্ষাপটে তারা প্রগ্রেসিভ বলতে লেফট অব দ্য সেন্টার পলিটিক্স যারা করে তাদেরকে বোঝায়। সেটা আওয়ামী লীগ বলেন, জাসদ এবং ওয়ার্কার্স পার্টি বলেন– তাদের যে কম্বিনেশন আছে সেটাকেই তারা ইঙ্গিত করে।
ভারত ফ্যাক্টরের বিষয়টি অস্বীকার করছেন না আওয়ামী লীগ নেতারাও।
বিবিসি বাংলার সূত্রে জানা যায় ,
দলটির তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক এবং নির্বাচনি ইশতেহার প্রণয়ন কমিটির সদস্য সচিব ড. সেলিম মাহমুদ বলেন, ভূরাজনৈতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ শক্ত অবস্থানে আছে। গত ১৫ বছরে বাংলাদেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং সরকারের ধারাবাহিকতা থাকার কারণে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতেও শান্তি বিরাজ করেছে।
তিনি বলেন, ভারত ও বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থ একই সূত্রে গাঁথা। বাংলাদেশের ওপর যে কোনো ধরনের বিদেশি হস্তক্ষেপ ভারতের ওপরও বিদেশি হস্তক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।
ভারতের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি ক্ষমতাসীনদের সহায়তা করেছে বলে উল্লেখ করেন ড. মাহমুদ।
আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা অতীতে বিভিন্ন সময় ইঙ্গিত দিয়েছিলেন ভারত তাদের ‘পাশে আছে’।
নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু না হলে ভিসা নীতি প্রয়োগ করার হুমকি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। মহিউদ্দিন আহমদ বলছেন, এ বিষয়টি খুব বেশি প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি। আমেরিকার ভিসা স্যাংশন নীতি থেকে যে ভীতির আশঙ্কা করা হয়েছিল, সেটা অনেকটাই কেটে গেছে।
২০১৮ সালের নির্বাচনের পরও বিরোধী দলগুলো ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ওপর রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি। ফলে নির্বাচন নিয়ে কোনো সমঝোতার পথে হাঁটার প্রয়োজন অনুভব করেনি সরকার।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদ মনে করেন , বিরোধী দল সরকারের উপর তেমন কোনো রাজনৈতিক চাপ তৈরি করতে পারেনি এবং ২০১৪ সালের তুলনায় সরকার এখন অনেকটা ‘স্বস্তি-দায়ক অবস্থায়’ আছে। সরকার নানাভাবে বিএনপিকে আইসোলেট করতে পেরেছে।
পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, আওয়ামী লীগ গত ১৫ বছর একটানা ক্ষমতায় থাকার ফলে ক্ষমতার কাঠামোর সঙ্গে তাদের একটা ‘গভীর সম্পর্ক’ তৈরি হয়েছে।
মহিউদ্দিন আহমদের মতো একই ধারণা সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবিরের।
হুমায়ুন কবির বলেন, রাজনৈতিকভাবে তারা যে সংগঠিত এটা তো সত্যি কথা। তাদের সাংগঠনিক কাঠামো আছে এবং পাশাপাশি প্রশাসনিক কাঠামো মোটামুটি তাদের পক্ষে।
সে কারণেই আমার ধারণা, তারা এটা মনে করে, অভ্যন্তরীণভাবে রাজনৈতিক আন্দোলন করে তাদেরকে ক্ষমতাচ্যুত করা বা তাদের কাছ থেকে দাবি আদায় করাটা, সেটা এখনকার রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে অন্যদের পক্ষে করাটা কঠিন।
গত তিন সপ্তাহে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি বেশ দ্রুত বদলেছে। এর একটি বড় কারণ হচ্ছে গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় রাজনৈতিক সহিংসতা। সে ঘটনার পর বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের ব্যাপক ধরপাকড় করা হয়েছে। ঢাকায় কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত বিএনপির নেতা-কর্মীরা হয়তো কারাগারে নয়তো পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, বিরোধী দলকে কোণঠাসা করার জন্য ২৮ অক্টোবরের ঘটনা সরকারের হাতে নতুন সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে।
বিএনপি যে নাশকতা করেছে সেটি সারা পৃথিবী দেখেছে। পুলিশ বাহিনীর সদস্যকে পিটিয়ে মেরেছে। প্রধান বিচারপতির বাসায় হামলা হয়েছে, হাসপাতালে হামলা হয়েছে। আমরা এ বিষয়গুলো আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তুলে ধরেছি, বলেন ড. সেলিম মাহমুদ।
২৮ অক্টোবর বিএনপির হাজার হাজার নেতা-কর্মী দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসে ঢাকায় জড়ো হয়েছিল। সংঘাত শুরুর পর পুলিশ যেভাবে তাদের রাস্তা থেকে হটিয়ে দিয়েছে সেটি ক্ষমতাসীনদের মনে বাড়তি আত্মবিশ্বাস জুগিয়েছে বলে অনেকে মনে করেন।
আমার মনে হয়, সরকারের পাতা ফাঁদে বিএনপি পা দিয়েছে। বিএনপি মোমেন্টাম ধরে রাখতে পারেনি। সমাবেশ ভেঙে দেওয়া সরকারকে কনফিডেন্স দিয়েছে, বলছিলেন মহিউদ্দিন আহমদ।
তিনি বলেন, এ ধরনের সিচুয়েশনে অনেকে অনেক কিছু করে। অনেককে দিয়ে অনেক কিছু করানো হয়। বাংলাদেশে এর আগেও সে রকম হয়েছে। কিন্তু পুরো দায়টা পড়েছে বিএনপির ওপর।
এখানে বিরোধী দলও কিছুটা অসুবিধায় আছে। কারণ, নির্বাচন প্রতিহতের ঘোষণা দিলে তারা আমেরিকার ভিসা স্যাংশনের খপ্পরে পড়ে যাবে। সুতরাং এটা তাদের জন্য একটা সংকট। সেজন্য এটাকেও একটা সুবিধা বা অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে সরকার, বলেন আহমদ।
২০০৯ সালে ক্ষমতাসীন হবার পর থেকে আওয়ামী লীগ তাদের উন্নয়ন তত্ত্ব সামনে নিয়ে আসে। গত কয়েক মাস ধরেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একের পর এক মেগা প্রকল্প উদ্বোধন করেছেন। যদিও এর মধ্যে কিছু প্রকল্পের কাজ পুরোপুরি শেষ হয়নি। নির্বাচনকে সামনে রেখেই যে এসব উদ্বোধন করা হয়েছে সেটি অনেকটাই পরিষ্কার।
২০১৪ সালের পর থেকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে হরতাল এবং অবরোধের মতো কর্মসূচি ছিল না। ক্ষমতাসীন দলের নানা ধরনের নীতি ও কর্মকাণ্ড নিয়ে বিস্তর সমালোচনা থাকলেও রাস্তায় সেটির প্রতিফলন দেখা যায়নি।
ড. সেলিম মাহমুদ বলছেন, আওয়ামী লীগ গত এক দশক যাবত দেশে স্থিতিশীলতা তৈরি করতে পেরেছে। ফলে অবকাঠামোর উন্নয়নও হয়েছে।
ভারতের সমর্থন কিংবা বিরোধী দলের দুর্বলতা–এসব কিছুর বাইরেও অবকাঠামোর উন্নয়ন আওয়ামী লীগকে নির্বাচনের দিকে যেতে সহায়তা করেছে।
আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি এ দেশের জনগণ, বলছিলেন মাহমুদ।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরাও মনে করেন, অবকাঠামোগত উন্নয়নের বিষয়টি বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
বিশেষ করে মেট্রো রেল। পদ্মা সেতু, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে , বঙ্গবন্ধু টানেল এ দেশে যোগাযোগ ব্যবস্থায় বিপ্লব নিয়ে এসেছে ।
RED TIMES LIMITED
116-117, Concord Emporium,
Kataban, Dhaka-1205.
Mobile: 017111-66826
Email: redtimesnews@gmail.com