লালমনিরহাটের হাতিবান্ধা উপজেলায় দ্বিগুণ মূল্যে বিক্রি হচ্ছে পটাশ সার। ৭৫০ টাকার এমওপি সার বিক্রি হচ্ছে ১৪০০ টাকায়। কিছু বিসিআইসি-বিএডিসি ডিলার বরাদ্দের সার মজুত রাখায় এ কৃত্রিম সংকট তৈরি হয়েছে। সার না পেয়ে চাষাবাদ বন্ধ অনেক কৃষকের।
হাতিবান্ধা উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে সার ব্যবস্থাপনা নিয়ে নানান অনিয়ম পাওয়া গেছে। উপজেলার ১২ ইউনিয়নের প্রত্যেক এলাকার নিযুক্ত বিসিআইসি ডিলারদের সঙ্গে কৃষকদের নেই কোনো সংযোগ। ইউনিয়নের নামে ডিলার হলেও কৃষক চেনেন না ডিলারকে। ডিলাররা হাতিবান্ধা শহরে মজুত রেখে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে বিক্রি করছেন সার।
ডিলারদের দোকানে দেখা গেছে, ৭৫০ টাকার এমওপি (পটাশ) ভর্তুকির সার বিক্রি করছে ১ হাজার ৪০০ টাকায়। টিএসপি ১ হাজার ১০০ টাকার জায়গায় বিক্রি করছেন ১ হাজার ৫০০ টাকায়। এডিপি সার ৮০০ টাকার স্থলে ১ হাজার ২০০ টাকা ও ইউরিয়া সার ১ হাজার ১০০ টাকার পরিবর্তে ১ হাজার ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অতিরিক্ত মূল্য ছাড়া মিলছে না সার।
হাতিবান্ধা উপজেলার ডাউয়াবাড়ী, সিঙ্গিমারী, সিন্দু না, বড়খাতা, গোতামারী, গড্রিমারী, টংভাঙ্গা, সানিয়াজান ইউনিয়নে একই চিত্র। এসব ইউনিয়নে অতিরিক্ত মূল্য ছাড়া মিলছে না সার। অনেক কৃষক হাস, মুরগি, গরু, ছাগল বিক্রি করে অতিরিক্ত মূল্যে সার ক্রয় করছেন বলে জানা গেছে।
অভিযোগ হাতিবান্ধার কৃষি কর্মকর্তার সঠিক তদারকির অভাবে ডিলাররা নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বাড়াচ্ছে সারের মূল্য। আলু-ভুট্টা মৌসুম শুরুতেই লালমনিরহাটে হাতিবান্ধায় সারের কৃত্রিম সংকট তৈরি করেছেন সার ব্যবসায়ীরা। এমওপি, টিএসপি সার কৃত্রিম সংকটের অজুহাতে অতিরিক্ত মূল্যে বিক্রি হচ্ছে।
কৃষকদের অভিযোগ বিসিআইসি-বিএডিসি ডিলাররাই দায়ী। বাফা গোডাউন থেকে উত্তোলন করলেও পৌঁছায় না ইউনিয়নে। মজুতের খবর কৃষি কর্মকর্তারা সবেই জানেন। সিন্ডিকেটে সঙ্গে কৃষি কর্মকর্তারাও জড়িত। কৃষকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন ডিলাররা। শুধু এমওপি সারই নয় তিস্তা পাড়ে ২৬টি চরাঞ্চলে প্রায় অর্ধলক্ষ কৃষক পাচ্ছেন না টিএসপি সারও।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলায় কৃষি কার্ডধারী কৃষকের সংখ্যা ২ লাখ ৩৪ হাজার ৯৮ জন। তবে কার্ডের বাইরেও কৃষক রয়েছে অনেক। নভেম্বর মাসের জন্য বাড়িয়ে ১ হাজার ১২৭ মেট্রিক টন এমওপি সার বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এমওপি ও টিএসপি সার মজুদ রাখায় চরাঞ্চলের বাজারে এই কৃত্রিম সংকট।
ডাউয়াবাড়ির কৃষক তালেব মিয়া ও সিন্দুরনার কৃষক ফেদৌস আলী জানান, গোডাউন থেকে সার ট্রাক ইউনিয়নে না গিয়ে শহরের গোডাউনে মজুত রাখছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. হামিদুর রহমান জানান, প্রতিটি ডিলারের নিকট উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তার মাধ্যমে সার বিক্রি করা হচ্ছে। কেউ অনিয়ম করলে নেয়া হবে ব্যবস্থা।
জেলা প্রশাসক আবু জাফর জানান, মজুত সার রাখলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। অক্টোরব মাসে মজুত সার উদ্ধার করে মামলা দেয়া হয়েছে। তবে কেউ এ থেকে শিক্ষা না নিলে আরও কঠোর ব্যবস্থাসহ লাইসেন্স বাতিলের ব্যবস্থা নেয়া হবে।