অম্বরীষ দত্ত
শংকর চলে গেল । শংকর মানে কবি ছড়াকার সুরাজ চৌধুরী, এই নামেই লিখতো, মূল নাম ছিল সুবোধ রঞ্জন চৌধুরী। কি এমন বয়েস, মাত্র উনষাট্ আমাদের বছর দুয়েকের ছোট, পড়াশুনাও।
বাইরের শংকর ছিল প্রচণ্ড হাসি খুশী হুল্লোড় প্রিয়। ভিতরের শংকর ছিল প্রচণ্ড অস্থির একরোখা সোজসাপটা জেদী আর ভিন্ন মাত্রার মেধাবী। প্রচুর প্রচুর প্রচুর পড়াশুনা ছিল- নানা বিষয়ে, ইতিহাস ঐতিহ্যে ছিল অগাদ জ্ঞান, ঈর্ষাজাগানিয়া ধারণ ক্ষমতা। সারারাত বুঁদ হয়ে থাকতো বইয়ে, বছরের পর বছর… কিন্তু ঠিক গুছিয়ে পড়া, কাজের পড়া যাকে বলে…… ধার ধারতোনা কখনই। ফলে একধরনের অগোছালো ভাব ধরা পড়তো আলাপচারিতায় কিংবা লেখাজোখায়ও। আর শংকরের প্রতি আমার ব্যক্তি ভালবাসার জায়গাটাও ছিল ওটাই।
কাজের সুত্রে দীর্ঘদিন বাইরে বাইরে থাকায় দেখা সাক্ষাৎ প্রায় ছিলই না, শেষ কবে একসাথে আড্ডা আলাপচারিতায় বসেছিলাম মনেও করতে পারিনা। মাস কয়েক আগেও একটা পারিবারিক অনুষ্ঠানে দেখা হয়েছে বটে, কথা হয়নি। এবারও পারিবারিক অনুষ্ঠানে এসেছিল, দেখা হয়েছে, কথা হলোনা।
হাসপাতালে নেয়া থেকে চিতাগ্নির লেলিহান শিখায় ছাই হয়ে যাওয়া অবধি- শেষ যাত্রার শংকরের সাথে প্রায় কুড়িটা ঘণ্টা কাটিয়ে গত রাতে ঘরে ফিরেছি …… আর খুঁজে ফিরছি , এক জ্ঞানপিপাসু সমাজমনস্ক ঐতিহ্য অনিসন্ধিৎসু প্রাবন্ধিক- গবেষককে, এক আত্মভোলা ক্ষ্যাপা কবিকে, চেনা কবি সুরাজ চৌধুরীর বাইরের মানুষ- আমাদের শংকরকে।
পরপার আর পারাপার … কত সহজেই চলে যাওয়া যায়… কত সহজেই… একটাইতো মাত্র ঘাট…… বৈতরণীর ঘাট।”
সংবাদটি শেয়ার করুন