ঢাকা ১০ই সেপ্টেম্বর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৬শে ভাদ্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৭ই রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি


শিক্ষার্থীদের দেশ সংস্কারের কাজ ও পুলিশের কর্মবিরতি

redtimes.com,bd
প্রকাশিত আগস্ট ১১, ২০২৪, ০২:০৫ অপরাহ্ণ
শিক্ষার্থীদের দেশ সংস্কারের কাজ ও পুলিশের কর্মবিরতি

 

জয়া সূত্রধর

৫ আগস্ট সরকার পতনের পরপরই বাংলাদেশ পুলিশবাহিনী কর্মবিরতির ঘোষণা দেয়। তাদের রয়েছে আটদফা দাবী।এর মধ্যে প্রধান দাবী হলো: তাদের জীবনের নিরাপত্তা বিধান। অপরদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র সমন্বয়কেরা ঘোষণা দিয়েছেন যে, দেশে ছাত্র হত্যার বিচার না হওয়া পর্যন্ত তারা রাজপথ ছাড়বে না। দুটো বিষয় নিয়েই গভীরভাবে ভাববার অবকাশ রয়েছে। পুলিশের কর্মবিরতি ও তার অবসানের ব্যাপারে রাষ্ট্রীয় পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। অপরদিকে ছাত্রদের আন্দোলনের স্বীকৃতিস্বরূপ দুজন ছাত্র সমন্বয়ককে অন্তবর্তীকালীন সরকারে উপদেষ্টা হিসেবে দুইটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে।প্রথমবারের মতো রাষ্ট্রক্ষমতার শীর্ষপদে শিক্ষার্থীদের অন্তর্ভূক্তিকরণে রাষ্ট্রীয় কাঠামোর ইতিবাচক পরিবর্তনে আশাবাদী দেশবাসী। একটি গণতান্ত্রিক নির্বাচন আয়োজনের জন্য এই সরকার গঠনের পরও শিক্ষার্থীদের বহুমুখী ভূমিকা দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে সকলের। বিশ্ববিদ্যালয়,ক্যাডেট কলেজ, কলেজসমূহ এমনকি স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের একটি বিরাট অংশ রাত দিন পথে কাজ করছে। একাংশ ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করছে, অন্য একটি অংশ আওয়ামীলীগের স্বৈরশাসনের পতন আর বিজয়ের নানা ছবি, উদ্বুদ্ধকরণ বাণী,শ্লোগান লিখে দিন পার করে দিচ্ছে। কোন কোন দল নেমেছে বাজার নিয়ন্ত্রণে। দেশে এখন পূর্বের মতো অস্থিশীলতা নেই।বেশ সিস্টেম মেনে চলছে সবকিছু। জনমনে অস্থিরতা কাটিয়ে স্বস্তি ও শান্তির ভাব। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মহলে প্রশংসিত হচ্ছে আমার দেশের তরুণ দল। আপামর জনতা তাদের নেতৃত্বে গর্বিত। আন্দোলনে থেমে যাওয়া পুলিশ বা ট্রাফিকের কাজ ও দায়িত্ব পালন নিয়ে আমজনতার কোন আগ্রহ নেই। এমনকি মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা তাদের হাতে দেশ নিরাপদ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। কিন্তু আমার পর্যবেক্ষণ বেশ উদ্বেগের। অনেকগুলো প্রশ্ন আমার মতো অতি সাধারণ নাগরিকের উৎকন্ঠাকে চরম সীমায় পৌঁছে দিয়েছে হয়ত। না হলে আমার হাতের কলম নুইয়ে পড়ে ভাবনাকে আশ্রয় করতো না আজ। আমরা কী ভেবেছি, শিক্ষার্থীরা শ্রাবণ মাসের প্রখর রোদ, তুমুল বৃষ্টি মাথায় নিয়ে রাজপথে দেশ সংস্কারের কাজ করে যাচ্ছে এ লজ্জা কার? শত শত ছাত্র রোদ বৃষ্টিতে উন্মুক্ত জায়গায় দাঁড়িয়ে খালি মাথায় যানবাহন চলাচলের দিকনির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছে ও ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করছে। এই রোদ- বৃষ্টি, ধূলাবালিময় পরিবেশে এভাবে দিনরাত পড়ে থাকার মতো এমন কঠিন অভিজ্ঞতা অর্জন কী খুব প্রয়োজন ? অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, এটি যুদ্ধে বিধ্বস্ত হয়ে যাওয়া দেশ যেখানে শুধু যুবকেরাই বেঁচে আছে।মনে হচ্ছে যে, আমরা এক রণক্লান্ত জাতি যারা যুদ্ধের ময়দান থেকে বিজয় ছিনিয়ে এনে দরজায় খিল এঁটে নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছি আমাদের সন্তানেরা জেগে থেকে দেশকে বাসযোগ্য করে তুলছে! কেন আমাদের সর্বস্তরে জাগরণ নেই? আমরা ভুলতে বসেছি, আন্দোলনের পুরো সময় শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া বিঘ্নিত হয়েছে। সরকার পতনের পর থেকে এখন পর্যন্ত তাদের লেখাপড়া বন্ধই আছে।যেহেতু মাধ্যমিক স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় এখনো বন্ধ আছে। প্রশাসনিক কার্যক্রম শুরুর দিন থেকেই রাষ্টের সব কাজ সুষ্ঠুভাবে চলতে শুরু করেছে। তবে কেন বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ খুলে দেয়া হচ্ছে না।তারা নিজ নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিরাপদ নয় অথচ রাজপথে নিরাপদ এটি কোন যৌক্তিক বিচারেই স্বাভাবিক নয়। কেন তাদের হাতে বই কলমের পরিবর্তে ট্রাফিকের লাঠি উঠে এলো? তাদেরকে কেন দেশের কান্ডারি হতে হচ্ছে? দেশ তো নেতৃত্ব সংকট কাটিয়ে উঠেছে। রাষ্ট্রনায়কদের এখন কী শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যত নিয়ে ভাবা উচিত নয়? দেশ সংস্কারের কাজে শিক্ষার্থীদের নকশা বা পরিকল্পনা কাজে লাগিয়ে রাষ্ট্র সুস্থধারার রাজনীতি দ্বারা চলুক তা নিয়ে কেউ দ্বিধা করবে না। তাই বলে তাদেরকে কেন মাঠে,রাস্তায়,বাজারে কাজ করতে হবে? ছাত্র হত্যার বিচারিক কাজ করতে যথেষ্ট সময় ও ধৈর্য রাখতে হবে। বিচারিক কাজের অনির্দিষ্টকাল তারা রাজপথে থাকলে তাদের লেখাপড়ার কী হবে? এই শঙ্কা রাষ্ট্রনায়ক তথা আপামর সুশীল সমাজের কাছে প্রত্যাশা করি আমরা সাধারণেরা। শিক্ষায় মনোনিবেশ করেও এ বিচার তারা কার্যকর করতে পারে। এক্ষেত্রে অভিভাবক,শিক্ষকদের ভূমিকা সবার উর্ধ্বে। রাষ্ট্রযন্ত্রে অসহনশীলতা ফিরে আসুক তা কারো কাম্য নয়। তবে সনাতনীদের সংখ্যালঘু হিসেবে আখ্যায়িত করে তাদের সাথে অনাগরিকসুলভ আচরণে ছাত্রসমাজ দীর্ঘদিন নিশ্চুপ থাকবে না।ছাত্রদের কাছে কোন বৈষম্য ধোপে টেকেনি, টিকবেও না। এ সরকার পতনের প্রথম দিকের শহীদ দিপ্ত দে (মাদারীপুর, ১৮ জুলাই) একজন সনাতনী। কাজেই রাষ্ট্র একপেশে হয়ে গেলেও শিক্ষার্থীরা জাতিগত বিভাজন কখনোই মেনে নিবে না।

তরুণেরাই ভবিষ্যতে দেশের হাল ধরবে কিন্তু তার আগে তাদেরকে সুশিক্ষায়, আচরণে, রাষ্ট্রনীতিতে উপযুক্ত করে গড়ে তুলতে হবে। তাদের জ্ঞান,তাদের প্রজ্ঞা, তাদের মেধা বিকশিত হলে তবেই চিন্তা চেতনায়, সিদ্ধান্তে পরিপক্কতা আসবে। এই বিষয়গুলো কেন উপেক্ষিত হচ্ছে আমি জানিনা তবে এর সমাধান অচিরেই করতে হবে।নয়তো এই ছাত্ররাই ভবিষ্যতে নিজেদের অতীতে ঘুরে দাঁড়াবে তখন তাদের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করার খেসারত রাষ্ট্রকেই দিতে হবে।

শিক্ষক ও লেখক

সংবাদটি শেয়ার করুন

September 2024
S M T W T F S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
2930