২৯শে মে ২০২২ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই জ্যৈষ্ঠ ১৪২৯ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১০:০০ পূর্বাহ্ণ, ডিসেম্বর ২২, ২০১৫
বিশাল এ পৃথিবীতে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের বিপুল অনুগ্রহভাণ্ডার কেবল মানুষের কল্যাণের জন্য। কিন্তু অকৃতজ্ঞ মানুষের অপকর্মে প্রকৃতিতে নেমে আসে বহুমুখী বিপর্যয়। পবিত্র কোরআনের ভাষায়, ‘ভূমিতে ও পানিতে সব জায়গায়, লোকজন কুকাজে অশান্তি ছড়ায়। যেরূপ কাজ ওরা করতে থাকে, আল্লাহ চান তার শাস্তি দিতে…।’ (কাব্যানুবাদ, সুরা রুম : ৪১) এভাবেই মানুষের অবাধ্যতা ও পাপের কারণে মহান আল্লাহ মানুষকে শাস্তি দেন। মারাত্মক প্রাকৃতিক বৈরিতা নিয়ে বর্তমানে দেখা দিয়েছে প্রবল শৈত্যপ্রবাহ।
পাপাচার, কামাচার, অত্যাচারে মানুষ নিজের প্রতি অতিমাত্রায় নির্ভরশীল হলেই আল্লাহ দেখিয়ে দেন তাঁর সামর্থ্যের প্রমাণ। তখন স্বাভাবিক পরিবেশের ছন্দপতনে থমকে দাঁড়ায় সবার প্রাত্যহিক জীবনযাত্রা। চলমান শৈত্যপ্রবাহ এমনই এক মহাপরীক্ষা। পৃথিবীর আহ্নিক গতির কারণে দিন-রাত ও বার্ষিক গতির প্রভাবে ঘটে ঋতুচক্রের পরিবর্তন। এর সবই কিন্তু হয় মহান আল্লাহর নির্দেশে : ‘তিনিই রাতকে দিনে এবং দিনকে রাতে পরিবর্তন করেন, তিনি সূর্য ও চাঁদকে নিয়ন্ত্রণ করছেন; প্রত্যেকেই এক নির্দিষ্টকাল আবর্তন করে…।’ (সুরা ফাতির : ১৩) বিজ্ঞানীরা বলে থাকেন, পৃথিবী সূর্যের চারদিকে এক নির্দিষ্ট দূরত্বে ঘুরছে অনবরত। যদি পৃথিবী ও সূর্যের কেন্দ্র সমান দূরত্বে ঘুরতে থাকে, তবে পৃথিবীর যে তলদেশটি বেশি চওড়া, সেটি সূর্যের খুব কাছাকাছি চলে যায়। আবার যে তলদেশটি কমলালেবুর মতো চাপা, সেটির দূরত্ব সূর্য থেকে অনেক দূরে চলে যায়। ফলে পৃথিবীর যে গোলার্ধ সূর্যের খুব কাছাকাছি থাকে, সেখানে তাপ বেশি অনুভূত হয়। অন্যদিকে যে এলাকাটি সূর্য থেকে সবচেয়ে দূরে থাকে, সেখানে চলে শীতকাল। এ জন্যই দেশে দেশে শীতকাল গণনার ক্ষেত্রে কিছুটা সময়গত পার্থক্য দেখা যায়।
কোনো কোনো সময় ব্রিটেনসহ পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধের আমেরিকা, কানাডায় ডিসেম্বরের ২১-২২ তারিখ থেকে শীত শুরু হয়ে তা অব্যাহত থাকে মার্চের ১৯, ২০ ও ২১ পর্যন্ত। যুক্তরাজ্যের আবহাওয়াবিদরা সে দেশের ডিসেম্বর-ফেব্রুয়ারি তিন মাসকে বলেন শীতকাল। স্ক্যান্ডেনেভিয়ায় শীত শুরু হয় অক্টোবরের ১৪ এবং শেষ হয় ফেব্রুয়ারির শেষে। দক্ষিণ গোলার্ধের অনেক দেশে বিশেষত অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকায় শীত শুরু হয় জুনে। শেষ হয় আগস্ট মাসের শেষে। আয়ারল্যান্ড ও স্ক্যান্ডেনেভিয়ায় শীত শুরু হয় নভেম্বরে। চীন ও পূর্ব এশিয়ার দেশে শীতকাল গণনা শুরু হয় নভেম্বর থেকে।
ষড়ঋতুর দেশ বাংলাদেশে বছর ঘুরে আসে শীত-শৈত্যপ্রবাহ। পৌষ-মাঘ দুই মাস শীতকাল। হাড় কাঁপানো শীতে নাকাল দরিদ্র ও ছিন্নমূল মানুষ। বাড়ছে দিন-রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য। দিনের বেলা সূর্যের মুখ প্রায়ই দেখা যায় না। সঙ্গে কমে যাচ্ছে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার ব্যবধানও। প্রাকৃতিক পরিবর্তন ও এর বিরূপ প্রভাব মহান আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ বহন করে। এর মধ্যে মহান আল্লাহর আনুগত্যের আহ্বান ধ্বনিত হয় : ‘যেহেতু আসক্তি আছে কুরাইশদের/গ্রীষ্ম ও শীতকালে দূরে সফরের/তারা করুক তবে তাঁর ইবাদত/কাবার প্রভুর দেওয়া নির্ধারিত পথ…।’ (কাব্যানুবাদ, সুরা কুরাইশ : ০১-০৩) এ শাশ্বত ঘোষণায় বোঝা যায়, শীত-গ্রীষ্ম মহান আল্লাহর হুকুমেই আসে। সব অবস্থায় তাঁরই ইবাদত করা বান্দার কর্তব্য।
আবহাওয়ার পরিবর্তন ও ঋতু পরিক্রমায় শীত জনজীবনে বিরূপ প্রভাব বিস্তার করে। যা বড়ই কষ্টকর ‘উত্তরিয়া শীতে পরান কাঁপে থরথরি/ছিঁড়া বসন দিয়া মায় অঙ্গ রাখে মুড়ি।’ (ময়মনসিংহ গীতিকা : ‘মলুয়া’)
একটি দীর্ঘ হাদিসের বর্ণনায় জানা যায়, ‘দোজখ যখন শ্বাস ছাড়ে তখন পৃথিবী উষ্ণ-উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। আবার যখন প্রশ্বাস নেয় প্রবল শীতে আচ্ছন্ন হয় শান্তির পৃথিবী।’ বাংলাদেশে শীত আসে কষ্টের বার্তা নিয়ে। আমাদের লোকভাবনার উচ্চারণ : ‘পৌষ গেল মাঘ আইল শীতে কাঁপে বুক/দুঃখীর না পোহায় রাতি হইল বড় দুঃখ।’ (মৈমনসিংহ গীতিকা : ‘কমলা’) ১৯৬৮ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের শ্রীমঙ্গলে তাপমাত্রা নেমে যায় ২.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে, যা আমাদের দেশে এযাবত্কালের সবচেয়ে বেশি শীতের রেকর্ড।
শীতার্তসহ বিপন্ন সব মানুষের পাশে দাঁড়ানো ইসলামের আদর্শ। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তারা আল্লাহর প্রেমে উজ্জীবিত হয়ে দরিদ্র, এতিম ও বন্দিদের খাদ্য দান করে।’ (সুরা দাহার : ০৮) আর্তমানবতার সেবার উত্সাহ দিয়ে প্রিয় নবী (সা.) বলেন, ‘মানুষের মধ্যে সেই উত্তম, যার দ্বারা মানবতার কল্যাণ সাধিত হয়।’ বিপন্ন মানবতার কল্যাণ বিশ্বনবী, মানবতার কাণ্ডারি, প্রিয় নবী (সা.)-এর আদর্শ। আর মানবকল্যাণের মাধ্যমে জান্নাতি সুখ লাভ করা যায়। এ জন্যই মহানবী (সা.) বলেন, ‘যেকোনো মুসলমান অন্য মুসলমানকে বস্ত্র দান করলে আল্লাহ তাকে জান্নাতে সবুজ বর্ণের পোশাক পরাবেন…খাদ্য দান করলে তাকে জান্নাতের ফল খাওয়াবেন…।’ (আবু দাউদ)
পরিশেষে বলব, দেশের শীতার্ত বিপন্ন সব মানুষের পাশে দাঁড়ানোই এ মুহূর্তে সব সচ্ছল মানুষের একান্ত কর্তব্য এবং ইবাদততুল্য কর্ম। সামান্য কিছু শীতবস্ত্র, একটি কম্বল, কিছু গরম খাবার অথবা প্রয়োজনীয় ওষুধ অসংখ্য বনি আদমের জন্য হতে পারে জীবন রক্ষার উপায়।
Editor in Chief
Contact: 017111-66826
National Desk In-charge
Sumon Suddha
Contact: 01710010218
RED TIMES LIMITED
116-117, Concord Emporium,
Kataban, Dhaka-1205.
Mobile: 017111-66826
Email: redtimesnews@gmail.com