২২শে সেপ্টেম্বর ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই আশ্বিন ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১২:৪৮ অপরাহ্ণ, মার্চ ৮, ২০১৮
তামান্না জেসমিন
বিশ্ব ভালবাসা দিবস, মা দিবস, বাবা দিবস, বন্ধু দিবস – এই অনুভূতিময় স্পর্শকাতর সম্পর্ক নিয়ে নির্দিষ্ট ভাবে “দিবস ” উদযাপনের ব্যাপারে যেমন আমার ঘোর বিরোধিতা রয়েছে তেমনি ‘নারী দিবস ” এর প্রতি আছে সমর্থন । কারন নারী পুরুষ পরস্পর পরস্পরের পরিপূরক হলেও সেই আদিম যুগ থেকেই নারীর প্রতি বিরূপ মনোভাব আর বৈষম্যের প্রভাব থেকে নারী এখনো মুক্ত নয়। তাদের উপর নির্দিষ্ট ভাবে চাপানো দায়িত্বগুলো তারা পালন করে যেতে যেতে সেই বৃত্তের মাঝেই নারী আটকাদশায় অভ্যাস্ত হয়ে পড়েছে। ঠিক যেমন আকাশে ওড়া পাখি খাঁচায় বন্দি থাকতে থাকতে একদিন খাঁচাটি খুলে দিলেও পাখিটি আর খাচা ছেড়ে আকাশ পানে উড়ে যায়না …
সেই প্রাচীন কাল থেকেই নারীকে একদম আলাদা এক প্রাণী হিসেবে গন্য করা হয়েছে, তারা অসূর্যম্পশ্যা ! ভোগ্যপণ্য, ভোগ্যপ্রাণী, তৃপ্ত এবং তুষ্ট করাই যার আসল কাজ! এমন কি অন্ধকার যুগে অতি ক্ষমতাধর রাজরাজড়া সমাজপতি, ধর্মীয় ভাবে পাপ মুক্তির দায় থেকে নারী এবং নারী শিশুকে বলি দেওয়া হতো সানন্দে। পোশাকে আপাদমস্তক মুড়িয়ে নারীকে অন্ধকারে রাখা হয়েছে ধর্মের আভরনে। অন্তরালে থেকে সাংসারিক কাজকর্ম , যৌনতৃপ্তি , শিশু জন্মদান , পরিবারের সকলের পরিচর্যা ইত্যাদির বিনিময়ে নারী পেয়েছে অনিশ্চিত খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান । কিন্তু তাকে এর বাইরেও ক্ষমতা ও অধিকার থেকে বঞ্চিত রাখা হয়েছে। আবার এও দেখা যায় , দুজন সমান ভাবে অর্থ আয় করে অথচ বাড়িতে অনেক বেশি শ্রম দিতে হয় নারীকে। পুরুষ একঘেয়েমি থেকে মুক্তির আনন্দে একাধিক নারীর সংগ উপভোগ করলে সেটা হয় জাস্ট সময় কাটানো অথবা সামাজিক বন্ধুত্ব কিন্তু নারীর ক্ষেত্রে এমন হলে সবার দৃষ্টিতে সে হয় ভ্রষ্টা , পরকিয়ায় আসক্ত।
কয়েক যুগ ধরে নারী অধিকারের কথা নিয়ে চিৎকার চেচামেচি করা হলেও এতে খুব একটা লাভ হয়নি। আসলে অধিকার তো কেউ কাউকে দেবার জন্য বসে নেই। সেটা অর্জন করে নিতে হয় আর অর্জন করবার জন্য সেরকম পরিবেশ পরিস্থিতি তো সবার আগে প্রয়োজন, কিন্তু তারজন্য প্রথমে একটি দেশের শিক্ষা ব্যাবস্থার উন্নতি না হলে তো জলে যাবে নারীর সকল প্রচেষ্টা – যেমন নারী আন্দোলন, সমান সমান অধিকার। সম অধিকার এই দেশে কি আদৌ সম্ভব? যে দেশে একজন মেয়ে গভীর রাতে রাস্তায় একা হেটে তার গন্তব্যে পৌছুতে সাহস করেনা, শিশু কন্যা কে স্কুলে আনা নেওয়া থেকে শুরু করে তাকে চোখের আড়াল করা যায়না, নারীশিশু প্রাপ্ত বয়সে পা দেবার পর ও তাকে নিয়ে দুশ্চিন্তার সীমা থাকেনা, কখন জানি কি হয় – এমন আশংকায় কাটাতে হয় পরিবার কে। সমান সমান অধিকারের কথা এলে আমার মনে কেবল প্রশ্ন ভীর করে, বাসের সিট কেনো মেয়েদের জন্য আলাদা ভাবে সংরক্ষিত থাকে, কেনো তামাশার ছলে বলা হয় ” লেডিস ফার্স্ট “? কর্ম ক্ষেত্রে কেনো ইকুয়্যালিটি র অভাব দেখা যায়? সম পরিশ্রম করেও নারীর পারিশ্রমিক কেনো অপেক্ষাকৃত কম? রাতের শিফটে কাজ করে বাড়ি পৌছনোর বিড়ম্বনা । এরপর বাড়ি গিয়ে ও কেনো শুনতে হয় তার চরিত্র নিয়ে কথা?
আজ তো নারী দিবস। অন্যান্য দিবস পালনে দুখ বা আনন্দের উত্তেজনা না থাকলেও এই নারী দিবস কে ঘিরে থাকে আমার অনেক প্রশ্ন, অনেক দুখ, অনেক আবেগঘন বেদনা। মনে হয় যেন এই দিনে নারী কে বিশ্বব্যাপী সকলে মিলে আরেকদফা উপহাস করলো! আজকের ডেইলি পেপার গুলো খুলে দেখুন সেখানে নারী নির্যাতন, নিষ্ঠুর ভাবে অত্যাচার, নারী ও শিশু ধর্ষনের অনেক খবর পেয়ে যাবেন।
তবুও আজ এই একটি দিনের জন্য হলেও আসুন নারীর প্রতি করুণা নয় সহানুভূতিশীল হই, লোভাতুর চোখ সরিয়ে ভালোবাসি, শুধু নারী ই নয় , তাকে মানুষ ভাবি …
RED TIMES LIMITED
116-117, Concord Emporium,
Kataban, Dhaka-1205.
Mobile: 017111-66826
Email: redtimesnews@gmail.com