রেডটাইমস নিউজ ডেস্ক মৌলভীবাজার:
‘চা দিবসের সংকল্প, শ্রমিকবান্ধব চা শিল্প’ প্রতিপাদ্য নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলাদেশ চা বোর্ড এর উদ্যোগে আজ রবিবার (৪ঠা জুন) বর্ণাঢ্য আয়োজনে তৃতীয়বারের মত “জাতীয় চা দিবস’ উদযাপন এবং প্রথমবারের মত ‘জাতীয় চা পুরস্কার ২০২৩” প্রদান করা হয়। দেশের চা শিল্পের জন্য দিবসটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
‘জাতীয় চা পুরস্কার ২০২৩’ আটটি ক্যাটাগরিতে আট ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানকে এ পুরস্কার দেওয়া হয়। বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি এমপি বিজয়ীদের হাতে পুরস্কারের ট্রফি ও সদন তুলে দেন।
এ বছর পুরস্কার পেলেব- একর প্রতি সর্বোচ্চ উৎপাদনকারী চা বাগান ‘ভাড়াউড়া চা বাগান’, সর্বোচ্চ গুণগত মানসম্পন্ন চা উৎপাদনকারী বাগান ‘মধুপুর চা বাগান’, শ্রেষ্ঠ চা রপ্তানিকারক ‘আবুল খায়ের কনজ্যুমার প্রোডাক্টস লিমিটেড’, শ্রেষ্ঠ ক্ষুদ্রায়তন চা উৎপাদনকারী মো. আনোয়ার সাদাত সম্রাট (পঞ্চগড়), শ্রমিক কল্যাণের ভিত্তিতে শ্রেষ্ঠ চা বাগান ‘জেরিন চা বাগান’, বৈচিত্র্যময় চা পণ্য বাজারজাতকরণের ভিত্তিতে শ্রেষ্ঠ কোম্পানি ‘কাজী অ্যান্ড কাজী টি এস্টেট লিমিটেড, দৃষ্টিনন্দন ও মানসম্পন্ন চা মোড়কের ভিত্তিতে শ্রেষ্ঠ চা কোম্পানি ‘গ্রিন ফিল্ড টি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, শ্রেষ্ঠ চা পাতা চয়নকারী (চা শ্রমিক) উপলক্ষী ত্রিপুরা, নেপচুন চা বাগান।
চা শিল্পের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশীজন-চা শ্রমিকদের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণের বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে চায়ের রাজধানী বলে পরিচিত মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে বিটিআরআই হাইস্কুল মাঠে জাতীয় চা দিবসের অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ এর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন টিপু মুনশি এমপি,মন্ত্রী, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন এই অনুষ্ঠানটি এখানে হওয়ার কথা ছিল না বরাবরের মত ঢাকাতে হওয়ার কথা ছিলো, যেহেতু আমাদের চায়ের কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে শ্রীমঙ্গল এজন্য এবার সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে শ্রীমঙ্গল করা যায় কিনা, এটি একটি ব্যতিক্রমী কেননা এই ধরনের জাতীয় দিবস ঢাকায় উদযাপন হয়।
বাণিজ্য মন্ত্রী বলেন, শ্রীমঙ্গলকে হাইলেট করার জন্য আলোকিত করার জন্য আমরা এখানে নিয়ে এসেছি যেখানে বাংলাদেশের চায়ের প্রাণকেন্দ্র বলা চলে শ্রীমঙ্গলকে, যখন অনুষ্ঠান নিয়ে আলোচনা হয়েছিলো তখন আমি বলেছিলাম আমাদেন এই অনুষ্ঠানে যেন চা শ্রমিকরা থাকে, কেননা তাদের ঘামে, তাদের কষ্টের কারনে আজ চা উৎপাদন হচ্ছে প্রায় ১ লক্ষ মিলিয়ন কেজি।
তিনি বলেন, সব শেষে একটা কথা বলতে চাই মনে রাখতে হবে, চা বোর্ডের প্রথম চেয়ারম্যান আমাদের বাঙ্গলী আমাদের প্রিয় জাতির নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
এ সময় মন্ত্রী আরও বলেন, দেশের চা শিল্পে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ৮টি ক্যাটাগরিতে বিভিন্ন চা কোম্পানি ও ব্যক্তিকে ‘জাতীয় চা পুরস্কার ২০২৩ প্রদান করা হয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ চা বোর্ডের যৌথ উদ্যোগে এ বছর প্রথমবারের মত ‘জাতীয় চা পুরস্কার’ প্রদান করা হয়।
বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বীর মুক্তিযোদ্ধা উপাধ্যক্ষ ড. মোঃ আব্দুস শহীদ এমপি, সভাপতি অনুমিত হিসাব সম্পর্কিত কমিটি ও সাবেক চিফ হুইপ বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ।
অনুষ্টানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন মোঃ জসিম উদ্দিন সভাপতি এফবিসিসিআই, শাহ মঈনুদ্দিন হাসান সভাপতি টি ট্রেডার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ, কামরান টি রহমান সভাপতি বাংলাদেশীয় চা সংসদ, স্বাগত বক্ত্যব রাখেন মেজর জেনারেল মোঃ আশরাফুল ইসলাম, এনডিসি, পিএসসি চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ চা বোর্ড।
দিবস উপলক্ষ্যে দিনব্যাপী চা মেলার আয়োজন করা হয়েছে। চা মেলাতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের চা প্রদর্শন ও বিক্রি করা হয়। দর্শনার্থীদের জন্য দিনব্যাপী চা মেলা উন্মুক্ত থাকবে। এছাড়াও বঙ্গবন্ধু প্যভেলিয়ন এবং শ্রীমঙ্গস্থ টি মিউজিয়ামে রক্ষিত চা শিল্পের দুর্লভ জিনিসপত্র প্রদর্শনের ব্যবস্থা থাকবে।
উল্লেখ্য যে, দেশের অত্যন্ত জনপ্রিয় পানীয় চা। সিলেটের মালনিছড়া চা বাগানে ১৮৫৪ সালে প্রথম বাণিজ্যিকভাবে চা চাষ শুরু করা হয়। ধীরে ধীরে এ অঞ্চলের অন্যতম সম্ভাবনাময় শিল্প হিসেবে চা শিল্প বিকশিত হতে থাকে। ঊনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝিতে ব্রিটিশ শাসনাধীন উপমহাদেশের এ অঞ্চলে চা শিল্পের অগ্রগতি মূলত ব্রিটিশদের মাধ্যমেই হয়েছে।
জাতীর পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৪ জুন ১৯৫৭ সাল থেকে ২৩ অক্টোবর ১৯৫৮ সাল পর্যন্ত চা বোর্ডের প্রথম বাঙালি চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। চা শিল্পে জাতির পিতার অসামান্য অবদান ও চা বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে তার যোগদানের তারিখকে স্মরণীয় করে রাখতে গত ২০ জুলাই ২০২০ সালে মন্ত্রিসভার বৈঠকে ৪ জুনকে “জাতীয় চা দিবস” ঘোষণা করা হয়েছে। এ বছর তৃতীয়বারের মত যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি উদযাপন করা হয়। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে জাতীয় চা দিবসের অনুষ্ঠান সমাপ্তি হয়।
সংবাদটি শেয়ার করুন