সৌমিত্র দেব
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বুকে লালন করে বাংলাদেশের হিন্দু ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের জন্য নিরবে কাজ করে যাচ্ছেন আরমা দত্ত । বেশীর ভাগ মানুষের কাছে তিনি এরোমা দত্ত নামেই পরিচিত ।
জাতীয় সংসদ সদস্য আরমা দত্ত একজন মুক্তিযোদ্ধা, মানবধিকার কর্মী এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের একজন রাজনীতিবিদ। তিনি একাদশ জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসন-১১ থেকে নির্বাচিত জাতীয় সংসদ সদস্য। সমাজসেবী ও নারীনেত্রী হিসেবে তিনি ২০১৬ সালে নারী উন্নয়ন ও নারীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বিশেষ অবদান রাখায় রোকেয়া পদক পেয়েছেন।
২০১২ সালে আরমা দত্ত হিন্দু বিবাহ নিবন্ধন আইনের খসড়া অনুযায়ী হিন্দু বিবাহের নিবন্ধনকে ঐচ্ছিক করার সমালোচনা করেন এবং এটিকে বাধ্যতামূলক করার দাবি জানান। তিনি বাংলাদেশে সংখ্য্যালঘুদের উপর হামলার প্রতিবাদ করে যাচ্ছেন এবং কক্সবাজারে বৌদ্ধদের উপর হামলাকারীদের শাস্তির দাবি করেছেন। তিনি অর্পিত সম্পত্তি আইনের বিরুদ্ধে কথা বলছেন।
অর্পিত সম্পত্তি ও হিন্দু সম্প্রদায় নিয়ে ডক্টর আবুল বারাকাতের গবেষণাকে সহায়তা দিয়েছেন আরমা দত্ত ।
তিনি দেশে আইনের সুষ্ঠু বাস্তবায়নই সংখ্য্যালঘুদের রক্ষা করার একমাত্র উপায় হিসেবে মন্তব্য করেন। ২০১৮ সালে নির্বাচনকালে অরক্ষিত নির্বাচনী এলাকায় নিরাপত্তা বাহিনী নিয়োগের জন্য আহবান করেন। এক গোলটেবিল আলোচনার সময় তিনি নিম্নশ্রেণীর হিন্দু এবং প্রান্তিক সম্প্রদায়কে সামাজিক সুরক্ষা দিতে সরকারে কাছে আবেদন জানান।
আরমা দত্ত ২০ জুলাই ১৯৫০ সালে কুমিল্লা নগরীর শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ সড়কে তার পৈত্রিক বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা সঞ্জীব দত্ত ‘পাকিস্তান অবজারভার’ পত্রিকার সাংবাদিক ছিলেন। মা প্রতীতি দেবী হলেন চিত্রপরিচালক ঋত্তিক ঘটকের যমজ বোন। ভারতের প্রখ্যাত কথাশিল্পী মহাশ্বেতা দেবী তাঁর মাসী। আরমা দত্তের দাদু ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত আর একমাত্র ছোট কাকা দীলিপ দত্ত দুজনেই ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে শহিদী মৃত্যুবরণ করেন ।
তিনি বিয়ে করেন সমীর গুণকে। এই জীবনসঙ্গীকেও ত্যাগ করে চলে আসতে হয় তাকে। ঘর ভাঙলেও ঘরের মায়া ছাড়তে পারেননি আরমা। ঘরে আছেন মা প্রতীতি দেবী, মানসিক প্রতিবন্ধী ছোট ভাই রাহুল দত্ত ও কন্যা এষা অরোরা।
আরমা দত্ত কুমিল্লা শহরের একটি আমেরিকান কনভেন্ট স্কুলে তিন বছর বয়সে লেখাপড়ার শুরু করেন। তিনি বাংলা মাধ্যমে কিছুদিন ঢাকার ভিকারুননিসা নূন স্কুলে লেখাপড়া করেন। তিনি ১৯৬৬ সালে মাধ্যমিক পাস করেন নবাব ফয়জুন্নেসা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে। কুমিল্লা মহিলা কলেজ থেকে ১৯৬৮ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজ বিজ্ঞান বিভাগে অনার্সে ভর্তি হয়ে ১৯৭৪ সালে স্নাতকোত্তর পাস করেন।[৬][৯]
আরমা দত্ত কর্মজীবন শুরু করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে। ১৯৭৫ সালে স্বামীর সাথে কানাডা প্রবাসী হন। ফেব্রুয়ারি ১৯৮০ সালে তিনি আবার বাংলাদেশে ফিরে ইউএসএআইডিতে প্রোগ্রাম স্পেশালিস্ট হিসেবে যোগ দেন। ১৯৮৩ থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত নরওয়েজিয়ান এইড নোরাডে ছিলেন। তিনি ১৯৮৯ সালে প্রিপ ট্রাস্টে যোগ দিয়ে বর্তমানে তিনি প্রিপ ট্রাস্টের নির্বাহী পরিচালক হিসেবে আছেন।
আরমা দত্ত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজনীতিবিদ। তিনি একাদশ জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসন-১১ থেকে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ সালে তাকে শপথবাক্য পাঠ করান।
তিনি নারী জাগরণে অবদানের কারণে ২০১৬ সালে তিনি বেগম রোকেয়া পদক লাভ করেন। ১৩ মে, ২০১৭ সালে তিনি তার পিতার পক্ষে কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট কর্তৃক দানবীর রনদা প্রসাদ স্মৃতি সম্মাননা এবং স্বর্ণ পদক গ্রহণ করেন।
পলা দেব ঃ কবি ও স্কুল শিক্ষক
সংবাদটি শেয়ার করুন