সন্তানের পিতার স্বীকৃতি পেতে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী মা

প্রকাশিত: ৮:২৩ অপরাহ্ণ, মার্চ ২৫, ২০২৩

সন্তানের পিতার স্বীকৃতি পেতে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী মা

সৈয়দ ময়নুল ইসলাম রবিন:

 

একজন বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী মা তার সন্তানের পিতার স্বীকৃতি ও নিজের ভরনপোষণের দাবি আদায়ের জন্য দীর্ঘদিন থেকে ঘুরছেন জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে সমাজপতিদের কাছে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত কোনো বিশ্বস্ত মহল থেকে কোনো সুরাহা না পেয়ে তিনি শারীরিক ও মানষিক ভাবে অনেকটাই বিপর্যস্ত হয়ে পরেছেন।

 

ঘটনাটি ঘটেছে মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলাধীন রাজকান্ধি গ্রামে। বিষয়টি বর্ণনা করতে গিয়ে ভুক্তভোগীর বাবা বলেন, যে ছেলেটি এই জঘন্য কাজটি করেছে সে আমার প্রতিবেশী আব্দুল তাহির এর ছেলে নাজমুল হোসেন (২৩) ওরা আমার আত্মীয় এবং আমার ঘরের মধ্যখানে একটি ঘর পরেই নাজমুলদের ঘর, সেই সুবাদে নাজমুল প্রায় আমার বাড়িতে আসাযাওয়া করতো, আমি সারাদিন কাজের সন্ধানে বাইরে থাকি, আমার এক ছেলে সে ঢাকায় থেকে একটি হার্ডবোর্ড এর কারখানায় কাজ করে, বাড়িতে শুধু আমার স্ত্রী (তিনিও প্রতিবন্ধী) ও নির্যাতনের শিকার আমার বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী মেয়ে থাকে। নাজমুল যে এতোটা জঘন্য আমি কোনোদিন কল্পনা করিনি। যদি জানতাম তার কু-দৃষ্টি এই প্রতিবন্ধী মেয়ের উপর পরেছে তাহলে তাকে আমার বাড়ির আশপাশে আসতে দিতাম না।

 

ভুক্তভোগীর বাবা বলেন, ঘটনাটি প্রথম আমাদের কাছে ধরা পরে গত ০৪ আগস্ট ২০২২ রোজ শুক্রবার আনুমানিক সকাল ১০ ঘটিক থেকে বেলা প্রায় ২ ঘটিকার মধ্যে কারণ সকাল ১০ ঘটিকার সময় আমি কাজের সন্ধানে বাইরে চলে যাই আর ঢাকা থেকে বাড়ি ফেরা আমার ছেলেও উক্ত সময় বাড়ির বাইরে ছিলো, দুপুর ২ ঘটিকায় আমার ছেলে বাড়িতে এসে দেখতে পায় ভুক্তভোগী প্রতিবন্ধী মেয়ের মুখে গামছা বাঁধা এবং নাজমুল পালিয়ে তার ঘরের দিকে যাচ্ছে, এমতাবস্থায় ভুক্তভোগীর ভাইয়ের হাল্লা- চিৎকারে আশপাশের লোকজন জড়ো হন এবং আমিও বাড়ির কাছে থাকার কারণে দ্রুত বাড়িতে আসি।

 

ভুক্তভোগীর বাবা আরো বলেন, এসব ঘটনা দেখার পর উপস্থিত সকলকে নিয়ে ভুক্তভোগী প্রতিবন্ধী মেয়েকে সাথে করে নাজমুলের বাড়ি যাই তখন মেয়েটি সবার সামনে নাজমুলকে হাত দিয়ে ইশারা করে অঝোরে কাঁদতে থাকে। তখন নাজমুলের বাবা মোঃ তাহির মিয়া সাথে থাকা লোকজনের সামনে কথা দেন যা হবার হয়ে গেছে “আমি ঐ মেয়েকে উপযুক্ত সম্মান দিয়ে ওর ভরণপোষণের ব্যাবস্থা করে দিবো, কাউকে কিছু বলার দরকার নেই”। এই কথা শোনার পর ভুক্তভোগীকে নিয়ে তিনি বাড়ি চলে আসেন। কয়েকদিন গত হবার পর আবারও নাজমুল ধরা পড়ে ভুক্তভোগীর পিতার হাতে, তখন ভুক্তভোগীর পিতা নাজমুলের বাবাকে বলেন ” এখনো কোনো ব্যাবস্থা করলেননা অথচ তোমার ছেলে আমার অনুপস্থিতিতে সবসময় আমার ঘরে যায় আজও আমি পাইছি” একথা শুনে নাজমুলের বাবা আস্বস্ত করে বলেন আগামী দুই তিন দিনের ভেতর বসে এর সমাধান করবো তুমি কোনো চিন্তা করোনা। তখন ভুক্তভোগীর বাবা সেখান থেকে চলে আসেন।

 

এদিকে নাজমুলের চতুর বাবা সমাধান করার নির্ধারিত তারিখের আগেই নাজমুলকে সবার অগোচরে বিদেশে পাঠিয়ে দেয়, নাজমুল বিদেশ চলে গেছে এই খবর পেয়ে ভুক্তভোগীর বাবা ও প্রথম ঘটনার দিন উপস্থিত থাকা লোকজনকে সাথে নিয়ে নাজমুলের বাবার কাছে গেলে, নাজমুলের পিতা মোঃ তাহির মিয়া তাদেরকে দুর-দুর করে গলা ধাক্কা দিয়ে বাড়ি থেকে বাহির করে দেয়।

 

তখন ভুক্তভোগীর অসহায় বাবা মেয়ের উচিত বিচার চেয়ে এলাকার চেয়ারম্যান মেম্বার সবার কাছে গিয়েও কোনো বিচার পাননি। এমতাবস্থায় গত প্রায় এক মাস আগে ভুক্তভোগী প্রতিবন্ধী মেয়ের গর্ভে একটি কণ্যা শিশুর জন্ম হয়, তখন ভুক্তভোগীর বাবা নাজমুলের বাবাকে বলেন,” আপনার নাতনি হইছে দেখে যান” তখন তাহির মিয়া বলেন, এই শিশু আমার ছেলের নয়,আমার ছেলে বলছে কোনো অবস্থায় এই মেয়ে ও মেয়ের কোলের বাচ্চাকে সে স্বীকৃতি দিবেনা।

 

আর কোনো উপায় না পেয়ে ভুক্তভোগী প্রতিবন্ধী মেয়ের বাবা বাদী হয়ে নাজমুল সহ তাকে দেশ ছেড়ে পালাতে সহযোগিতাকারি দের আসামি করে মৌলভীবাজার মাননীয় জর্জ আদালতে মামলা করেন। ভুক্তভোগীর বাবা বলেন, দুজন আসামি ধরা খাওয়ার পরে বাড়িতে থাকা অন্য আসামিরা অব্যাহত প্রাণ নাশের হুমকি দিচ্ছে। রাত হলেই ঘরের চালে ঢিল ছুঁড়তে থাকে,গত কয়েকদিন আগে নাজমুলের মা আমার ঘরে এসে ভুক্তভোগীর কোল থেকে বাচ্চা কেড়ে নিয়ে মেড়ে ফেলার ব্যর্থ চেষ্টা করে কারণ সেসময় আমি বাড়ির পিছনে কাজ করছি তখন আমি বুঝতে পারছি কে যেন আমার ঘরে এসেছে তখন পিছন থেকে ঘরে ডুকে দেখি নাজমুলের মা ভুক্তভোগীকে মাটিতে ফেলে দিয়ে বাচ্চার গলায় হাত দিয়ে ধরে উপরে তুলছে তখন আমি চিৎকার করলে বাচ্চাটিকে মাটিতে ফেলে সে পালিয়ে যায়, আমরা আতংকগ্রস্থ কোন সময় কি হয় এই ভেবে।

 

মামলার পরে এই হুমকি দিচ্ছে এ বিষয়টি থানায় জানানো হয়েছে কি-না এই প্রশ্নে ভুক্তভোগীর বলেন, আর নতুন করে কোনো বিষয়ে থানায় গেলে আমার ঘরদুয়ার জ্বালিয়ে দিবে বলে আমার উঠানে এসে শাসিয়ে গেছে লম্পট নাজমুলের পিতা তাহির মিয়া, তাই প্রাণ ভয়ে আর থানায় যাইনি।

 

এবিষয়ে  কমলগঞ্জ উপজেলার ৯নং ইসলামপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ সোলেমান মিয়া এর সাথে কথা হয়, তিনি বলেন, ঘটনাটি সম্পূর্ণ সত্য নাজমুলের এই ঘটনা প্রকাশ পাওয়ার পর তার বাবা তাহির মিয়া প্রতিবন্ধী মেয়েকে উপযুক্ত সম্মান দিয়ে ওর ভরণপোষণের দায়িত্ব গ্রহণের কথা বলে একটি নির্দিষ্ট তারিখ দেয়, উক্ত তারিখের আগেই নাজমুলকে সবার অগোচরে বিদেশে পাঠিয়ে দেয়। অথচ এই ভুক্তভোগীর গর্ভে জন্ম নিয়েছে একটি নিষ্পাপ শিশু। এখন এদের দায়িত্ব কে নিবে? আমি অনেক চেষ্টা করেছি কিন্তু তাহির মিয়া আমার কথা শোনেনি।

 

অভিযুক্ত নাজমুলের পিতা তাহির মিয়া এর সাথে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।

 

এ বিষয়ে কমলগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ বলেন, এই বিষয়ে একটি মামলা হয়েছে এবং দু’জন আসামিকে গ্রেফতার করে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে এবং বাকি আসামিদের গ্রেফতার করতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।