ঢাকা ১৫ই সেপ্টেম্বর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৩১শে ভাদ্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ই রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি


সবুজ আলো ভেনেসিয়ান

redtimes.com,bd
প্রকাশিত ফেব্রুয়ারি ৬, ২০১৮, ১০:৫৮ পূর্বাহ্ণ
সবুজ আলো ভেনেসিয়ান

রোকসানা  লেইস 

অন্ধকারে সবুজ আলো নেচে বেড়াচ্ছে চোখের মতন আকার একটা নয় কয়েকটা। সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে গিয়ে কাঁচের দরজার বাইরে চোখ গেল আর মনে হলো একটা সবুজ আলো যেন ঝিলিক দিল। মনের ভুল মনে করে সিঁড়ির দু ধাপ উঠে আবার ফিরে বাইরে তাকানো। তেমন কিছু দেখা যাচ্ছে না। হাত বাড়িয়ে দেয়ালের সুইচ টিপে বড় আলোর বাতি নিভিয়ে আবার বাইরে চোখের দৃষ্টি মেলে দেয়া। প্রথমে কিছুই চোখে পরল না নিকশ অন্ধকার ছাড়া। কয়েক মুহুর্তে উঠোনের গাছপালা ছায়াছায়া দৃষ্টি গোচর হলো।
তার মাঝে সবুজ আলোর নেচে বেড়ান। অনেকগুলো তবে দুটো দুটো আলো পাশাপাশি, চোখের মতন। কৌতুহল বাড়ছে এগুলো কি। হরিণ অথবা বন্য শুয়োর বা অন্য কোন জন্তু। প্রাণীর মতন হেঁটে বেড়াচ্ছে না উড়ে বেড়াচ্ছে ধরা যাচ্ছে না। একটু ভয় করছে। বেকায়দা একটা অবস্থায় দু হাত ভরতি জলের গ্লাস জগ, সিঁড়ির উপরে দাঁড়ানো। ঘুমুতে যাওয়ার আগে পানি নিয়ে যাওয়ার অভ্যাস চির কালের। সবুজ আলোর নাচন আর ওর মাঝে কাঁচের দরজার ব্যাবধান শুধু ।
আগ্রহ, উৎকণ্ঠা, ভয় কৌতুহলের সংমিশ্রনে পা যেন সেটে গেছে এক জায়গায় আর চোখের দৃষ্টি খোঁজছে সূত্র।
আলোগুলো কাঁচের দরজার বাইরে ভীড় করেছে। ওদেরও কৌতুহল ভরা চোখ একই রকম। দেখতে পেয়েছে ঘরের ভিতর ওকে মনে হলো।
কিন্তু এগুলো কি?
চার পেয়ে কোন জন্তুর মুখ নয়। সাদা সাদা চুলবিহীন মাথা।
ভুত! ধ্যাত..ভুত, প্রেতে কোন জীবনেই আস্থা নাই।
পাশাপাশি তিন জোড়া সবুজ চোখ কাঁচের ওপারে মুখ ঠেকিয়ে তাকিয়ে আছে ঘরের ভিতর, দেখছে।
এতক্ষণ যেন ঘুরছিল খোঁজে পাওয়ার তাড়নায়। এবার পেয়ে গেছে জীবনের খোঁজ যা ওরা খোঁজছিল এতক্ষণ।
দু হাতে জিনিস নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা কষ্ট তাছাড়া এক ধরনের অস্বস্থিকর পরিবেশ। উপরে উঠে যেতে গিয়ে মনে হলো পা সেটে আছে সিঁড়ির ধাপে, উপরে উঠতে পারছে না। নীচের ঘরে ফিরে গ্লাস জগ টেবিলে রেখে জানালার কাঁচে চোখ রাখতেই দরজার পাশ থেকে সবুজ চোখগুলো জানালায় চলে আসল।
দশটা সবুজ আলো জ্বলছে অন্ধকারের সীমানায় আগে পিছে,উপরে নিচে। মৌ মাছির শব্দের মতন একটা বীন বীন শব্দ আসছে যেন।
সাদা সাদা মাকড়শার পায়ের মতন আঙ্গুল এবার কাঁচের উপর হাত। বিলবিলে একটা শীতল অনুভূতি জড়িয়ে যায় শরীরে কিন্তু আগ্রহ চরম আকার নিয়েছে অচেনা প্রাণীগুলোকে জানার।পৃথিবীর চেনা জানা শোনা কোন প্রাণীর মতনই মনে হচ্ছে না এদের।
ওদের বড় বড় সবুজ চোখগুলোয় যেন এক আবেদন মায়া ভরা।
চোখে চোখে তাকিয়ে থাকতে মনে হলো ওরা যেন বলছে আমাদের ভিতরে আসতে দাও। তোমার সাথে আমাদের কিছু কথা আছে।
মন্ত্রমুগ্ধের মতন দরজার কাছে গিয়ে দরজা খুলে ওদের ভিতরে নিয়ে আসা হলো। খাবার টেবিল ঘিরে বসল ছোট ছোট মানুষের মতন প্রাণীগুলো খুব শান্ত ভাবে। দু চারজন দাঁড়িয়ে থাকল পাশে, বসার চেয়ার ছিল না বলে।
ওদের পরনে এক ধরনের শুভ্র ভারী কাপড় নীলাভ আলোর বিচ্ছুরণে ঘেরা। তার বাইরে বেরিয়ে আছে সাদা মুখ আর শুভ্র হাতের পাতা। সবুজ চোখ মুখের আকৃতির চেয়ে বেশ বড় আর গোলাপী ঠোঁট।
বীনবীনে মৌমাছির মতন শব্দটা ধীরে থেমে একদম নিরব হয়ে গেল চারপাশ।
একটু বড়সর যাকে লীডার মনে হচ্ছে তিনি হঠাৎ পরিস্কার বাংলায় বলে উঠলেন। মানুষের মতনই কন্ঠস্বর তবে কথার শেষে ইকো ধ্বনীর মতন হচ্ছে।
আপনাকে বিরক্ত করার জন্য দুঃখিত কিন্তু আপনার বাড়ির পুকুরটাতে ল্যাণ্ড করতে হলো আমাদের। আমরা অন্য যে কোন জায়গায় ল্যাণ্ড করতে পারতাম কিন্তু তা আমাদের জন্য নিরাপদ হতো না। আমাদের কোন অসুবিধা হতো না কিন্তু কৌতুহলি জনগন আমাদের নিরাপদে কাজ করতে দিত না। র্নিবিঘ্নে কাজ করার জন্য আপনার জায়গাটা আমাদের পছন্দ হয়েছে।

আপনাকে না বলে আমরা কিছু কাজ করে চলে যেতে পারতাম কিন্তু যেহেতু আপনার জায়গাটা আমরা ব্যবহার করছি তাই আপনাকে জানান দরকার আপনার জায়গায় আমাদের উপস্থিতি। আমরা জানি, আপনার এই বিশাল বাড়ির পুরো জায়গাটা খালি পরে থাকে। এই শীতে আপনিও খুব একটা বাইরে বেরুন না ঘর ছেড়ে।
পুকুরে পানি কম আর শীতে পানি বরফ জমে প্রায় স্কেটিং ফিল্ড হয়ে গেছে এখানে ল্যাণ্ড করা সুবিধা । তাছাড়া এর গভীরতায় আমাদের যানটি নিরাপদে মানুষের চোখের আড়ালে লুকিয়ে রাখতে পারছি।
জানি আপনি যথেষ্ট সাহসী তারপরও বলি, আপনি ভয় পাবেন না। আমরা আপনার কোন ক্ষতি করব না। আমরা আপনার জায়গাটা রেন্ট হিসাবে ব্যবহার করছি দিন সাতেকের জন্য। তবে হ্যাঁ আমরা এটা জোড় করে করছি বলতে পারেন। এমনিতে ভাড়া চাইলে আপনি বা আপনার স্বামী হয়তো রাজী হতেন না । এখন যদি আপনি আপত্তি করেন তবে আমারা চলে যাবো। তবে আমাদের থাকতে দিলে আমরা আপনাদের সুবিধাগুলো দেখব এবং যথাযথ মূল্য দিব আপনাদের জায়গা ব্যবহারের জন্য।
বাহ্ বেশ তো মনের মধ্যে এমন একটা কথা বেজে উঠল।
মুখে এতক্ষণে শব্দ করে জিজ্ঞাসা করল। আপনারা কারা, কোথা থেকে এসেছেন?
আমরা ভেনেসিয়ান। শুক্রগ্রহ থেকে এসেছি। পৃথিবীর উপর কিছু গবেষনা করব। আমরা দূর থেকে এতদিন আমাদের গবেষনা করেছি। এবার পৃথিবীর বুকে থেকে কিছু জানতে চাই। নিয়ে যেতে চাই পৃথিবীর কিছু উদ্ভিদ, প্রাণীর স্যাম্পল শুক্রগ্রহে।দেখতে চাই সেখানে তারা কেমন ব্যবহার করে।
ভিতরে একটা মুচকি হাসি আটকে গেল, শুক্রগ্রহের বাসিন্দা ভাড়া নেবে আমার জায়গা। ঠিক জায়গাও নয় পুকুরের ভিতর ওদের প্লেন বা রকেট বা স্পেইস সিপ যা নিয়ে ওরা উড়ে এসেছে পৃথিবীতে সেটা অবতরণ করিয়েছে বলে। কিন্তু ওরা কি ভাবে মূল্য পরিশোধ করবে তাই ভেবে ওর হাসি আসছে। আর পুকুরটা তো এমনি পরে আছে না হয় থাকল ওরা ক’দিন সেখানে। মাছের চাষ করবে ভাবতে ভাবতে হুট করে শীত এসে গেল তাই এ বছর কিছু করাই হয়নি। করা হয়নি পুকুর ঘিরে মনের ভিতর থাকা জাপানি র্গাডেনও।
বেশ একটা এ্যাডভেঞ্চার ভাব হচ্ছে মনে তবে পারিবেশের উপর কোন প্রভাব পরবে কিনা কে জানে। অথবা ওরা যদি পৃথিবীর কোন ক্ষতির কারণ হয়। ভাবনাটা ভাবতেই একটু অসহায় লাগল।
মনে সাহস এনে সরাসরি জানার জন্য জিজ্ঞেস করল, আপনারা পৃথিবীর কোন ক্ষতি করবে না তো?
ধন্যবাদ প্রশ্ন করার জন্য। আপনার মনে আরও যে সব প্রশ্ন আসছে আমি তা সব ধরতে পারছি।
একটু চমকে ভ্যাবাচেকা খেয়ে সবুজ চোখের উপর দৃষ্টি ফেলে জানতে চাইল তাই বুঝি, কি ভাবে?
আপনার শরীরের তরঙ্গ মস্তিস্কের ফ্রিকোয়েন্সি ভাবনার সাথে আমার মাঝে তরঙ্গায়িত হয়ে ছড়িয়ে পরছে। কথা না বলে মনের কথা বোঝার আমাদের এমন একটা ক্ষমতা আছে।
চারপাশে ঘিরে বসে থাকা এতগুলো ভেনেসিয়ান ওর ভাবনার সব জেনে যাচ্ছে! নিজের মনে লজ্জা পেল খানিক আগে মুচকি হেসে ছিল বলে । কিছু তো ভাবারও উপায় নাই দেখি ওরা সব আগেই জেনে যাচ্ছে।
আপনার মাথার সেলগুলো ভাবনা তৈরী করছে বা ভাবছে আমরা তা সহজেই জেনে নিতে পারব।
কথা বলা হচ্ছে একটি বিষয়ে কিন্তু মাথার ভিতর ভাবনা তৈরী হচ্ছে কত বিষয়ে এক সাথে। ওর ভিতরের সব খবর টলটলে জলের মতন ওরা দেখে ফেলছে।
কোন কিছু না ভেবে ওদের কে দেখায় মনোযোগী হওয়ার চেষ্টা করল।
আপনি নিঃশ্চিন্তে থাকুন। আপনার কোন ক্ষতি তো হবেই না বরং আমরা যতদূর সম্ভব আপনার ইচ্ছা পূরণের চেষ্টা করব।
আমাকে কি করতে হবে?
আপনি শুধু চুপচাপ নিজের মতন যেমন দিন কাটাচ্ছিলেন তেমনি থাকবেন। আমাদের বিষয়ে কারো সাথে কিছু বলবেন না।
ঠিক আছে তবে আপনাদের বিষয়ে আমার অনেক কৌতুহল হচ্ছে আপনাদের সম্মন্ধে কিছু জানতে ইচ্ছে করছে। আর আপনাদের স্পেইস সিপটাও ঘুরে দেখতে ইচ্ছা করছে।
আপনারা কি আমাদের মতনই খাওয়া দাওয়া করেন? আর এই আমার ভাষায় কথা বলা কী ভাবে শিখলেন?
আমরা তরল বাষ্পীয় খাবার খাই আর কথা বলা সে তো আপনাদের গবেষনা করে আমরা পেয়েছি। কাছাকাছি আসার পর অটোমেটিক বুঝতে পারছি, বলতেও পারছি।
ঠিক আছে আপনি এখন ঘুমাতে যান। আমরা প্রতিদিন আপনার সাথে দেখা করব। আর যদি আমাদের কাজ আগে শেষ হয়ে যায় তবে সাতদিনের আগেই চলে যাব।
আপনাকে আমাদের সিপে অবশ্যই নিয়ে যাব।
দরজা খুলে আলোগুলো নেচে নেচে বাড়ির পিছনে চলে গেল। ও তাকিয়ে দেখল প্রতিটি আলো মিলিয়ে যাওয়া পর্যন্ত দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে।

অন্ধকারে পুকুরে ওদের সিপটা দেখতে পেল না।
দোতলায় এসে শোবার ঘরে না ঢুকে চলে গেল লাইব্রেরী রুমে যেখান থেকে পিছনের পুকুরটা স্পষ্ট চোখে পড়ে।
আজ ভীষণ অন্ধকার কৃষ্ণপক্ষের রাত। বাইরে তাই ছায়াছায়া গাছপালার আভাষ ছাড়া কিছুই চোখে পড়ছে না।
অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর বাইরের গাছপালার অবস্থান ছায়াছায়া মতন চোখে পরল আর মনে হলো হালকা নীলাভ আলোর ফুলকি যেন জ্বলছে কয়েকটা বাড়ির পেছনে পুকুরের কাছে আর খুব হালকা সাদা আলোর একটা বিচ্ছুরণ গোল হয়ে আছে যেন। যেমন হয় বরফ জমা জলে চাঁদের আলো পরলে।
অনেক্ষণ তাকানোর পর অন্ধকার চোখ সয়ে যাওয়ার পর বেশ বোঝা যাচ্ছে এবার ।

বাড়িটা উত্তর আমেরিকার নর্থপুলের কাছাকাছি শুনসান এক বিরান এলাকায় বিশাল জায়গা জুড়ে।
প্রতিবেশীরা অনেক দূরে তারপরও কারো নজরে এলে কি হবে।
তবে সময়টা ক্রিসমাসের সবার বাড়ি ঘিরে নানা রকম আলোর মালা জ্বলছে। এমন কিছুই ভাবতে পারে প্রতিবেশীরা। তারপরও অতি কৌতুহলি হয়ে কেউ যদি চলে আসে তা হলে কেমন হবে? ভাবনাটা ভাবতে ভাবতে শুনতে পেল স্বামীর কণ্ঠস্বর- তুমি কি আজ ঘুমাবে না?
উত্তর না দিয়েই তাড়াতাড়ি শোয়ার ঘরে চলে এলো ।
সারাদিনের অফিস ক্লান্ত মানুষটার এক প্রহরের ঘুম হয়ে গেছে এর মাঝে।
ঘুম জড়ানো কণ্ঠে আবারও বলল -কি আজ এত দেরী করছো যে।
বলব কি এখন একবার ভেবে নিয়ে মন পরিবর্তন করল, থাক কাল সকালে কি হয় দেখা যাক।
কিছুই না বলে বিছানায় উঠে এলো, -এই তো এলাম।

স্বামী বেচারা খুব ভোরে কাজে বেড়িয়ে যায় শীতের সকালে প্রায় অন্ধকার থাকতেই। অনেকটা দূরে যেতে হয় ওকে অফিসে। তাই সকালে চারপাশে নজর দেয়ার সময় থাকে না।
ও সাধারণত ঘুমিয়ে থাকে সকালে উঠে না। কিন্তু আজ উঠে পরল। স্বামী একটু অবাক হয়ে জানতে চাইল -কি উঠে পড়লে যে আজ।
-কাল রাতে দেরী করে এলাম তোমার সাথে কথা হলো না তাই ভাবলাম তোমাকে একটু চা করে দেই আজ সকালে আর দিনের খবরা খবর নেই।
-বাহ আজ বড় শুভদিন মনে হচ্ছে
-তাই শুভ সকাল শুভ দিন। হালকা হেসে ও চা বানাতে চলে গেল। তুমি তৈরী হয়ে আসো
চায়ের পানি ও টোষ্টারে টোষ্ট তুলে দিয়ে বাইরে নজর দিল। অন্য রকম কিছু চোখে পরে কিনা দেখতে।
ভোরের আলোয় প্রতিদিনের মতনই সব স্বাভাবিক মনে হচ্ছে।

স্বামীকে বিদায় জানিয়ে পূব আকাশের দিকে চোখ ফিরাল। জ্বলজ্বলে শুকতারাটা চোখে পরল ওর।
ঐ তারার প্রাণী তার বাড়িতে মেহমান। কাল রাতে ওদের সাথে দেখা হলো ভাবনাটা ভাবতেই কেমন শিহরণ জাগল শরীরে। কি আশ্চর্য অবাক করা ব্যাপার। ও তো রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে যেতে পারে। এই খবরটা যদি মিড়িয়ায় জানায়। নাসার বিজ্ঞানীরা হামলে পরবে ওর বাড়িতে। ক্যামেরা আর ফ্লাসের ঝলকানিতে ওর বাড়ি আলোকিত হয়ে উঠবে । পৃথিবীর প্রথম মানবী সে যার সাথে ভেনেসিয়ানরা কথা বলেছে।
ভাবনাগুলো ভাবতে ভাবতে আনমনা হয়ে আকাশের দিকেই তাকিয়ে আছে অনেকক্ষণ। শীতল বাতাস শরীর ঘিরে ধরেছে সে খেয়ালও নাই।
-শুভ সকাল”
কথাটা শুনে ফিরে তাকাল, ভেনেসিয়ানদের একজন ওর সামনে দাঁড়িয়ে।
-শুভ সকাল কেমন কাটল রাত পৃথিবীর বুকে?
-ভালো বেশ ভালো?
-তোমাদের কি এমনি ভাবে রাতদিন হয়?
-হয় তবে আমাদের সূর্যটা উঠে পশ্চিম দিকে আর তোমাদের পৃথিবীটা আমাদের চাঁদ।
-ঐ তারাটা দেখছো ওটা তোমাদের বাড়ি।
সবুজ চোখের আলোটা একটু ম্লান সকাল বেলা তবে ঠোঁটের গোলাপী রঙ অনেক গাঢ় দেখাচ্ছে। হাসির আভাস ছড়িয়ে বলল, -জানি আর এও জানি তুমি কি ভাবছিলে।
-ছি ছি কি বলছো, আমি কিছু মিন করিনি কিন্তু ভাবনা টা তো এসে যাবেই নয় কি? আমরা তো এমনই ভাবতে অভ্যস্থ।
-তা ঠিক তবে তুমি তোমার স্বামীকেও কিছু বলোনি।
-না সে নিজেই জানুক বা তোমরা জানাও।
-তাই আমরা জানাব।
-তা তোমরা সারাদিন কি আমার বাড়িতেই থাকবে?
-না আমরা সবাই কাজে বেড়িয়ে পরেছি। রাতের অন্ধকারে পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় ছোট ছোট যান নিয়ে চলে গেছে অনেকে।
-ওহ্ তাই নাকি?
-তবে তারা সবাই জঙ্গল বা বিরান ভূমিতে গিয়েছে, মানুষের মাঝে নয়।
-তোমরা কতজন এসেছো?
-চার শত ।
-তোমরা পৃথিবীর কোথায় কোথায় যাবে।
-সবগুলো মহাদেশে আর যত বেশী দেশ আমরা দেখতে পারব ততই ভালো -সেই চেষ্টা করব।
-তোমাদের দেশ গুলো কি আমাদের মতন?
-নাহ পৃথিবীটা বড় বিচিত্র।দেশ আর মানুষ অনেক ভিন্ন রকম।আমাদের একটাই দেশ আর এক রকম সব ভেনেসিয়ান।

একটি দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো ওর বেশ জোড়ে সরে আহা এমন যদি পৃথিবীটা একটা দেশ হতো আর সব মানুষ শুধুই পৃথিবীর মানুষ হতো তা হলে কি যে ভালো হতো। যে যখন খুশি সেখানে চলে যেত।
-আমরা ইচ্ছে করলে এমন করে দিতে পারি।
-দাও না তবে
-হঠাৎ করে পৃথিবীর মানুষের একটা সময় লোপ পেয়ে যাবে তবে। হঠাৎ করে খানিকটা এলোমেলো অবস্থায় পরে যাবে অনেকে।
-কেমন সেটা?
-এই ধরো, যারা সকালে উঠে কাজে যায়, পাস পোর্ট ভিষা দেয়ার জন্য নেয়ার জন্য। বর্ডার চেকিং, ইমিগ্রেসন সিষ্টেম, লইয়ার সোস্যালওয়ার্কার প্রেসিডেণ্ট, মন্ত্রি বিভিন্ন দেশের, বা আর্মি এরা সব মনে করতে পারবে না ওরা কি করত। অনেক অনেক কাজ আর পৃথিবীর বুকে থাকবে না।
-বেশ হয় এমন কাজ থাকার চেয়ে না থাকাই ভালো।
-আমরা সব ভুলিয়ে দিতে পারি ইচ্ছে করলে।
-তোমরা ভুলিয়ে দিতে পারো কিন্তু মনে করিয়ে দিতে পার না?
-তাও পারি,
-তাহলে বেশ হয়।

এমন সময় ফোনটা বাজতে থাকল। -আমি ফোনটা ধরতে যাচ্ছি।
-ঠিক আছে পরে আবার আসব কথা হবে।
দরজা বন্ধ করে তাড়াতাড়ি ভিতরে এলো।এতক্ষণে টের পেলো ঠাণ্ডায় হাত পা জমে যাচ্ছে।
ফোনের রিসিভার তুলে নিয়ে কথা বলতে বলতে বিছানায় এসে ঢুকল।
-ঘুমিয়ে পরেছো
-না ঘুমাইনি
-কি করছো
-সকাল দেখছিলাম, তুমি পৌঁছেছো?
-হ্যাঁ, একটা কথা জানানোর জন্য তোমাকে ফোন করলাম।
-কি কোন অসুবিধা হয়েছে পথে?
-না গো, গাড়িটা একটু ট্রাবল দিচ্ছিল ক’দিন। আজ অবাক কাণ্ড কিছুই টের পেলাম না। ভাবছিলাম মেরামত করতে নিয়ে যাব আজ কিন্তু এত স্মুথ চলল মনে হলো যেন নতুন গাড়ি চালাচ্ছি।
-তাই নাকি, রাস্তা কেমন ছিল?
-এদিকে অনেক তুষারপাত হয়েছে আজ। আমি তো ভয় পাচ্ছিলাম কখন জানি গাড়ি থেমে যায় কিন্তু গাড়ি অসাধারণ চলল।
-বাহ্ দারুণ তো। বলার সাথে মনে হলো, ওরা কিছু করেছে অবশ্যই। মনে মনে একটা ভালোলাগার ঢেউ খেলে গেলো কিন্তু মুখে বলল, ঠিক আছে ফিরে আসো আজ দিনটা দেখো কোন অসুবিধা হলে কাল নিয়ে যেও ঠিক করাতে মেকানিকসের কাছে।
কথা বলা শেষ করে ও ঘুমিয়ে পরল বড় আরামে।

ঘুম থেকে জেগে দেখল চারপাশে ঝলমলে রোদ। সকাল গড়িয়ে গেছে।
নীচে নেমে এলো পরিপাটি হয়ে। পরিজ আর চা পান করে নেমে এলো ঘরের বাইরে। শুনসান চারপাশ যেমন থাকে প্রতিদিন। কোথাও কোন পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে না। মৃদুমন্দ হাওয়ায় শব্দ উঠছে শুকনা ডালে, ঝরে পরা পাতায়। বড্ড মায়াময় একটা দিন অলস রোদের আলো মেখে শুয়ে আছে।
সামনে, বাগানের দিকে হেঁটে এলো রোজকার মতন। পেছনে বাগানের দিকে যাবে কি না ভাবছে। ওদের কাউকে দেখা যাচ্ছে না কোথাও। এমন সময় একজন ওর পাশে এসে দাঁড়াল যেন ভূঁই ফূঁড়ে উঠে এলো।
-হ্যালো ম্যাম,
-ওহ হাই কেমন আছো কেমন লাগছে পৃথিবীতে?
-ভালো খুব ভালো
-আমি তোমাদের খুঁজছিলাম আমি কি ওদিকে যেতে পারি?
-হ্যাঁ আসো আমার সাথে, তোমাকে নেয়ার জন্য লীডার আমাকে পাঠালেন।
পাশের ভেনেসিয়ানের সাথে নিজের বাড়ির পিছনে, পুকুরের দিকে যেতে যেতে বলল -আমার একটু অসুবিধা হচ্ছে।
সবুজ বড়বড় চোখ আরও বড় করে মিনতি মাখিয়ে জানতে চাইলে, -বলো কি অসুবিধা?
-তোমাদের নারী পুরুষের প্রভেদ বা দুজনের মধ্যে কোন পার্থক্য বুঝতে পারছি না।
মৃদু হাসির রেখা দেখা দিল গোলাপী ঠোঁটের প্রান্তে -ওহ্ এই ব্যাপার। আমি ভেবেছিলাম অনেক বড় কোন সমস্যা।
আমাদের পার্থক্যটা তেমন নয় তবে তোমাদের প্রাণীদের যেমন একই রকম লাগে দেখতে কিন্তু পরখ করলে আলাদা চেনা যায় তেমনি আমাদেরকে ভালো করে দেখলে চিনতে পারবে।
তাছাড়া পৃথিবীর আবহাওয়ার সাথে খাপ খাওয়ানোর জন্য আমরা বিচিত্র কাপড় পরে ঢেকে রেখেছি নিজেদের, মুখ শুধু দেখতে পাচ্ছো।
-তোমরা সবাই কি সিপের ভিতর?
না কয়েকজন আছি এখন বাকি সবাই চলে গেছে কাজে।
কি কাজ করছে ওরা, ভাবনাটা এসে গেল ওর মনে।
পুকুরের মাঝে একটা ডিমের খোসার মতন সাদা গোল বল যেন বসে আছে।
ও কাছে পৌঁছাতে না পৌঁছাতে কয়েকজন লাইন দিয়ে ওর সামনে এসে দাঁড়াল।
-হ্যালো ম্যাম, হ্যালো ম্যাম, সমস্বরে সবাই ওকে অভিবাদন জানাচ্ছে।
ও হেসে বলল,- হ্যালো সবাই ভালো? পৃথিবীতে রাত্রি যাপন ভালো হয়েছে।
একজন বলল, -খুব ভালো হয়েছে।সিপের ভিতরে আসেন, লীডার আপনার সাথে কথা বলবেন।

সিপের ভিতরে যাবে যদি ওকে নিয়ে উড়ে যায় অথবা আটকে রাখে; ভাবনাটা এসে গেল আবচেতন ভাবে। যদিও ওরা খুব ভালো ব্যবহার করছে তবু একটু ভয় লাগল অচেনা প্রাণীর যানের ভিতর যেতে।
বড়গোছের লীডার কাল রাতে যিনি কথা বলেছিলেন তিনি এগিয়ে আসলেন দরজার কাছে, তাকে বেশ চেনা মনে হলো।
-ইতস্তত করার কিছু নাই আসুন, কোন ক্ষতি হবে না।
সবুজ চোখে চোখ রেখে স্মিত হেসে ভিতরে পা বাড়াল।
অদ্ভুত সুন্দর সাজানো এক ঘর নীলাভ আলোর। নরম সোফার মতন কাউচ দেখিয়ে ওকে বসতে বলল। সামনে কাঁচের স্বচ্ছ টেবিল।
বাতাস খানিক ভারী যেন ভিতরে গভীর এবং শীতল।
-আপনাকে বিরক্ত করার জন্য দুঃখিত আন্তরিক ভাবে। জানি আপনার অস্বস্থি হচ্ছে আমরা এখানে থাকায়। যা খুব স্বাভাবিক। তবে আপনাকে নিশ্চিন্ত করছি আপনার কোন ক্ষতি আমাদের দ্বারা হবে না।
আমরা আপনার কিছু উপকার করে যাব।

-না তা দরকার হবে না। তবে সব কিছু একটু নতুন আর অস্বাভাবিক এটা বলতেই হবে। পৃথিবীর মানুষ আপনাদের কথা জেনে গেলে কি হবে। এমন নানান ভাবনা এসে যাচ্ছে।
-ভাববেন না আমাদের কোন ক্ষতি হবে না।
-মানুষদের তো আপনারা চিনেন না। ওরা খুব বেশী নির্মম।
-আমরা ঐ সব অবস্থা কাটিয়ে এসেছি তাই জানি আপনি যা বলছেন।
-এমন মারা মারি কাটাকাটি আপনাদেরও আছে?
-ছিল প্রায় হাজার বছর আগে এখন কেউ ও ভাবে ভাবে না।
-হাজার বছর! তাহলে জানেন কেমন করে?
-ইতিহাস পড়ে। যখন সবাই নিজের কাজে ব্যাস্ত হয়ে গেলো তখন থেকে অন্যের ক্ষতি করার র্দূভিসন্ধী করা বাদ দিল। সবাই মন দিল আমাদের দেশটাকে উন্নত থেকে উন্নততর করতে, একটু খানি উন্নতি মানে সবার জন্য অনেকখানি সুবিধা।
-তাই তো অন্যের ক্ষতি কেন করবে, নিজেকে নিয়ে ব্যাস্ত থাকো।ভালো কাজ করার কি শেষ আছে কোনো।
আহা পৃথিবীটা যদি অমন হতো। হিংসা দরিদ্রতা মুক্ত সুন্দর ভালোবাসার জায়গা।
কিন্তু কি ভাবে সবার মধ্যে ছড়িয়ে দেয়া হলো ভালো থাকার বিষয়টা?
-আমাদের বিজ্ঞানীরা এক ধরনের তরঙ্গ আবিষ্কার করে, যা দিয়ে চিকিৎসা করা হয় দুষ্ট চিন্তা ভাবনা।
-বাহ্
-নির্মূল হয়ে যায় কয়েক বছর পর অনেক রকম র্দূভিসন্ধীর দুষ্টবুদ্ধির চিন্তা ভেনাসিয়ানদের মন মগজ থেকে।
-বাহ আমাদের পৃথিবীতে এমন করা যায় না?
-যাবে না কেন? তবে সকালে যেমন বলেছে আমাদের এক বিজ্ঞানী আপনাকে, মানুষের একটা সময় লোপ পেয়ে যাবে।
-উনি তবে বিজ্ঞানী । -হ্যাঁ আমরা যারা এখানে এসেছি সবাই বিজ্ঞানী এবং গবেষক বিভিন্ন বিষয়ের।
যা বলছিলাম, মানুষদের মাঝে আমাদের মতন সমব্যবস্থা করতে খানিক অসুবিধা এখন পর্যন্ত আমরা দেখতে পাচ্ছি। কারণ মানুষদের মাঝে অনেক কিছুর অনেক রকম ব্যাবধান ধনী দরিদ্র, শিক্ষা, পরিবেশ,খাবার ইত্যাদি। এছাড়া মানুষের খাবার খেয়ে বাঁচতে হয় সে জন্য টাকা আয় করতে হয়। কেউ ভালো আয় করে কেউ কম। তার উপর ভিত্তি করে গড়ছে সমাজ।
-হ্যাঁ সব কিছুর উপর প্রধান প্রয়োজন খাদ্যের জন্যই ছুটছে মানুষ আয় করতে তার উপর ভিত্তি করে আনুসাঙ্গিক অন্য প্রয়োজন আসছে।যে ভাবে পারে নিজেদের জীবন গড়ছে।
ঠিক তাই আপনার সাথে কথা বলে মানুষের মনো জগতের একটা ধারণা করছি।
– সব মানুষের মন কিন্তু এক রকম নয়।
– তা জানি
আপনি কিছু মনে করিয়ে দিতে বলছিলেন সকাল বেলা সেটা কি বিষয়ে।

প্রশ্নটা শুনে থমকে গেল খানিক বর্তমান ভাবনা থেকে ফিরে গেলো অতীতে। ফিরে গেলো সুদূর নিজের বাংলাদেশে। সেখান থেকে অনেককাল আগের যুদ্ধ সময়ে।
আর ভাবনার সুতা ধরে ফিরে এলো বর্তমান সময়ের চাওয়ায়। কোথায় যেন বিশাল একটা জট লেগে আছে সব। বোঝা যাচ্ছে কিন্তু খোলা যাচ্ছে না। আইনের এত মারপ্যাচের দরকার কি যুদ্ধাপরাধীর বিচার আবার কি ওদের ধরে সব ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দিতে হবে প্রকাশ্যে আর সব সম্পত্তির মালিকানা দেয়া হবে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টে যেখান থেকে দেশের সকল মুক্তি যোদ্ধাদের সাহায্য করা হবে।
খানিক ভেবে নিয়ে ভেনেসিয়ান সবুজ চোখের লীডারের চোখের দিকে তাকাল। এক মূহুর্ত থেমে থেকে বলল, -অনেক আগের ঘটনা কিন্তু রেশ এখনও চলছে। আর বেশ লম্বা কাহিণী সব ঠিকঠাক ভাবে বলতে সময় লাগবে।
-হাত তুলে ওকে থামিয়ে দিয়ে লীডার বলল, বুঝে গেছি, আপনার চাওয়া কি?
-ওদের যে সাঙ্গ পাঙ্গরা ভুল বিষয়টাকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য ব্যাস্ত হয়ে আছে তাদের মাথায় আসুক তারা ভুল করছে।
-ঠিক হয়ে যাবে এদের মাথাটা ফাঁকা করে দিতে হবে ভালোর জন্য।
ওর মুখের হাসি উপচে উঠে ঝলকে পরল নিজেকে সামলাতে পারল না। হেসে উঠল অট্টহাসি।
লীডারও যোগ দিলেন ওর হাসিতে, পাশে থেকে অন্য যারা কাজ করছিল সবার মাঝে একটা হাসির রোল উঠল।
হাসতে হাসতে সে মুখে হাত চাপা দিয়ে নিজেকে থামাতে চেষ্টা করছে,
কিন্তু যখনই ভাবছে, কারো মনে থাকবে না তারা কেন জেহাদ করছিল, মারামারির আয়োজন বাদ দিয়ে এক এক জন ফাঁকা মাথায় বলদের মতন বসে আছে। নেতা দুচারজন ওদের দিয়ে সন্ত্রাসী কাজ করাতে চাইছে কিন্তু কেউ ওদের কথা শুনছে না, নড়ছে না, কোন হামলা মারামারি হচ্ছে না।গাড়িতে প্রেট্রল বোমা মেরে মানুষ পুড়ানো হচ্ছে না।
রাজাকারের বিচার এগিয়ে যাচ্ছে সুষ্ঠ মতন। ওর ভাবনায় ছেদ পরল, লীডারের কথায়।
-আপনি নিশ্চিন্ত থাকেন, এই ব্যাপারটায় আপনার চাওয়াটা আমি ধরে ফেলেছি। এখনই আমি একদল বিজ্ঞানী টিমকে আরো সব বিষয় গুলো বুঝে কাজ করার নির্দেশ দিয়ে দিচ্ছি।
বিচারের রায়ের আগেই সারাদেশের মানুষ হাসতে শুরু করে দিবে আপনার মতন।
সবুজ একচোখ টিপে বেশ একটা ইঙ্গীত করলেন লীডার।
নিজের জন্য কিছু নয় তবে দেশের জন্য কিছু চাইতে পেরে অনাবিল আনন্দে মন ভরে উঠল ওর। শরীর যেন হালকা হয়ে গেছে। কি যে ভালোলাগছে।
ইস কবে সে হাসির দিনটা আসবে।
-খুব তাড়াতাড়ি আসবে।
চোখ নাচিয়ে ও সায় দিল আনন্দে।
-আমাদের গাড়িটা কি আপনারা আপডেট করেছেন?
-জ্বী বলা হয়নি রাতে দেখলাম খুব খারাপ অবস্থা কি করে ঐ গাড়ি চালাচ্ছেন আপনারা ভেবে আশ্চর্য হলাম। যে কোন সময় একটা দূর্ঘটনা হতে পারতো তাই জিজ্ঞাসা বাদের অপেক্ষা করলাম না।
কথা শুনে শিউরে উঠল সে, মুখে বলল,-অনেক ধন্যবাদ আমার স্বামী আজ মেকানিকের কাছে নিয়ে যেতে চেয়েছিল। তবে ও খুব অবাক হয়েছে গাড়ির কণ্ডিসনে।
-আমরা আপনাদের বাড়ি ঘর আর আসেপাশের জমিতে মেরামতের কিছু কাজ করে দিব যা আপনার স্বামী করতেন।
-না না সেকি ও আস্তে আস্তে করে নিবে।
-উনি করবেন জানি কিন্তু আমরা তা দ্রুত করে দিব।
-খুব শিঘ্র্ই আপনাদের বাড়িতে অনেক লোকজন আসবে।
-কেন?
-আমরা আছি বলে
-সে কি
-হ্যাঁ
আমরা যে পৃথিবীতে আছি আর আপনার বাড়িতে আছি। যাওয়ার আগে নাসার বিজ্ঞানীদের জানিয়ে যাব। ওদের সাথে একটা যোগাযোগ রাখতে হবে।
আমরা চাই ভেনাস আর আর্থ দুটো দেশের বন্ধুত্ব ।
-বাহ দারুণ হবে তো। আমরা কি ভেনাসে বেড়াতে যেতে পারি?
-তা পারবেন। আর আপনি তো আমাদের বিশেষ অতিথি হবেন পৃথিবীর সাথে ভেনাসের যোগাযোগের সম্মেলনের দিন।
-ওখানে যেতে কোন পাসপোর্ট ভিষা..
-আরে দূর ও সবের কোন প্রচলণ আমাদের নাই শুধু সময় নষ্ট। পৃথিবী থেকে বিষয়টা উঠিয়ে দিতে হবে।
-ঠিক খুব ভালো হবে তা হলে। কিন্তু বাড়িতে কাজ করার আগে আমার স্বামীর সাথে আপনাদের কথা বলে নিতে হবে।
-কাল ছুটির দিন উনি বাসায় থাকবেন, কাল কথা বলে নিব আমরা।

ছয়টা দিন দেখতে দেখতে যেন উড়ে চলে গেল। পরিচয় হওয়ার পরে থেকে স্বামী ওদের সাথে লেগে থাকল। ছুটির দুটো দিন শেষে বাকি তিন দিন অফিস না গিয়ে ওদের সাথে কাটাল। ওর আবার কৌতুহল অনেক বেশী সব কিছু জানার। ভেনেসিয়ানদের কাছ থেকে জ্ঞান আরোহণে ব্যাস্ত থাকল।
দুদিনে ওর জমিতে বড় বড় পিলার গুলো দাঁড়িয়ে যেতে দেখে প্রতিবেশীরা অবাক হয়ে দু’ চারবার ফোন করল। যা করার কথা ছিল তিন মাস পরে প্রতিবেশীরা জানত। একজন তো জানতেই চাইল কি ব্যাপার আলাদিনের প্রদীপ পেয়ে গেছো নাকি?

আর ঘরের ভিতর যা রেনোভেশন হলো তা এখনও কারো চোখে পরেনি।
ছোট ছোট ভেনেসিয়ানরা কি ভাবে এতো কাজ করে ফেলে।
ওরা শুধু শুনে নেয় কোথায় কি হবে রাতের আধাঁর পেরুলে সব তৈরী চাওয়ার চেয়েও সুন্দর নিখঁত ভাবে। ঘুম থেকে জেগে উঠে গত পাঁচ দিন ধরে যেন স্বপ্ন জগতে প্রবেশ করা হয়।
আজ সকালে ঘুম থেকে উঠে দরজা খুলে দেখে দুজন ভেনেসিয়ান ছুটতে ছুটতে এসে বলল, -তাড়াতাড়ি আসেন আমাদের সাথে। দেখেন কারা এসেছে। এই মাত্র আমাদের বাহন পৌঁছেছে।
ছুটতে ছুটতে বাড়ির পিছনে গিয়ে দেখে,ছোট প্লেনের মতন বাহন থেকে কোন সুদূরের দেশ থেকে বাড়ির সব লোকজন বের হচ্ছে।
চোখে জল এসে গেল খুশিতে। একি করে সম্ভব!
স্বপ্ন নয় তো?
অবস্থার সাথে চলতে চলতে বুঝল কিছুই স্বপ্ন নয় সব বাস্তব।
তবে বাড়ির লোকজন ঠিক বুঝতে পারছে না ওরা এখানেই ছিল না অন্য কোথাও। তবে দেখা হয়ে খুব খুশি সবাই।
সবাইকে ঘরে নিয়ে এসে বসিয়ে খাবার দাবার দিয়ে সিপে গিয়ে লীডারকে বলল, -ওদের ম্যামরী লস করে দিলে হবে না। ওদের জানাতে হবে কি ভাবে ওরা এখানে এলো। আর এখানে থাকবে না আবার দেশে ফিরে যাবে সেটা ওদের ইচ্ছায় ঠিক করা হবে।
সায় দিয়ে বললেন- আচ্ছা তাই হবে।

ঘরে এসে ঢুকতে না ঢুকতে ফোন বেজে উঠল ।
ব্যাস্ত পায়ে রিসিভার উঠিয়ে -হ্যালো বলতেই একজন ভারী কণ্ঠের মানুষ বললেন -আমি নাসার বিজ্ঞানী আপনার সাথে কথা বলতে চাই।
-জ্বী বলুন,
-আমরা একটা বার্তা পেয়েছি, ভীন গ্রহের কিছু প্রাণী আপনার বাড়িতে অবস্থান করছেন, তাদের সাথে দেখা করার জন্য আমরা আপনার বাড়িতে আসতে চাই।
কি জবাব দিবে ভেবে চোখ ফিরিয়ে দেখল একজন ভেনেসিয়ান ওর পাশে দাঁড়িয়ে অনুমতি দেয়ার জন্য ইঙ্গিত করছে।
সে ভাবেই বলল, -আসুন।

প্রাইভেট প্লেন দশ বারোখানা এসে থামল ওদের পেছনের জমিতে। যার ভিতরে নাসার বিজ্ঞানী, রির্সাস কর্মি, পৃথিবী ব্যাপী আরো সব বিখ্যাত বিজ্ঞানী, টিভি সাংবাদিক, পত্রিকা সাংবাদিক বাড়ি ভর্তি হয়ে উঠল।

ফ্ল্যাসের আলো ক্যামেরায় ছবি ধারণ করছে ঝলমল করছে সারক্ষণ। ওর বাড়ির খবর সরাসরি প্রচার হচ্ছে সারা পৃথিবী জুড়ে। হৈ চৈ পরে গেলো পৃথিবী ব্যাপী।
সাতদিন ব্যাপী ভেনিসিয়ানরা অবস্থান করেছে ওর বাড়িতে এ খবর জেনে পরিচিত আধা পরিচিত অস্থির হয়ে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করছে। অপরিচিতরাও কথা বলার জন্য ব্যাস্ত ওর সাথে। রাতারাতি এমন বিখ্যাত হয়ে উঠল যা সে কখনও চায় নাই। কিন্তু এখন আর ফিরানোর কোন উপায় নাই ওর নাম পৃথিবীর বুকে লেখা হয়ে থাকবে। ভেনেসিয়ানদের সাথে পরিচিত প্রথম মানবী হিসাবে।

পরদিন ওরা চলে গেল। ওদের আসাটা ছিল চুপিচুপি কিন্তু যাওয়াটা হলো মহা সমারোহে। টেলিভিশনের স্ক্রিনে লেগে রইল ওদের যাওয়ার খবর পৃথিবী জুড়ে।

বাড়ি ভর্তি আত্মিয় নিয়ে বেশ সুখে হৈ চৈ আনন্দে কাটছে দিন।
এমন সময় টিভিতে আসল খবর,রাজাকার গোলাম আযমের বক্তব্য নেয়া হচ্ছে যোদ্ধাপরাধীর বিচারের।
উকিল সাহেবের প্রশ্ন শুনে, আসামীর কাটগড়ায় দাঁড়িয়ে, গোলাম আযম গড়গড় করে আদ্যাপান্ত বৃত্তান্ত ব্যাখ্যা বিশাদে বর্ণনা করে যাচ্ছে নয় মাসের যুদ্ধ সময়ে কোথায় কিভাবে কেমন করে কাকে ধরে এনেছে, নির্যাতন করেছে, হত্যা করেছে। নির্মম সে গা শিউরে উঠা বর্ণনা একের পর এক আপন মনে নিজের তাগিদে যেন বলে যাচ্ছে। যা কোনদিন মানুষ জানেনি, জানার কোন সুযোগও আর ছিল না তা নিজে থেকেই প্রকাশ করে দিচ্ছে। স্মৃতির প্রতিটি দিনক্ষণ জ্যান্ত। সাক্ষীর কোন প্রয়োজন নাই এই বক্তব্য শোনার পর তারপরও সে নিজেই বলে দিচ্ছে, কারা কারা চাক্ষুস দেখেছে তার অপকর্ম। স্বীকার করছে সে তার দোষ। তার শাস্তি চাওয়া বাঙলার জনগণের প্রাণের দাবী মেনে বিচারক যেন তাকে ফাঁসির আদেশ দেন তাই বারবার অনুরোধ করছে।
একের পর এক সব রাজাকারের বিচার শেষ হলো। নির্বিঘ্নে। পালিয়ে থাকা বাচ্চু রাজাকার নিজে এসে ধরা দিল আর বিভিন্ন দেশে পালিয়ে থাকা অপরাধীরাও একে একে ফিরে গিয়ে নিজেদের দোষ জানাল আদালতে।
ওদের অবস্থা হয়েছে নিজেদের অপরাধ নিজেদের পাগল করে তুলেছে, যেন মাথার ঘায়ে কুত্তা পাগল।
বিচার শেষে হাসির শব্দ ছড়িয়ে পরছে বাংলাদেশ ছাড়িয়ে পৃথিবী জুড়ে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

September 2024
S M T W T F S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
2930