সম্প্রীতির পথে যাত্রা

প্রকাশিত: ১২:২৯ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ৬, ২০২২

সম্প্রীতির পথে যাত্রা

 

সৌমিত্র দেব 

খুব ছোটবেলা থেকেই আমি সম্প্রীতি পছন্দ করতাম ।মানুষের ভেতরের হিংসা বিদ্বেষ আমাকে খুব কষ্ট দিতো ।

সম্প্রীতির পক্ষে সব সময় কাজ করেছি। এমন কি সক্রিয় ভাবে ছাত্র রাজনীতি করতে গিয়েও সব সংগঠনের সঙ্গে সম্প্রীতি বজায় রেখেছি । তাই অভিনেতা পীযুষ বন্দ্যোপাধ্যায় যখন সম্প্রীতির বাংলাদেশ নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করলেন , বিনা দ্বিধায় আমি তার সঙ্গে যুক্ত হলাম । তাঁর সঙ্গে আমার যোগাযোগ মূলত কবিতার । বেশীর ভাগ লোক তাঁকে অভিনেতা হিসেবে জানলেও তিনি আসলে কবি এবং সাংবাদিক হিসেবেও অনেক কাজ করেছেন । ২০০৯ সালের বই মেলায় তিনি আমার কবিতার ইংরেজি অনুবাদ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করেছিলেন । বয়সে আমি তাঁর চেয়ে প্রায় দুই দশকের ছোট হলেও ধীরে ধীরে আমি তার ঘনিষ্ট সান্নিধ্য লাভ করেছি । পেয়েছি অগ্রজের স্নেহ । বছর চারেক আগে পীযুষ দার সঙ্গে শুরু হয় আমার সম্প্রীতির পথে যাত্রা ।

পীযুষ বন্দ্যোপাধ্যায় । পদবী দেখেই বোঝা যায় কুলীন ব্রাম্মণ পরিবারের সন্তান । কিন্তু যারা তাঁর সঙ্গে একবার অন্তত পরিচিত হয়েছেন, তারা জানেন, তাঁর মধ্যে না আছে কৌলীন্যের অহমিকা, না আছে সাম্প্রদায়িক ভেদ বুদ্ধি ।তিনি একজন উদার, সংস্কৃতিবান ও মনুষ্যত্ব বোধ সম্পন্ন মানুষ ।

তিনি ছাত্র রাজনীতি করেছেন, মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশ নিয়েছেন । মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বেশীর ভাগ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি । আব্দুল গাফফার চৌধুরীর নাটকে বঙ্গবন্ধুর চরিত্রে রূপ দান করে প্রশংসিত হয়েছেন বিশ্বব্যাপী । ফরিদপুরের কৃতি সন্তান পীযুষ ষাটের দশকের শেষদিকে যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন তখন বাঙালি জাতীয়তাবাদের জোয়ারে উত্তাল সারাদেশ । একই সঙ্গে ছাত্রদের মধ্যে পড়েছে সমাজতান্ত্রিক চেতনার প্রভাব । তিনি ছাত্রলীগ করতেন, পাশাপাশি যুক্ত ছিলেন ছাত্র ইউনিয়নের সাংস্কৃতিক ফ্রন্ট সংস্কৃতি সংসদের সঙ্গে । সে কারণে রাজনীতিতে ছিল তাঁর স্বচ্ছ ও নির্মোহ দৃষ্টিভঙ্গি ।

এ ছাড়া টেলিভিশনে পীযুষ বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনেক অবদান আছে । তিনি সত্তরের দশকে ছিলেন বিটিভির জনপ্রিয় অভিনেতা । সেই সময়ের ধারাবাহিক নাটক সকাল সন্ধ্যার শাহেদ চরিত্রে অভিনয় করে তিনি এ দেশের ঘরে ঘরে জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন । পরবর্তীকালে বিটিভির মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন । তারও পরে দায়িত্ব পালন করেন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন সংস্থার (বিএফডিসি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে ।

অভিনয়ের পাশাপাশি তিনি একজন কবি, নাট্যকার, আবৃত্তিকার ও সংগঠক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে এমএ করেছেন। এ দেশে তাঁর মতো উচ্চশিক্ষিত ও সরকারি উচ্চ পদে কাজ করার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন অভিনেতা খুব কম আছেন ।

২০১৮ সাল । জাতীয় নির্বাচনের কয়েক মাস আগে আমার জেলা শহর মৌলভীবাজারে প্রথম সম্প্রীতি সমাবেশের আয়োজন করি । আমি তখনো সম্প্রীতি বাংলাদেশের সঙ্গে সাংগঠনিক ভাবে যুক্ত হই নি । পীযুষ বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুজপ্রতীম হিসেবে স্রেফ গাইডের দায়িত্ব নিয়েছিলাম । সফরসঙ্গী হিসেবে রাস্তা চিনিয়ে নিয়ে যাবো । সেখানে মূল উদ্যোক্তা ছিলেন পুলিশের সাবেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সৈয়দ বজলুল করিম । তিনি এলাকায় মাফিক মিয়া নামে পরিচিত । কিন্তু একটা জরুরি কারণে মাফিক চাচা সেই যাত্রায় যেতে না পারায় আমার ভুমিকা বেড়ে যায় । একটা মাইক্রোবাসে পীযুষ দার নেতৃত্বে সম্প্রীতি বাংলাদেশের কয়েকজন সদস্য সহ আমার যাত্রা শুরু হয় ।

 

ভৈরবের ব্রিজ পার হয়ে উজান ভাটিতে আমাদের যাত্রা বিরতি । সেখানেই দেখা হয়ে গেল সম্প্রীতি বাংলাদেশের সদস্য সচিব ডাক্তার মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীলের সঙ্গে । পীযুষদা পরিচয় করিয়ে দিলেন । স্বপ্নীল সাহেব পকেট থেকে তাঁর কার্ড বের করে দিয়ে বললেন , সৌমিত্র দা আপনার সঙ্গে আমার একটা মিল আছে । আমরা দুজনেই সিলেটি । আমি তখনো জানি না মামুন আল মাহতাব যে কত বড় একজন ব্যক্তিত্ব । ওই মুহূর্তে সেখানে হাজির হলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার একজন নেত্রী , বর্তমানে সংরক্ষিত আসনের এম পি শিউলি আজাদ । সাংবাদিকতা করতে গিয়েই তাঁর সঙ্গে আমার পরিচয় ছিল । পরিচয় করিয়ে দিলাম স্বপ্নীল সাহেবের সঙ্গে । সঙ্গে সঙ্গে চিনে ফেললেন শিউলি আজাদ । জানালেন , তাঁর স্বামী একজন ঠিকাদার ছিলেন । আর স্বপ্নীল সাহেবের বাবা ছিলেন স্থানীয় সরকার প্রকৌশলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা । তাঁর আশীর্বাদেই শুলি আজাদের স্বামী ব্যবসায়িক ভাবে প্রতিষ্ঠিত হন ।

 

চলবে 

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

লাইভ রেডিও

Calendar

May 2023
S M T W T F S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
28293031