ঢাকা ১৭ই সেপ্টেম্বর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২রা আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৪ই রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি


সিমকী খানের চোখে বেগম খালেদা জিয়া

redtimes.com,bd
প্রকাশিত মার্চ ২৯, ২০২০, ১০:৪৬ অপরাহ্ণ
সিমকী খানের চোখে  বেগম খালেদা জিয়া

সিমকী ইমাম খান
২,

খালেদা জিয়ার নাম আমি প্রথম শুনেছি আমার স্কুল জীবনে । এরপর কলেজে পড়তে গিয়ে এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের বাতাস পাই । আপসহীন সংগ্রামী নেত্রী হিসেবে বেগম খালেদা জিয়া আমাদের মনে স্থান করে নেন । বিশেষ করে আমরা মেয়েরা তাঁর সৌন্দর্যে মুগ্ধ ছিলাম । তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি’র) চেয়ারপার্সন। আমি তখনো বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় হই নি ।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে খালেদা জিয়ার মতো মহীয়সী নারীর আগমন ও সুদৃঢ় অবস্থান নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার দুঃসাহস আমার নেই। তবে আমার মত অনেকেই যখন খালেদা জিয়াকে নিয়ে লিখেন তখন সেটা সব সময় ই নতুন কিছু সংযোজন করে । কেননা- একজন জীবন্ত কিংবদন্তী রাজনৈতিক নেতার কোন বিষয়টা রেখে কোন বিষয়টা যে তুলে আনতে হবে তাই বুঝে পাই না । এ রকম জীবন্ত ব্যক্তির আদর্শ ও দর্শন একেবারে নির্ভেজাল রূপে বর্ণনা করাও কঠিন ।
বিভিন্ন মাধ্যম থেকে জানার চেষ্টা করেছি, বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক দর্শনটি আসলে কি? তিনি কিসের ভিত্তিতে রাজনীতি করেন?

আমার কাছে থাকা নানান উৎসের মাঝে সন্ধান করেছি সে দর্শনের- আমি যা পেয়েছি তা হলো, Herbert Spencer এর অনবদ্য সৃষ্টিকর্ম The Evanescence of evil গ্রন্থের একটি উক্তি যা এখানে প্রনিদানযোগ্য। যেখানে তিনি লেখেছেন, “No one can be perfectly free till all are free, no one can be perfectly moral till all are moral, no one can be perfectly happy till all are happy.” আসলে খালেদা জিয়ার জীবন ও কর্ম ঘাঁটলে এটিই পাওয়া যায়। আমার দৃষ্টিতে এটিই বেগম জিয়ার রাজনৈতিক দর্শন।

একজন গৃহবধু থেকে একটি রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রী হওয়া অত্যন্ত কঠিন কাজ। অনেক কাঠ খড় পুড়িয়েও এই জায়গাটা ধরে রাখা যায় না ।

অনেকেই বলতে পারেন তিনি কেবল গৃহবধু নন- তিনি একটি দেশের স্বাধীনতার ঘোষকের সহধর্মিণী, মুক্তিযুদ্ধে ১ নম্বর সেক্টরের কমান্ডার ও জেড ফোর্স কমান্ডারের সহধর্মিণী, একজন সেনাপ্রধানের স্ত্রী , পরবর্তীকালে বাংলাদেশের ফাস্ট লেডি ! এসবের কোনটাই মিথ্যে নয় । কিন্তু প্রেসিডেন্ট জিয়া বেঁচে থাকতে কোথাও বেগম জিয়াকে গৃহবধু ছাড়া অন্যকোন রূপে দেখা গিয়েছে তার প্রমাণ কেউ কি দিতে পারবেন? বোধকরি পারবেন না। তাহলে সে পদবীগুলো কেবলই আলংকারিক ধরতে হয়, তাই নয় কি? কোন মসৃণ পথেই এই রাজনৈতিক নেত্রীর রাজনীতিতে আগমন ঘটেনি। রাজপথের উত্তাল তরঙ্গমালা পাড়ি দিয়েই তিনি দক্ষ নাবিক। নেতৃত্বের অগ্নি পরীক্ষায় পাশ করা একজন অপ্রতিদ্বন্দ্বী নেত্রী। কি গুণে তিনি এভাবে গণমানুষের মনের গহীনে জায়গা করে নিয়েছেন? সেই প্রশ্ন আমার ছোটবেলা থেকেই ছিল ।

উত্তরটা খুঁজে পেলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি, উপমহাদেশের অন্যতম রাষ্ট্র বিজ্ঞানী এমাজ উদ্দীন আহমেদের কাছে । তিনি বলেন, “জাতীয় রাজনীতির ক্ষেত্রে খালেদা জিয়া হয়েছেন জনতার এবং জনতা হয়েছে খালেদা জিয়ায়। এই অপ্রতিরোধ্য মিলিত স্রোতধারাই বাংলাদেশের রাজনীতির প্রধান স্রোত। স্বাধীনতা ও স্বাতন্ত্রের অনির্বাণ শিখা যেমন জাতীয় মননের শ্রেষ্ঠ সম্পদ, খালেদারও তেমনি শ্রেষ্ঠতম অলংকার।”

বন্ধুর রাজনৈতিক পথটি কেন খালেদা জিয়াকে এত আপন করে নিয়েছে আশা করি অনুমান করতে পারছেন। রাজনীতিতে নেতৃত্বের বাগাড়ম্বর এক বড় দুঃস্বপ্নের নাম। অগণতান্ত্রিক ক্ষমতাশ্রয়ী মানসিকতাও একটি ভয়ংকর দুঃস্বপ্নের নাম- জাতীয় স্বার্থের বিনিময়ে ব্যক্তি ও দলীয় স্বার্থ দেখা ভয়ানক এক অপরাধ হিসাবেই বিবেচিত। বিদেশীদের লোমশ হাতের কাছে জাতীয় স্বার্থের চরম অবনমন হচ্ছে জাতির জন্যে ঘৃণ্য পরাজয়। এই সত্যগুলো বেগম জিয়া হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করে এর বিপক্ষে অবস্থান নিয়েই হয়েছেন গণমানুষের আপসহীন নেত্রী ।

এবার বেগম জিয়ার দৃষ্টিভঙ্গি সম্বলিত দুই তিনটি বক্তব্যের দিকে একটু নজর দেওয়া যাক- ১৯৯৭ সালের ৫ এপ্রিল রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন প্রাঙ্গনে দেওয়া একটি বক্তব্যে তিনি বলেছেন, “স্বাধীনতা আমাদের শ্রেষ্ঠ অর্জন। মুক্তিযুদ্ধ এ জাতির উজ্জ্বলতম অধ্যায়। মুক্তিযোদ্ধারা এ জাতির শ্রেষ্ঠতম সন্তান। স্বাধীনতা সংরক্ষণেও রয়েছে সম্মিলিত ভূমিকা, তা সমুন্নত রাখতে হবে।” ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের বিরুদ্ধে গিয়ে সরকার যে হঠকারী পার্বত্য শান্তিচুক্তি করে তার বিরুদ্ধে তিনি উচ্চারণ করেন, “আমাদের স্বাধীনতা ও রাষ্ট্রীয় অখণ্ডতা আজ বিপন্ন, দেশের নৃতাত্তিক গোষ্ঠির জনগণ আমাদের ভাই-বোন, স্বজন। তাদের গণতান্ত্রিক অধিকারকে বিদ্যমান রাষ্ট্র কাঠামোর ভিতর থেকেই নিশ্চিত করতে হবে।” এছাড়াও তিনি তার দেওয়া বক্তব্যে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে গণমানুষের অভাব অভিযোগ তাদের অধিকার ও উন্নয়নের রূপরেখা দিয়েই চলেছেন।

তাই খালেদা জিয়ার জীবন দর্শন ও রাজনৈতিক দর্শন আমাদের বুঝতে হবে । চর্চা করতে হবে । জনগণের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে জাতীয়তাবাদি চেতনা । আমরা সে জায়গায় পিছিয়ে আছি বলেই আমাদের অর্জন আমরা তুলে ধরতে পারছি না । খালেদা জিয়া এখন আর শুধু একজন মানুষের নাম নয় । একটি চেতনার নাম । এই চেতনা নিয়েই আমাদের আবার জেগে উঠতে হবে ।

(চলবে )

এডভোকেট সিমকী ইমাম খান ঃ সদস্য, বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটি

   

সংবাদটি শেয়ার করুন

September 2024
S M T W T F S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
2930