এসবিএন ডেস্ক: যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ার বিভিন্ন অবরুদ্ধ স্থানে ক্ষুধায় কাতর অবস্থায় দিনাতিপাত করছে প্রায় ৪ লাখ মানুষ। খাদ্য আর পুষ্টির অভাবে মারা যাওয়ার খবর আসছে একের পর এক। দেশটির তিনটি শহরে প্রতিশ্রুত খাবার পৌছানোর অপেক্ষায় তীর্থের কাকের মতো প্রহর গুণছে মানুষজন। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, সিরিয়া জুড়ে অবরুদ্ধ অবস্থায় রয়েছে আনুমানিক ৪ লাখ মানুষ।
আল-জাজিরার খবরে বলা হয়, মাদায়া, দামেস্কর শহরতলী আর ইদলিব প্রদেশের অপর দুটি অবরুদ্ধ শহরে খাবার পৌছানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে ত্রাণ সংস্থাগুলো। শনিবার চুড়ান্ত হওয়া সমঝোতা অনুযায়ী, সিরিয় প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের বাহিনীর ঘিরে রাখা মাদায়া, এবং বিদ্রোহীদের দখলে থাকা ইদলিবের ফুয়া ও কেফ্রায়া গ্রামে খাবার সরবরাহের অনুমতি মিলেছে। দাতব্য সংগঠন ডক্টর্স উইদাউট বর্ডার্স (এমএসএফ)-এর তথ্য অনুযায়ী, সিরীয় সরকার ও লেবানিজ হিজবুল্লাহ গ্রুপ আরোপিত অবরোধের কারণে মাদায়ায় আনুমানিক ৪২ হাজার মানুষের কাছে খাবারের কোন সংস্থান নেই।
অথবা যৎসামান্য জোগাড় রয়েছে। ফলে এ পর্যন্ত কমপক্ষে ২৩ জন মানুষ ক্ষুধায় কাতর হয়ে মারা গেছে।
এছাড়া বিভিন্ন স্থান থেকে পুষ্টি ও খাবারের অভাবের খবর আসছে। এমনও খবর এসেছে যে মাদায়াবাসীদের বেচে থাকার তাগিদে ঘাস আর পোকামাকড় খেতে হচ্ছে। কেফ্রায়া ও ফুয়াতে আনুমানিক ১২৫০০ মানুষকে ত্রাণ সরবরাহ থেকে বিচ্ছিন্ন রেখেছে বিদ্রোহী গ্রুপগুলো। এর মধ্যে রয়েছে আল-নুসরা ফ্রন্ট। ২৬শে ডিসেম্বর সিরীয় সরকারী বাহিনী তল্লাশি চৌকি স্থাপন করে মোদামিয়াহ যাওয়ার সর্বশেষ রাস্তাটি বন্ধ করে দেয়। দামেস্কের অদূরের এ শহরটি বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত। শহরটি বিচ্ছিন্ন করে দিয়ে বিরোধী গ্রুপগুলোকে অস্ত্র নামিয়ে আত্মসমর্পনের দাবি জানায় সরকারী বাহিনী। বিরোধী পন্থী কর্মীদের পরিচালিত মোয়াদামিয়াহ মিডিয়া অফিসের তথ্য মোতাবেক, ওই এলাকায় আনুমানিক ৪৫০০০ বেসামরিক মানুষ আটকা পড়ে আছে।
সংগঠনটি শনিবার বলেছে, ২০১৩ সালের এপ্রিলে শুরু হওয়া অবরুদ্ধ পরিস্থিতি বিদ্যমান ছিল এক বছর। এতে স্থানীয় ১৬ জন বাসিন্দা খাবার ও ঔষুধের অভাবে মারা গেছে। আর বর্তমান অবরোধে এ বছর কমপক্ষে এক জনের মৃত্যু হয়েছে। ১০ই জানুয়ারি মারা যায় ৮ মাস বয়সী এক শিশু। আরব রাজনীতি বিষয়ক লন্ডনভিত্তিক বিশ্লেষক শরিফ নাশাশিবি বলেন, বিদ্রোহী যোদ্ধাদের ‘দ্বিগুন চাপে’ ফেলার জন্য সরকার মোয়াদামিয়াহ ও মাদায়ার মতো স্থানগুলোতে অবরোধ আরোপ করেছে।
এসব অবরোধ শুধু যোদ্ধাদের দূর্বল করে তোলে তাই নয়, সেখানকার জনসাধারণদেরও কষ্টভোগ করতে হয়। এতে ওই জনগোষ্ঠী তাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে পারে এমন উদ্বেগও ওঠে। মি. শরিফ আরও বলেন, এসব অবরোধ যুদ্ধাপরাধ। সরকার সমষ্টিগতভাবে ওইসব এলাকার জনসাধারণকে শাস্তি দিচ্ছে কেননা সেখানে ‘শত্রু’ যোদ্ধাদের অবস্থান রয়েছে। ডিসেম্বরে জাতিসংঘ জানিয়েছিল, সিরীয় সরকার ও মিত্র মিলিশিয়ারা দারায়া, ঘৌটা ও জাবাদানি এলাকায় ১ লক্ষ ৮১ হাজারেরও বেশি মানুষকে অবরুদ্ধ অবস্থায় ফেলেছে। পৃথকভাবে আইসিল গ্রুপ সিরিয়ার পূর্বে ২ লক্ষাধিক মানুষের ওপর অবরোধ আরোপ করেছে। শরিফ বলেন, সিরীয় জনগনকে অবরুদ্ধ করে রাখা অন্যায় সেটা যেই করুক না কেন।
এদিকে, জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ এর মুখপাত্র জুলিয়েট তৌমা বলেন, প্রবেশগম্যতার অভাব আক্রান্ত জনগোষ্ঠীর মানবিক সহায়তার প্রয়োজন পর্যালোচনা অসম্ভব করে তুলেছে। তিনি আরও বলেন, তীব্রতর হয়ে চলা লড়াই আর ক্রমবর্ধমান সহিংসতার কারণে ৪৫ লাখেরও বেশি লোক জাতিসংঘ চিহ্নিত ‘পৌছানো দূরুহ’ এলাকাসমূহে বাস করছে। আর এদের অর্ধেকেরও বেশি শিশু।
RED TIMES LIMITED
116-117, Concord Emporium, Kataban, Dhaka-1205.
Mobile: 017111-66826
Email: [email protected]
Web Design by: SuperSoftIT.com