২৬শে জানুয়ারি ২০২১ ইং | ১২ই মাঘ ১৪২৭ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১০:৫৯ পূর্বাহ্ণ, ডিসেম্বর ৮, ২০১৫
এসবিএন ডেস্ক:
শিশু রাজন,রাকিব ও সাঈদ হত্যা মামলা দ্রুততম সময়ে সম্পন্ন হলেও সিলেটের দক্ষিণ সুরমায় আরেক চাঞ্চল্যকর শিশু নাঈম হত্যা মামলা দীর্ঘ চার বছরেও শেষ হয়নি। ৪র্থ শ্রেনীর ছাত্র মেধাবী ছাত্র মোজাম্মেল হোসেন নাঈম (১১অপহরণের) পর সন্ত্রাসীরা তাকে হত্যা করে। মামলার সাড়ে ৪ বছর পেরিয়ে গেলেও বিচার পায়নি পরিবার। রাজন,রাকিব ও আবু সাঈদ হত্যা মামলার বিচার যেভাবে দ্রুতগতিতে শেষ হয়েছে সে রকম নাঈম হত্যা মামলাটির দ্রুত বিচার শেষ করার জন্য সংশ্লিষ্টদের নিকট দাবী জানিয়েছেন নিহতের পরিবারের লোকজন।
জানা গেছে, ২০১১ সালের ১৪ আগস্ট তারাবির নামাজ পড়তে বাড়ি থেকে বের হয়ে অপহরণ হয় দক্ষিণ সুরমা বলদি লিটল স্টার কিন্ডার গার্ডেনের ৪র্থ শ্রেণীর মেধাবী স্কুলছাত্র মোজাম্মেল হোসেন নাঈম। অপহরণের ৭ দিন পর বাড়ির পার্শ্ববর্তী জঙ্গল থেকে বস্তাবন্দি গলিত অবস্থায় নাঈমের লাশ উদ্ধার করা হয়। ২০১১ সালের ২০ আগস্ট নাঈমের পিতা আব্দুল হক বাদি হয়ে অজ্ঞাতমানা আসামী করে দক্ষিণ সুরমা থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সংশোধনী) এর ৭/৩০ ধারায় একটি মামলা দায়ের করেন। যার নং ১৯ (২০-০৮-২০১১ইং)।
দীর্ঘ তদন্ত শেষে ২০১১ সালের ২৬ নভেম্বর দক্ষিণ সুরমা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোঃ হারুন মজুমদার ৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে এ মামলার চার্জশিট (অভিযোগপত্র/নং-১৫০) দাখিল করেন। চার্জশিটে অভিযুক্তরা হচ্ছে- দক্ষিণ সুরমা উপজেলার পুরান তেতলী গ্রামের মৃত মো. আফতাব আলীর পুত্র মোঃ ইসমাইল আলী (২২), একই এলাকার মো. ইছহাক মিয়া ওরফে ইছহাক আলীর পুত্র মো. মিঠন মিয়া (২০), তার সহোদর রুবেল (১৮), দক্ষিণ সুরমা থানার দক্ষিণ ভার্থখলা ডি-ব্লকের ডিপটি ওরফে রুবেলের পুত্র বিপ্লব ওরফে বিপলু (১৮) ও লক্ষিপুর জেলার রামগঞ্জ থানার নাদবুদ (সুয়াজিবাড়ী) গ্রামের মো. আবুল কাশেম ওরফে আবুল হোসেনের পুত্র বর্তমানে নগরীর কুয়ারপাড় ভাঙ্গাটিকর মা মঞ্জিল স্মৃতি আ/এ ১৫ নম্বর বাসার বাসিন্দা জুনায়েদ হোসেন ওরফে জুনেদ হোসেন (১৯)।
এর মধ্যে মো. ইসমাইল আলী, মো. মিঠুন মিয়া ও বিপ্লব ওরফে বিপলু কারাগারে রয়েছেন। আসামী জুনায়েদ হোসেন জুনেদ বর্তমানে উচ্চ আদালতের আদেশে জামিনে এবং অপর চার্জশিটভুক্ত আসামী রুবেল পলাতক রয়েছে। ইতিপূর্বে জামিনে বেরিয়ে যাওয়া জুনায়েদ বিদেশ গমনের পাঁয়তারা করছে বলে একটি সূত্রে জানা গেছে।
সরেজমিনে নাঈমের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় এক হৃদয়বিদারক দৃশ্য। নাঈমের মা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন- “আমার ছেলের জীবনের বিনিময়ে ঘাতকরা যা চাইত আমি তাই দিতাম। কিন্তু ঘাতকরা নির্দয়ভাবে আমার শিশু বাচ্চাকে হত্যা করে আমাদের পরিবারের সব সুখ শান্তি কেড়ে নিল।” নাঈমের মায়ের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠে এলাকার বাতাস। নাঈমের মা ও নাঈমের ভাই বোনেরা নাঈমের ব্যবহৃত কাপড় চোপড় ও পুরস্কার ইত্যাদির দিকে তাকিয়ে কেঁদে কেঁদে উঠছেন। তারা নাঈম হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবি জানান। নিহত শিশু নাঈমের পিতা আব্দুল হক নগরীর বন্দরবাজারে সুপারীর ব্যবসা করেন। এই ব্যবসা করে ছেলে হত্যার মামলা চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন তিনি। যেভাবে রাজন ও আবু সাঈদ হত্যার বিচার হয়েছে ঠিক সেভাবেই আইনের আওতায় তার শিশুপুত্র নাঈম হত্যকারীদের দৃষ্ঠান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
শিশু নাঈম হত্যাকারীদের আইনের মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবি জানিয়ে দক্ষিণ সুরমার সচেতন মহল বলেন, শিশু রাজন ও আবু সাঈদ হত্যাকারীরাও রেহাই পায়নি। রেহাই পাবেনা নাঈম হত্যাকারীরাও।
৮০ বছর বয়স্ক নিহত নাঈমের দাদা আব্দুর নূর কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, দীর্ঘদিন হয়ে গেলো এখনো আমার নাতি হত্যার বিচার পাইনি। আমরা গরিব মানুষ তাই আমরা বিচার পাচ্ছি না। আল্লাহ আমাদের বিচার করবেন।
নাঈমের মা বলেন, ছেলেদের হত্যাকারী একজন জামিনে বেরিয়ে এসেছে, বাকিরাও জামিনে বেরিয়ে আসার জন্য উচ্চ আদালতে তৎপরতা চালাচ্ছে। আমার ছেলে হত্যার বিচার কি পাব না ? এই বলে কেঁদে উঠেন বার বার তিনি।
মামলার অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের স্পেশাল পিপি এডভোকেট মো. আব্দুল মালেক বলেন, নাঈম হত্যা মামলার মোট সাক্ষী ৩৮ জন। এর মধ্যে ১০ জনের স্বাক্ষ্যগ্রহণ সমাপ্ত হয়েছে। এখন মামলার আইও, ডাক্তার এবং ম্যাজিস্ট্রেট এই জনের অফিসিয়াল সাক্ষ্য এখনও বাকি রয়েছে। অফিসিয়াল এই তিনজনের স্বাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হলেই তাড়াতাড়ি মামলার রায় ঘোষণা করা হবে। বিজয়ের মাস ডিসেম্বর আদালত বন্ধ থাকায় ২০১৬’র জানুয়ারিতে এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের কার্যক্রম শুরু হবে এবং যত দ্রুত সম্ভব চাঞ্চল্যকর এ মামলার রায় ঘোষনা করা হয় তার জন্য যথাযত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।
Corporate Office:
6/A Eskatan Garden
Dhaka, Bangladesh.
Mobile: 017111-66826
Email: mansoumit@yahoo.com
Helpline - +88 01719305766