ঢাকা ১৩ই অক্টোবর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৮শে আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ই রবিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি


সিলেট ও সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে

redtimes.com,bd
প্রকাশিত মে ২১, ২০২২, ১১:৪১ পূর্বাহ্ণ
সিলেট ও সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে

সিলেট ও সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতি ক্রমশ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে ।

এই দুই অঞ্চল থেকে বন্যার পানি নেমে যেতে আরও ৫ থেকে ৭ দিন লেগে যেতে পারে। অন্যদিকে উজান থেকে বন্যার পানি নেমে আসায় ভাটির আরও দুই জেলা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বন্যা আক্রান্ত হতে পারে।

 

এগুলো হলো : নেত্রকোনা ও হবিগঞ্জ। ভারতের বরাক নদীর ত্রিমোহনায় সুরমা-কুশিয়ারার উৎসমুখে ডাইকে ভাঙন দেখা দেওয়ায় নতুন করে কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। উজানের ঢলে সুনামগঞ্জে নিমিষেই বিলীন হয়ে গেছে ব্রিজ।

সিলেটে ভেসে গেছে ৭ হাজারের বেশি পুকুরের মাছ। বন্যাকবলিত এলাকায় খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। অনেকে উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনকে ত্রাণের জন্য দীর্ঘ লাইনে দাঁড়াতে দেখা গেছে।

সরকারিভাবে কিছু ত্রাণ দেওয়া হলেও স্থানীয় লোকজন বলছেন, তা খুবই অপ্রতুল। বন্যার কারণে জনজীবন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ায় পর্যটকদের ভ্রমণে না আসতে অনুরোধ জানানো হয়েছে।

শুক্রবার বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের (এফএফডব্লিউসি) বুলেটিনে বলা হয়েছে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে সিলেট জেলার বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হতে পারে। অপরদিকে সুনামগঞ্জ জেলার নিম্নাঞ্চলের কিছু স্থানে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে।

এ সময়ের মধ্যে সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা ও হবিগঞ্জ জেলার নদীগুলোর পানি সমতল কিছু স্থানে বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। এতে আরও বলা হয়, বর্তমানে সুরমা তিনটি পয়েন্টে আর কুশিয়ারা দুটি পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপরে প্রবাহিত হচ্ছে।

এর মধ্যে সিলেটের অমলশীদে কুশিয়ারা বিপৎসীমার ১৬৯ সেন্টিমিটার ওপরে প্রবাহিত হচ্ছে। গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদীগুলোর পানি বাড়ছে। এটা আরও ২৪ ঘণ্টা অব্যাহত থাকবে। অপরদিকে পদ্মা নদীর পানির সমতল বাড়ছে, যা আরও ৭২ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে।

বুয়েটের পানি ও বন্যা ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. একেএম সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘এত বড় বন্যা হচ্ছে, অথচ কোনো পূর্বাভাস দেখছি না। আগামী ৫ দিনে কী হবে, কোথা দিয়ে পানি নেমে যাবে, এর ফলে ভাটির আর কোনো জেলায় কী হবে সেই তথ্য দেখছি না।

অথচ কম্পিউটারে মডেল তৈরির মাধ্যমে এসব জানা সম্ভব ছিল। আগাম তথ্য পেলে নীতিনির্ধারকরা পদক্ষেপ নিতে পারতেন।’ তিনি প্রশ্ন রাখেন, ‘শহর-বন্দর বানের পানির নিচে চলে যাচ্ছে। বাঁধ ভেঙে লোকালয় ডুবে যাচ্ছে। এসবের আগাম পূর্বাভাস ছিল না কেন? সংশ্লিষ্টরা কী করেছেন?’

তিনি বলেন, ‘যদিও এই বন্যার দুর্ভোগের কারণ যতটা না প্রাকৃতিক তার চেয়ে বেশি মনুষ্য সৃষ্টি। এর দায় মানুষেরই। অপরিকল্পিত নগরায়ণ, বৃক্ষনিধন, নদীর নাব্য সংকট, অপ্রয়োজনীয় বাঁধ কিংবা বাঁধ ভেঙে যাওয়া, জলাশয় ভরাট করে ফেলা ইত্যাদি অন্যতম কারণ।’

দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং তৎসংলগ্ন ভারতের আসাম, মেঘালয়, হিমালয় পাদদেশীয় পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরা প্রদেশের কিছু স্থানে আরও ২৪ ঘণ্টা মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে।

দেশের ভেতরে অন্তত ৯টি স্থান পাওয়া গেছে, যেখানে সর্বোচ্চ ৯০ আর সর্বনিম্ন ৫৪ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড হয়েছে। সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের স্থানটি ছিল সুনামগঞ্জের লরেরগড়। আর ৫৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে নেত্রকোনার জারিয়াজঞ্জাইল।

এদিকে পূর্বাঞ্চলে বন্যা চললেও মধ্য এবং দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছিল। বৃহস্পতিবার রাতে দেশের বড় একটা অংশে কালবৈশাখী ঝড় বয়ে গেছে। ফলে অনেক স্থান থেকেই তাপপ্রবাহের বিদায় ঘটেছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর (বিএমডি) জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকা, রংপুর, সিরাজগঞ্জ, ময়মনসিংহ, সিলেট, কুমিল্লা, নোয়াখালী হয়ে রাঙামাটি পর্যন্ত মাঝারি মাত্রার কালবৈশাখী বয়ে গেছে।

শুক্রবারও দেশের উত্তরাঞ্চলে রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ ও সিলেটের অনেক জায়গায় ঝড়ো হাওয়ার সঙ্গে বৃষ্টি বা বজ সহ বৃষ্টি হয়। এ ছাড়া ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের কিছু জায়গায় এবং খুলনা ও বরিশাল বিভাগের দু-এক জায়গায় বৃষ্টিপাত হয়।

আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক যুগান্তরকে বলেন, মূলত বজ ঝড় বা কালবৈশাখী থেকেই বর্তমানে বৃষ্টি হচ্ছে। সুস্পষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে। এতে হাতিয়া, সন্দ্বীপ, টেকনাফসহ উপকূলীয় অঞ্চলজুড়ে বৃষ্টি হতে পারে।

এতে তাপপ্রবাহভুক্ত এলাকা কমে যাবে। দু-একদিনের মধ্যে আবহাওয়া অনেকটাই সহনীয় পর্যায়ে নেমে আসবে।

সিলেট : টানা বৃষ্টির সঙ্গে উজানের ঢল অব্যাহত থাকায় সিলেট, মৌলভীবাজার ও সুনামগঞ্জের হাওড়ে পানি বাড়ছে। সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারে পানির তোড়ে একটি ব্রিজ ভেঙে পড়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলার দোহালিয়া ইউনিয়নের রামনগর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। সুনামগঞ্জ-দোয়ারাবাজার সড়কে অবস্থিত ব্রিজটি ভেঙে পড়ায় দোয়ারাবাজারের একাংশের সঙ্গে অন্যপাশের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
সিলেট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আবুল কালাম আজাদ জানান, সিলেটের ১৩টি উপজেলার মধ্যে ১১টি উপজেলায় ৮ হাজার ৩২২টি পুকুরে খামারিরা মাছ চাষ করেছেন। এগুলোর মধ্যে ৭ হাজার ২৫১টি পুকুর বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পুকুরের মোট আয়তন ৮৫৪ দশমিক ৭০ হেক্টর। টাকার হিসাবে ৬ কোটি ৭৪ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

শুক্রবার সকালে তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রায়হান কবির সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পর্যটকদের ভ্রমণে না আসতে অনুরোধ জানিয়েছেন। কানাইঘাট উপজেলায় ভোটার তালিকা হালনাগাদের কাজ স্থগিত করা হয়েছে। বন্যার কারণে আপাতত এই উপজেলায় ভোটার তালিকা হালনাগাদের কাজ স্থগিত থাকবে বলে জানিয়েছেন ইসি।

বন্যার অজুহাতে এলপিজি গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি করা হয়েছে সিলেট নগরীর বিভিন্ন স্থানে। খবর পেয়ে নগরীর টিলাগড়, মেঝরটিলা ও শাহপরাণ এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৪টি প্রতিষ্ঠানকে ১২ হাজার টাকা জরিমানা করে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।

সুনামগঞ্জ : বন্যার পানিতে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। সুনামগঞ্জ বক্ষব্যাধি হাসপাতাল, ছাতক উপজেলার কৈতক ২০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল ও তাহিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নিচতলায় পানি ঢুকে পড়েছে। কোথাও চিকিৎসকদের আবাসিক কোয়ার্টারও প্লাবিত হয়েছে।

এতে রোগী ও চিকিৎসক উভয়েই চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। শুক্রবার সুনামগঞ্জ শহরের শান্তিবাগ, মনাটিলা, কালিপুর, ওয়েজখালি, হাজিপাড়া, তেঘরিয়া, নবীনগর, পূর্ব নতুনপাড়া, হাসননগরসহ কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, নতুন করে বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বন্যার পানিতে এসব এলাকার লোকজন দুর্ভোগের শিকার হয়েছেন। অনেকে উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন।

জানা গেছে, সুনামগঞ্জ জেলায় এখন পর্যন্ত ১৮টি আশ্রয়কেন্দ্রে দুই শতাধিক পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। এসব পরিবারের মধ্যে প্রশাসন শুকনা ও রান্না করা খাবার বিতরণ করছে। ছাতক উপজেলায় ৬টি স্কুলে আশ্রয় নিয়েছে ১১০টি পরিবার। দোয়ারবাজার উপজেলায় আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে দুটি।

এখানে ১৫টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। শুক্রবার বিকালে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের সদরগড়, হালুয়ারঘাট, রহমতপুর, পৌরসভার সাহেববাড়ি ঘাট এলাকায় ১১০০ পরিবারের মাঝে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হয়।
বে পানি বৃদ্ধির কারণে বড়লেখা উপজেলার হাওড়-তীরবর্তী গ্রামগুলোতে উদ্বেগ-আতঙ্ক বিরাজ করছে। ইতোমধ্যে কয়েকটি গ্রামের রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে এবং বসতবাড়িতে বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

October 2024
S M T W T F S
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031