ঢাকা ১০ই অক্টোবর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৫শে আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৭ই রবিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি


স্মরণের আলোয় দ্রোহ ও তারুণ্যের কবি রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ

redtimes.com,bd
প্রকাশিত জুন ২১, ২০২৩, ০১:০৪ অপরাহ্ণ
স্মরণের আলোয় দ্রোহ ও তারুণ্যের কবি রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ

 

রিপন শান

হৃদয়সংবেদী তারুণ্য ও আমরণ সংগ্রামের দীপ্ত প্রতীক কবি রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহর মৃত্যুবার্ষিকী আজ ২১ জুন।

১৯৯১ সালের এইদিনে মাত্র ৩৫ বছর বয়সে পরপারে চলে যান তিনি। বাংলাদেশের কবিতায় অবিসস্মরণীয় শিল্পমগ্ন উচ্চারণ তাকে দিয়েছে সত্তরের অন্যতম সেরা কবির তকমা। প্রয়াত এই কবি খুব অল্প সময়ের মধ্যেই নিজেকে মিলিয়ে নিয়েছিলেন আপামর নির্যাতিত মানুষের আত্মার সঙ্গে। সাম্যবাদ, মুক্তিযুদ্ধ, ঐতিহ্যচেতনা ও অসাম্প্রদায়িকবোধে উজ্জ্বল তার কবিতা। তার সৃজন।

‘জাতির পতাকা আজ খামচে ধরেছে সেই পুরোনো শকুন’-এই নির্মম সত্য অবলোকনের পাশাপাশি উচ্চারণ করেছেন অবিনাশী স্বপ্ন- ‘দিন আসবেই- দিন সমতার’। যাবতীয় অসাম্য, শোষণ ও ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে অনমনীয় অবস্থান তাঁকে দিয়েছে ‘তারুণ্যের দীপ্ত প্রতীক’-এর খেতাব। একই সঙ্গে তাঁর কাব্যের আরেক প্রান্তর জুড়ে রয়েছে স্বপ্ন, প্রেম ও সুন্দরের মগ্নতা। রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ মূলত কবি হলেও কাব্য চর্চার পাশাপাশি সঙ্গীত, নাটক, ছোটগল্পের ক্ষেত্রেও ছিলেন সমান উৎসাহী। রুদ্র চেয়েছিলেন বৈষম্যহীন সমাজ ব্যবস্থা গড়ে উঠুক। ফলে ব্যক্তি রুদ্র ও কবি রুদ্রের সমগ্র শিল্প সাধনা ছিল দেশ, মানুষ ও মানুষ্যত্বের প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ।

রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহর জন্ম ১৯৫৬ সালের ১৬ অক্টোবর বরিশাল রেডক্রস হাসপাতালে। রুদ্রের মায়ের নাম শিরিয়া বেগম, বাবার নাম শেখ ওয়ালীউল্লাহ। তাদের স্থায়ী নিবাস বাগেরহাট জেলার মংলা থানার অন্তর্গত সাহেবের মেঠ গ্রামে, তবে পিতার কর্মস্থল ছিল বরিশাল। তার বাবা পেশায় ছিলেন চিকিৎসক। দশ ভাই বোনের মাঝে তিনিই ছিলেন সকলের বড়। বাড়ির পাশেই ছিল নানা বাড়ি, তাই ছোটবেলার অধিংকাশ সময়টাই কবি তার নানাবাড়িতে কাটিয়েছেন। আর সেই নানাবাড়ির পাঠশালাতেই তার লেখাপড়ার হাতেখড়ি হয়। এমনকি লেখালেখির আগ্রহও সৃষ্টি ঐ নানাবাড়ি থেকেই। নানাবাড়িতে সেসময় ‘বেগম’ আর কলকাতার ‘শিশুভারতী’ পত্রিকা আসত নিয়মিত। বলাই বাহুল্য যে শিশুমনে তৈরি হয়ে গিয়েছিল সাহিত্য প্রেমি একটা সত্ত্বার। ঢাকা ওয়েস্ট এন্ড হাইস্কুল থেকে ১৯৭৩ সালে এসএসসি এবং ১৯৭৫ সালে এইচএসসি পাস করেন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় অনার্সসহ এমএ পাস করেন রুদ্রের প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ সাতটি। এরমধ্যে রয়েছে উপদ্রুত উপকূল, ফিরে চাই স্বর্ণগ্রাম, মানুষের মানচিত্র, মৌলিক মুখোশ, ছোবল ইত্যাদি। রুদ্র কিছু গল্প আর গানও লিখেছেন।
রুদ্র মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ ছিলেন জাতীয় কবিতা পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা যুগ্মসম্পাদক, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের প্রথম আহবায়ক কমিটির সদস্য এবং বাংলাদেশ সংগীত পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও প্রকাশনা সচিব। বিগত স্বৈরাচার-বিরোধী আন্দোলনে রুদ্র সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন।

তারুণ্য ও সংগ্রামের দীপ্ত প্রতীক কবি রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ৩৪ বছরের স্বল্পায়ু জীবনে সাতটি কাব্যগ্রন্থ ছাড়াও গল্প, কাব্যনাট্য এবং ভালো আছি ভালো থেকো সহ অর্ধশতাধিক গান রচনা ও সুরারোপ করেছেন। ১৯৮০ সালে তিনি পেয়েছিলেন মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি বিখ্যাত ও বিতর্কিত লেখিকা তসলিমা নাসরিনকে বিয়ে করেন ১৯৮১ সালে। কিন্তু তাঁদের এই দাম্পত্য দীর্ঘস্থায়ী হয় নি। ১৯৮৬ সালে ঘটে বিবাহ বিচ্ছেদ। ১৯৯১ সালের ২১ জুন অতি অকস্মাৎ পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেন গণমানুষের কবি রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ। বাংলাদেশ রোদসী কৃষ্টিসংসার এবং জাতীয় কবিতা পরিষদ- ভোলার তরফ থেকে আজকের এইদিনে কবির প্রতি হৃদয়গভীর শ্রদ্ধা….।

সংবাদটি শেয়ার করুন

October 2024
S M T W T F S
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031