১০ই ডিসেম্বর ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ | ২৫শে অগ্রহায়ণ ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১১:২৫ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ২০, ২০২৩
প্রীতিময় স্মৃতিময় দানীউল হক’ ও
‘পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা’ বিষয়ক ব্যক্তিগত অভিমত
‘মধুর মধুর ধ্বনি বাজে
হৃদয়কমলবনমাঝে
মধুর’……….
স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা যখন তাঁর শিক্ষকের পায়ে হাত দিয়ে সালাম করেন, তখন আমি শিক্ষালাভ করি—সেই দেশের বর্তমান ও ভবিষ্যত প্রজন্ম মনশীল-সৃজনশীল হয়ে গড়ে ওঠার দীক্ষা লাভ করেন। কিন্তু সেই গুণবান শিক্ষকের বিভাগীয় বসার রুমটির পাশের বাথরুম সংস্কার ও বর্ধিত করণের অজুহাতে তাঁর মৃত্যুর ৬ মাসের মধ্যেই যখন টয়লেটে পরিণত করা হয়, তখন আমি স্তম্ভিত হই।
ব্যক্তিগত ঈর্ষা কোন পর্যায়ে গেলে এই কাজটি তাঁরা করতে পারেন? প্রথিতযশা এই শিক্ষকের নাম জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। সাবেক অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
তাই কারসাজিমূলক খাতা হারানোর অভিযোগে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা বিভাগের বিভাগীয় সকল কার্যক্রম থেকে দানীউল হক স্যারকে দীর্ঘদিন বিরত রাখার মতো সিদ্ধান্তে আমি কষ্ট পাই না।
ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক, এমএ থিসিস, পিএইচডি থিসিসের তত্ত্বাবধায়ক হিসাবে এবং সহকর্মী হওয়ার সৌভাগ্যসূত্রে দানীউল হক স্যারের পরিচ্ছন জীবন ও অধ্যাপনা-গবেষণাকর্ম সম্পর্কে আমার অভিজ্ঞতা থেকে দৃঢ়চিত্তে বলতেই পারি তিনি আধুনিক, ভবিষ্যদিশারী একনিষ্ঠ শিক্ষক ছিলেন; অধিকন্তু ছিলেন শিক্ষক রাজনীতি&বিমুখ নির্লোভ স্বচ্ছ মানুষ।
আমি আজ দ্বিধাহীনচিত্তে এই স্মরণ সভায় তাঁর প্রিয় ছাত্রদের মাঝে বলতে চাই:
‘কতটা মিনতি রেখে গেলে,
কারো মন পাওয়া যায়,
কতটা কঠিন হলে হৃদয়,
ভালোবাসা হেরে যায়’
——স্যারের মরদেহ যখন বনানীর কবরখানায় নামানো হলো, তখন দুপুর।
কাঠফাটা রোদকে ঠেকিয়ে সুশীতল ছায়াদান করছে একটি হিজল গাছ; শুধু কবর নয়, আমরাও সেই ছায়ার নিচে।
কী অদ্ভুত কাণ্ড! কোত্থেকে এলো এই হিজল গাছ?
হিজলের থাকার কথা বরষার বিলের ডুবুডুবু জলে নিমজ্জমান।
তাহলে এই বৃক্ষটি কী মহান শিক্ষক দানীউল হকের কৃতকর্মের ফসল—তাঁর ছাত্রদের মিলিত উদ্ভাস!
ঠিক আজকের আয়োজনের মতো।
সক্রেটিসের বিষপানে মৃত্যু হলেও, তাঁর দর্শনচিন্তা আজও জীবন্ত। দানীউল হক লোকান্তরিত হলেও তাঁর গবেষণাকর্ম টিকে থাকবে—ভাষাবিজ্ঞানের কথা ও চর্চা, ধ্বনিবিজ্ঞানের উচ্চারিত ধ্বনিপুঞ্জের সূক্ষ্মতর বিশ্লেষণে, নোয়াম-চমস্কিয় সৃষ্টিশীল ব্যাকরণের আধারিত ব্যাখ্যা-ধারায়।
জাহাঙ্গীরনগর এলামনাই এসোসিয়েশন বাংলা (JUAAB)-এর ৭১ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষিত হলো স্মরণ-দোয়া-আলোচনার পর।
দানীউলীয় বাকপ্রতিম শিষ্যগণ সক্রেটিসের শিষ্যদের মতো; আলেকজান্ডারের মতো বীরত্বব্যঞ্জক কাজটি করলেন। বিভাগীয় এলামনাইগণ প্রিয়শিক্ষকের মৃত্যুর ৪০দিন পর—দানীউল স্যারকে স্মরণ অনুষ্ঠান সফল করার মধ্য দিয়ে—যেখানে বিভাগীয় বর্তমান শিক্ষকগণ অনুপস্থিত এবং বিভাগ এই ৪০ দিনেও নিরব।
এই মঞ্চ থেকেই উচ্চারিত হলো ভাষাবিজ্ঞানী দানীউল হককে দেওয়া হোক ভাষাবিজ্ঞান চর্চার ক্ষেত্রে সম্মানসূচক মরণোত্তর একুশে পদক।
আলোচনার মধ্যপর্বে উন্মোচিত হলো এবং পরিবারের সদস্যদের হাতে তুলে দেওয়া হলো দানীউল স্যারকে উৎসর্গিত ‘বাংলা ভাষাতত্ত্ব চর্চা ১৯৪৭ পর্যন্ত’ আমার লেখা বইটি; যা ১৯৯৫ সালে অধ্যাপক মহাম্মদ দানীউল হক স্যারের তত্ত্বাবধানে সম্পন্নকৃত সুদীর্ঘ ২৮ বছর পর প্রকাশিত আমার এমএ থিসিসের গ্রন্থরূপ।
RED TIMES LIMITED
116-117, Concord Emporium,
Kataban, Dhaka-1205.
Mobile: 017111-66826
Email: redtimesnews@gmail.com