সৎ নেতৃত্বের প্রশ্নে নন্দিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

প্রকাশিত: ২:২১ পূর্বাহ্ণ, ডিসেম্বর ৫, ২০১৭

সৎ নেতৃত্বের প্রশ্নে নন্দিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

মানিক লাল ঘোষ

সততার আজ বড়ই অভাব, ব্যক্তি কিংবা রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে । ব্যক্তি পর্যায়ে যেমন কমে যাচ্ছে-সৎ মানুষের প্রতিচ্ছবি, তেমনি অভাব দেখা যাচ্ছে- রাষ্ট্রীয় পর্যায়েও। পৃথিবীব্যাপি মিলে মিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে, ক্ষমতা ও দূর্নীতি শব্দ দুটি। বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানের নামে গন মাধ্যমে উঠে আসছে দূর্নীতির অভিযোগ। নিজ
জন্মভূমি থেকে অর্থ পাচার করা কিংবা কর ফাঁকির স্বর্ণরাজ্য হিসেবে পরিচিত অফশোর ব্যাংক ও কোম্পানীতে টাকা জমা করা অভিযোগ উঠছে হারহামেশা।

কিছুদিন আগে প্যারাডাইস পেপারসে বিভিন্ন দেশের দূর্নীতিগ্রস্থ প্রভাবশালী ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদদের পাশাপাশি ক্ষমতার শীর্ষে থাকা ব্যক্তিদের নাম প্রকাশিত হয়েছে। এর ফলে ঐ দেশেগুলোর সরকার প্রধানকে এর মাশুল দিতে হয়েছে। পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের মতো অনেককে বিদায় নিতে হয়েছে ক্ষমতায় থেকেও। এমনি সময়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার স্থাপিত দৃষ্টান্ত পুরো বাঙালি জাতিকে করেছে গর্বিত।

সম্প্রতি পিপলস এ্যান্ড পলিটিকস নামের একটি আন্তর্জাতিক সংগঠন ১৭৩ টি দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের কর্মকান্ড বিশ্লেষণ করে সৎ নেতৃত্বের একটি তালিকা তৈরী করেছে। তাতে ৩ নম্বরের তালিকায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাম। ১০০ নম্বরের মধ্যে তিনি পেয়েছেন ৮৭ নম্বর প্রথমস্থানে জার্মানীর চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেঁলা মার্কেল পেয়েছেন ৯০ এবং ৮৮ নম্বর পেয়ে দ্বিতীয়স্থানে রয়েছেন সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী লি হুমিয়েন লুং। এতে চতুর্থস্থানে নরওয়ের প্রধানমন্ত্রী ইরানা সোলবার্গ ৮৫ নম্বর এবং পঞ্চম স্থানে ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি ৮১ নম্বর। মাত্র ১০ নম্বরের মধ্যে ৫ জনের অবস্থান। প্রথমস্থান অর্জনকারী সাথে শেখ হাসিনার ব্যবধান মান মাত্র তিন নম্বরের।

যদিও শেখ হাসিনা সরকারের অনেক মন্ত্রী বা সংসদ সদস্যদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দূর্নীতি বা স্বজনপ্রীতির অভিযোগ উঠেছে কিন্তু সততার তালিকায় তার এই অর্জন শুধুই ব্যক্তিগত এবং অতুলনীয়। এজন্য তিনি যতটা গর্বিত তার চেয়ে বেশি গর্বিত বাঙালী জাতি। কারণ তার ধমনীতে প্রবাহিত বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্বপ্ন দ্রষ্টা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রক্ত, যিনি ছিলেন বাঙালির মুক্তির ঠিকানা।

ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় একটি দেশের উন্নয়ন আর অগ্রযাত্রা নির্ভর করে ঐ দেশটির যোগ্য নেতৃত্বের উপর। নেতৃত্বদানকারী ব্যক্তির সততা, দায়িত্ববোধ, কর্তব্য নিষ্ঠা আর সর্বোপরি তাঁর দেশপ্রেমের উপর। দেশ স্বাধীন হবার ৪৬ বছরেও উন্নয়নের সেই কাংখিত লক্ষ্যে এখনো পৌছাতে পারিনি আমরা। কারণ শুধু একটাই যোগ্য ও সৎ নেতৃত্বের অভাব।

৩০ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই বাংলাদেশ বার বার হোচট খেয়েছে ক্ষমতায় পাল বদলে। স্বাধীনতার মাত্র সাড়ে তিন বছরে মাথায় সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশ প্রথম হোচট খায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্ব পরিবারে হারিয়ে। তারপর কারাগারে জাতীয় চার নেতার হত্যাকান্ড, দীর্ঘদিন সামরিক শাসন ও স্বাধীনতা বিরোধী চক্র রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকায় জাতির রন্ধে রন্ধে ঢুকে যায় দূর্নীতি নামক শব্দটি। দূর্নীতির সেই শেকড় গজিয়ে গেছে এখন অনেক দূর। সেই দূর্নীতির আগাছামুক্ত করা এখন অনেক বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ। যার বাস্তবতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি জাতীয় সংসদ অধিবেশনের ভাষনে প্রকাশ করেছেন।

প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় সংসদে বক্তব্য অনুযায়ী দীর্ঘ সমারিক শাসনের সময় কোন ধরনের জবাবদিহিতা না থাকায় দেশে দূর্নীতির শিকড় বহুদুর বিস্তৃত হয়ে পড়ে। ক্ষমতার সঙ্গে ও দূর্নীতির গাঁট ছড়া প্রবলতর হয়। যার প্রমান ক্ষমতাশীল অনেক পরিবারের অবৈধ সম্পদ বিদেশের আদালতে প্রমানীত হয়। ইতোমধ্যে সৌদি আরব সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জিয়ার পরিবারের অর্থ পাঁচারের অভিযোগ গণমাধ্যমে আলোচনা, সমালোচনা ঝড় তুলছে। যা বর্হি বিশ্বে ভাবমূর্তি নষ্ট করেছে বাংলাদেশের।

সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও স্বাধীনতার পর রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় যে সব যুদ্ধাপরাধী হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছেন তাদেরকে বিচারের আওতায় আনতে গিয়ে অনেক প্রতিকূলতা এবং জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দেশের মানুষের সেবা করতে হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। এত প্রতিকূলতার স্বত্ত্বেও সৎ নেতৃত্বে তৃতীয় স্থান অর্জন নিঃসন্দেহে গৌরবের। তাঁর এই অর্জন অনুপাণিত করে বাঙালিকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার।

দূর্নীতি প্রতিরোধে জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন মাথা যখন ঠিক আছে তখন শরীরের অন্যান্য জায়গায় যেটুকু ঘা আছে, তা অচিরেই ঠিক হয়ে যাবে। প্রধানমন্ত্রীর এই বিশ্বাসে আস্থা আছে আমাদেরও। আমরাও চাই সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে যেভাবে জিরো টলারেন্সে প্রধানমন্ত্রীর অবস্থান তেমনি এর পাশাপাশি একইভাবে দূর্নীতির বিরুদ্ধেও অবস্থান নিবেন বঙ্গবন্ধু কন্যা।

সম্প্রতি দলের সংসদীয় কমিটির এক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন জন বিচ্ছিন্ন ও দূর্নীতির অভিযোগ রয়েছে এমন কাউকে আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন দিবে না তার দল। তার এই দৃঢ় প্রত্যয় স্বাগত জানিয়ে বলতে চাই সরকার প্রশাসন এবং দল থেকে দূর্নীতি দূর হলে এর প্রভাব পড়ে রাষ্ট্রের সর্বক্ষেত্রে। দলমত নির্বিশেষে সকল ক্ষমতাবান দূর্নীতিবাজদের শক্ত হাতে দমন করতে দূর্নীতি দমন কমিশনকে আরো শক্তিশালী করাও এখন সময়ের দাবি।

শুধু ব্যক্তি অর্জনে আত্মতুষ্টি নয়, শেখ হাসিনার যোগ্য, সাহসী ও সৎ নেতৃত্বের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে চিরতরে হারিয়ে যাবে দূর্নীতি নামক শব্দটি এই প্রত্যাশা দেশবাসীর। আমরা চাই তৃতীয় নয় আমাদের প্রধানমন্ত্রী দূর্নীতির বিরুদ্ধে তাঁর সংগ্রাম অব্যাহত রেখে সততার শীর্ষে থাকবেন আর দেশবাসীকে নিয়ে যাবেন আত্ম সম্মানবোধের বিশাল উচ্চতায়।

মানিক লাল ঘোষ : সাংবাদিক ও কলামিষ্ট, সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা।

লাইভ রেডিও

Calendar

October 2023
S M T W T F S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031