হরিপদ দত্ত এসেছেন

প্রকাশিত: ১০:৪৬ অপরাহ্ণ, মে ২৮, ২০২৩

হরিপদ দত্ত এসেছেন

 

মুজতবা আহমেদ মুরশেদ

বাংলা ভাষার শক্তিশালী ঔপন্যাসিক হরিপদ দত্ত এসেছেন। খবর পেয়ে ছুটে গেলাম পুরোনো ঢাকায়। জগন্নাথ দাস লেন। ওখানে নতুন দিগন্ত পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক মযহারুল বাবলা ভাই এর আতিথেয়তায় আছেন।
দেখা হতেই একটু মন খারাপ করেই অনুযোগ করলাম, এত বছর পর দেশে এলেন। আমাকে একটা ফোন করতে তো পারতেন।
তাঁর ধরা গলা। মুরশেদ সাহেব, আপনাকে কল না করে পারি! কিন্তু কল করে অপর প্রান্তে ইংরেজীতে একজন বললো, সরি, এটা জার্মান এ্যাম্বেসী।
হায়রে দাদা, আপনার কাজ, আমি তো সেই তেরো সালে জার্মান এম্বেসী ছেড়েছি!
এবার তিনি হাঁফ ছাড়লেন, তাই তো কই। তাইলে কন, আমার কুনো দোষ আছে।
নাহ, নাই।
এরপর উন্মাতাল হাসি। দুজনে দুজনকে পেয়ে প্রাণের হল্লা।
এগারো বছর পর দেশে এলেন । একটা সময় ছিলো দুজনে একসাথে এই নগরীর অলিগলি পার হয়ে ছুটতাম আড্ডায়। দীর্ততর না দেখার পর এ যেনো, ” অনেকদিনের পরে যেনো বৃষ্টি এলো”।
আমাদের পরম শ্রদ্ধেয় এমিরেটস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী সম্পাদিত নতুন দিগন্ত সাহিত্য পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক ছিলেন তিনি। মূলত সিরাজুল ইসলাম স্যারের কারণেই আমার কবিতা ও গল্পের প্রতি তাঁর গভীর আগ্রহ জন্মে। সেই সুবাদে দুজনের নিবিড় বন্ধুত্ব। সুখে, দুখে লক্ষ – কোটি মুহূর্ত পার।
ক্রমে রোগ এবং জীবনযাপনের রূঢ় বাস্তবতায় নুয়ে পড়লেন। আমি আর ঘনিষ্ঠ কজন জানলাম তাঁর ব্যথাতুর বুকের সুতীব্র অভিমান। সীমান্ত পাড়ি নিরবে। ভারতে গিয়ে চিকিৎসা নিলেন । পেছনে রেখে গেলেন বর্ণাঢ্য সাহিত্য সম্ভারের পাঠক, বন্ধু, সুহৃদ।
নানাবিধ যন্ত্রণা এখনো তাঁর পিছু নেয়। তাঁকে ধাওয়া করে। চোখেও ভালো দেখতে পাননা আজকাল। আমাদের সকলের দুর্ভাগ্য, আমরা তাঁর পাশে দাঁড়াতে পারিনি। আমরা কেউ এমন নিখুঁত করে সাহিত্য রচয়িতার পাশে থাকিনা। তবুও তিনি কলম থামাননি। বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করে চলেছেন।
এবং এখনো আগের মতো খোশবু জর্দা দিয়ে পান খান। আমিও তাঁর পানের বাক্সে হামলা করলাম। ভয়ে জর্দা বাদ। বাবলা ভাই সহ পানে আর গল্পে ঘন্টা, ঘন্টা পার।
ভালোবাসা সেই আগের মতো। চিরকাল ভালোবাসা আমার প্রিয়জন হরিপদ দা।
– মুজতবা আহমেদ মুরশেদ
২৮ মে ২০২৩।