২৬শে মার্চ ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ | ১২ই চৈত্র ১৪২৯ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১২:১৮ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ৩, ২০২৩
বগুড়ার হিরো আলম । মাত্র পাঁচ বছরে আগে জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছিল তার ।
কিন্তু এবার বাঘা বাঘা রাজনীতিবিদদের সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করেছেন তিনি । সবশেষ বগুড়া-৪ (নন্দীগ্রাম-কাহালু) আসনে উপ-নির্বাচনে মহাজোটের প্রার্থী একেএম রেজাউল করিম তানসেনের কাছে ৮৩৪ ভোটের ব্যবধানে হেরেছেন।
হিরো আলমকে এ পর্যায়ে আসতে সহযোগিতা করেছেন ওই এলাকার প্রায় সাড়ে ১৬ হাজার নতুন ভোটার। হিরো আলমের চমকে দেওয়া এ ফলাফল সম্পর্কে অনুসন্ধানে উঠে এসেছে
নানা তথ্য ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিগত ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনে বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনে ভোটার ছিল তিন লাখ ১২ হাজার ৮১ জন। পাঁচ বছরের ব্যবধানে এ এলাকায় নতুন ভোটার বেড়ে হয়েছে তিন লাখ ২৮ হাজার ৪৬৯ জন। অর্থাৎ ভোট বেড়েছে ১৬ হাজার ৩৮৮টি। এ ভোটাররা সবাই বয়সে তরুণ। এবারই প্রথম ভোট দেওয়ার সুযোগ পেয়েছেন তারা।
আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলমকে যারা ‘ফলো’ করেন (ফেসবুকে ফলোয়ার ২০ লাখ, ইউটিউবে ১৫ লাখেরও বেশি) তাদের বেশিরভাগই যুবক শ্রেণির। এরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও ইউটিউবে তার নিয়মিত দর্শক। তার ব্যক্তিগত আইডি পরীক্ষা করে মিলেছে এতথ্য। ভোটে দাঁড়ানোর পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যারা তাকে সাহস দিয়েছেন, এগিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। এদের বেশিরভাগই যুবা।
উপজেলার তৈয়বপুর গ্রামের বাবু মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, “হামাকেরে আসনত কত্ত এমপি দেখনু। এবার ‘ফাটাকেষ্টো’ ছবির মতো হামরা ১১ মাসের হিরোকে এমপি দেখতে চাচ্ছুনু। তা দেখতে পান্নু না। হামাকেরে গ্রামেত মেলা ছোলপোল বড় বড় ফোনেত হিরোর গান, চবি দেখে। হামিও তারক্যারে মবাইলতেও দেখি ভালো লাগে।”
বাঁশো গ্রামের তরুণ ভোটার রাব্বি হাসান বলেন, ‘মোবাইল ফোনে হিরো আলমের গান, ছবিগুলো ভালো লাগে। হিরো আলম ভালো ছেলে। এজন্য তাকে একতারা মার্কায় ভোট দিয়েছি।’
হরিহারা গ্রামের কৃষক আল-আমিন। তিনি বলেন, “অনেক ধনী ব্যক্তি শুধু ভোটের সময় ভোট নিতে আসে। জয়ী হওয়ার পর তাদের আর খুঁজে পাওয়া যায় না। তাই এবার ‘গরিবের বন্ধু’ হিরো আলমকে ভোট দিয়েছি।”
বগুড়া-৪ আসনে উপ-নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী (দালান প্রতীক) গোলাম মোস্তফা। হিরো আলম প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এমনিতেই ভোটের উপস্থিতি কম ছিল। আর হিরো আলমকে তরুণ ভোটাররাই বেশি ভোট দিয়েছে। ইউটিউবে যারা ভক্ত রয়েছে তারাও তাকে ভোট দিয়েছে। কারণেই এত ভোট পেয়েছে।’
নন্দীগ্রামের বাসিন্দা আমিনুল, কলেজছাত্র সবুজ, মিনহাজসহ আরও অনেকেই বলেছেন হিরো আলমকে ভালো লাগার কথা। তাদের মতে, রাজনীতিবিদ ছাড়া সাধারণ একজন মানুষ সংসদে গেলে তাদের মুখপাত্র হিসেবে কাজ করবেন। এ কারণে তাদের মতো অনেক তরুণই ভালোবেসে হিরো আলমকে ভোট দিয়েছেন। তাকে বিজয়ীর বেশে দেখতে চেয়েছেন।
নন্দীগ্রাম উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন রানাও মনে করেন, হিরো আলমের এত ভোট পাওয়ার পেছনে নতুন ভোটারদের অবদান রয়েছে। এরা সবাই স্মার্টফোন ব্যবহার করেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হিরো আলমকে অনুসরণ করেন। এ কারণে তারা চোখবন্ধ করে ভোট দিয়েছেন।
নন্দীগ্রাম এলাকাটিতে বিএনপি ও জামায়াতের তৎপরতা বেশি। তারপরও এখানে কোনো রাজনৈতিক দলের পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়াই হিরো আলম ভোট বেশি পেয়েছেন বলে দাবি করেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি আলাউদ্দিন সরকার।
তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা নিজেরাও অবাক হয়েছি। যদিও এই ভোটটি নিয়ে আমাদের আগ্রহ ছিল না। কিন্তুু হিরো আলমের প্রতিদ্বন্দ্বী হওয়াটাকে আমরা স্বাগত জানিয়েছি।’
এদিকে বগুড়া-৪ আসনের আলোচিত স্বতন্ত্র প্রার্থী হিরো আলমের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। বৃহস্পতিবার (২ ফেব্রুয়ারি) ফোনে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে তিনি এ নির্দেশ দেন।
নির্বাচনে পরাজয়ের পর বৃহস্পতিবার সারাদিন বাড়ি থেকে বের হননি হিরো আলম। বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে তিনি ফলাফলের কপি নিতে জেলা নির্বাচন অফিসে যান। সেখানে হিরো আলমকে মিষ্টিমুখ করান জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা মাহমুদ হাসান। তিনি স্বীকার করেন যে, প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিরো আলমের অভিযোগ খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছেন।
সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা মাহমুদ হাসান বলেন, ‘যেহেতু হিরো আলম ফলাফল নিয়ে অভিযোগ করে সংবাদ সম্মেলন করেছেন এবং টিভি-টকশোতেও একই অভিযোগ করেছেন, সেটা দেখে সিইসি স্যার আমাকে ফলাফল পুনরায় যাচাইয়ের জন্য আজ সকালে ফোনে নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে ফলাফলের সব কপি ঢাকায় পাঠাতে বলেন।’
তিনি আরও বলেন, পরে আমরা ফলাফল আবার যাচাই করে দেখেছি সব ঠিক আছে। আমরা তাকে ইভিএম মেশিনের ফলাফলের কপি এবং কেন্দ্রে প্রিসাইডিং কর্মকর্তার সই করা ফলাফলের কপি দিয়েছি।
এ প্রসঙ্গে হিরো আলম বলেন, ‘বগুড়ার দুই আসনে উপ-নির্বাচনে আমি ভোট করেছি। বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) সব ভোটকেন্দ্রে আমি নির্বাচিত হয়েছি। ষড়যন্ত্র করে আমাকে হারিয়ে দেওয়া হয়েছে। এর বিরুদ্ধে আমি হাইকোর্টে রিট করবো।’
তিনি বলেন, আইনের প্রতি আমি শ্রদ্ধাশীল। একশ্রেণির মানুষ আমাকে ‘স্যার’ ডাকতে চান না। তারাই ষড়যন্ত্র করে আমার ফল পরিবর্তন করেছেন।
এ সরকারের অধীনে আর সুষ্ঠু ভোট সম্ভব নয় বলেও ক্ষোভ প্রকাশ করেন আলোচিত এ প্রার্থী। তিনি বলেন, ‘এ পরিস্থিতি থাকলে আমি আর নির্বাচন করবো না। আমার খালা এরুলিয়া উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিয়েছিলেন। খালা তিনবার একতারা চাপ দিয়েছেন তবে প্রতিবারই শুধু নৌকার ছবি ভেসে উঠতে দেখেছেন।’
১৯৮৫ সালের ২০ জানুয়ারি বগুড়া জেলায় জন্মগ্রহণ করেন আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলম। তার বাবার নাম আব্দুর রাজ্জাক। মা আশরাফুন বেগম।
হিরো আলম প্রথম দিকে নিজ গ্রাম এরুলিয়ায় সিডি বিক্রির কাজ করতেন। পরবর্তী সময়ে ডিস ক্যাবল ব্যবসায় নামেন। ক্যাবল সংযোগের ব্যবসা চলাকালে শখের বশে সংগীত ভিডিও নির্মাণ শুরু করেন। ওই ভিডিও ইউটিউবে আপলোড করার পর থেকে আলোচনায় চলে আসেন হিরো আলম।
RED TIMES LIMITED
116-117, Concord Emporium,
Kataban, Dhaka-1205.
Mobile: 017111-66826
Email: redtimesnews@gmail.com