২রা অক্টোবর ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ | ১৭ই আশ্বিন ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৪:৩৬ পূর্বাহ্ণ, জানুয়ারি ১৬, ২০১৮
২০১২ সালের ৮ জুলাই রাতে ছাত্রলীগ ও ছাত্রশিবিরের মধ্যকার সংঘর্ষের সময় আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছিল এমসি কলেজ ছাত্রাবাসের ৩টি ব্লকের ৪২টি কক্ষ। এ ঘটনায় পরদিনই ছাত্রাবাসের সুপার বশির আহমদ বাদী হয়ে শাহপরান থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। আলোচিত এ মামলার রহস্য উদ্ঘাটন করতে আদালতের নির্দেশে তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয় সিলেটে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডিকে।
সিআইডি ২০১৩ সালের ৩১ অক্টোবর আদালতে প্রথমবার চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। তবে আদালত এ প্রতিবেদন গ্রহণ না করে আবার তদন্তের নির্দেশ দেয়। এরপর আবার তদন্ত করে সিআইডি ২০১৫ সালের ৯ আগস্ট ফের আদালতে প্রতিবেদন জমা দেয়। ওই প্রতিবেদনও আদালত গ্রহণ না করে পুলিশের একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের মাধ্যমে পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দেয়। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ও বিশেষায়িত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) তদন্তে অপরাধী শনাক্ত না হওয়ায় আলোচিত এ মামলার ভবিষ্যৎ নিয়ে সংশয় দেখা দেয়। কোনো তদন্তেই ছাত্রলীগ নেতাদের নাম আসেনি।
পরে মামলার জট খুলতে গত বছরের ৩১ মে বিচার বিভাগীয় তদন্তের আদেশ দেন সিলেটের অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট উম্মে সরাবন তহুরা। পুলিশ, সিআইডি ও পিবিআইয়ের তদন্তের পর বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি সাক্ষীদের বক্তব্য, ভিডিও ফুটেজ, স্থিরচিত্র, জেলা প্রশাসন গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে ছাত্রাবাসে আগুন দেয়ার জন্য ছাত্রলীগ ও ছাত্রশিবিরের বিরোধকেই দায়ী করে প্রতিবেদন দেয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘প্রথমত ছাত্রলীগের কর্মী উজ্জ্বল আহমদকে ছাত্রশিবিরের কর্মীরা গুরুতর জখম করায় তাৎক্ষণিক উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। পরে ছাত্রাবাসে অগ্নিসংযোগ করা হয়। মৌখিক ও দালিলিক সাক্ষ্য বিচার-বিশ্লেষণে এটা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত।’ ছাত্রাবাসে আগুন দিতে গ্যালনে করে পেট্রোল ব্যবহার করা হয় বলেও জানানো হয় বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে। পরে ছাত্রাবাসের কক্ষ লুটপাটও হয়।
গত ১৬ নভেম্বর সিলেটের অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন আদালতের বিচারক উম্মে সরাবন তহুরার আদালতে ২৯ জনের সংশ্লিষ্টতা পাওয়ার বিষয় উল্লেখ করে প্রতিবেদন জমা দেয় বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি। আদালত এই ২৯ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। তদন্তে সংশ্লিষ্টতা পাওয়া ২৯ জনের মধ্যে ছাত্রলীগের ১০ জন ছাড়া বাকি ১৯ জন ছাত্রশিবিরের। তারা হলেন-লায়েক আহমেদ, সিদ্দিক আহমেদ ইউসুফ, জহিরুল ইসলাম, আক্তারুল ইসলাম, জসিম উদ্দিন, আসাদুজ্জামান শাহীন, মোহাম্মদ বিন মামুন বুলবুল, আওলাদ, আশরাফ আহমেদ শিপন, নজরুল ইসলাম, অলিউল্লাহ ওরফে ওলিউর রহমান, খুরশেদ আলম, বাছিদ ওরফে আবদুল বাছিদ, আবদুস সালাম, ইমতিয়াজ রফিক চৌধুরী, আবদুল্লাহ ফারুক, কয়েছ ওরফে কয়েছুজ্জামান তালুকদার, আবু রেহান, রুবেল।
সিলেটের ঐতিহ্যবাহী মুরারীচাঁদ (এমসি) কলেজের ছাত্রাবাসে অগ্নিসংযোগের সঙ্গে জড়িত সাবেক ১০ ছাত্রলীগ নেতা স্থায়ী জামিন পেয়েছেন। ১৫ জানুয়ারি, সোমবার দুপুরে সিলেটের চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুজ্জামান হিরো এ জামিন মঞ্জুর করেন। আদালতের এপিপি অ্যাডভোকেট মাহফুজুর রহমান তথ্যটি নিশ্চিত করে সংবাদমাধ্যমকে জানান, এর আগে গত ৪ ডিসেম্বর ১০ আসামি উচ্চ আদালতে হাজির হয়ে ৪২ দিনের জামিন লাভ করে। সে সময় আদালত আসামিদের ৪২ দিনের মধ্যে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন। নির্দেশনা অনুযায়ী তারা ১৫ জানুয়ারি, সোমবার নিম্ন আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করলে আদালত তা মঞ্জুর করেন।
জামিন পাওয়া ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আদালত আমাদের স্থায়ী জামিন দিয়েছেন, এখন শুধু আদালত ডাকলে হাজিরা দিতে হবে।
জামিনপ্রাপ্ত সাবেক ছাত্রলীগ নেতারা হলেন-সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি পঙ্কজ পুরকায়স্থ, সিলেট সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও বর্তমানে মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক দেবাংশু দাস মিঠু, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. আলমগীর হোসেন, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম, সাবেক সদস্য সৌরভ দাস, বাবলা, মো. আতিকুর রহমান, মৃদুলকান্তি সরকার এবং আবু সরকার।
আদালতে তাদের পক্ষে জামিন আবেদন করেন সিনিয়র আইনজীবী রেজাউল করিম। এ সময় জেলা বারের আওয়ামীপন্থী আইনজীবীরাও উপস্থিত ছিলেন।
RED TIMES LIMITED
116-117, Concord Emporium,
Kataban, Dhaka-1205.
Mobile: 017111-66826
Email: redtimesnews@gmail.com