ঢাকা ১৭ই সেপ্টেম্বর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২রা আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৪ই রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি


৪ কোটি ৬১ লাখ ৭৫ হাজার ৪৫২ টাকা ক্ষতিপূরণ

redtimes.com,bd
প্রকাশিত ডিসেম্বর ৩, ২০১৭, ০৪:৫৬ অপরাহ্ণ
৪ কোটি ৬১ লাখ ৭৫ হাজার ৪৫২ টাকা ক্ষতিপূরণ

মুক্তিযুদ্ধের চলচ্চিত্র নির্মাতা তারেক মাসুদের মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনায় তার পরিবারকে ৪ কোটি ৬১ লাখ ৭৫ হাজার ৪৫২ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আদেশ আদালতের ।

মোটরযান অধ্যাদেশ ১৯৮৩ অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ চেয়ে তারেক মাসুদের স্ত্রী ক্যাথরিন মাসুদের করা এক মামলায় বিচারপতি জিনাত আরা ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের হাইকোর্ট বেঞ্চ ০৩ ডিসেম্বর রোববার সকালে এই রায় দেয়।

এই টাকার মধ্যে ইনস্যুরেন্স কোম্পানি দেবে ৮০ হাজার টাকা, বাসচালক দেবেন ৩০ লাখ এবং বাকি ৪ কোটি ৩০ লাখ ৯৫ হাজার ৪৫২ টাকা তিন বাস মালিককে সমান ভাগ করে দিতে হবে। অর্থাৎ প্রত্যেক মালিককে দিতে হবে ১ কোটি ৪৩ লাখ ৬৫ হাজার ১৫১ টাকা।

ক্ষতিপূরণের এই অর্থ পাবেন তারেক মাসুদের স্ত্রী ক্যাথরিন মাসুদ, তাদের ছেলে নিষাদ মাসুদ এবং তারেকের মা নুরুন নাহার।

২০১৩ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরা মানিকগঞ্জ জেলা জজ আদালতে মোটরযান অরডিন্যান্সের ১২৮ ধারায় বাস মালিক, চালক এবং ইনস্যুরেন্স কোম্পানির বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণ চেয়ে পৃথক দুটি মামলা করেন। পরবর্তী সময়ে সংবিধানের ১১০ অনুচ্ছেদ অনুসারে মামলা দুটি হাইকোর্টে বদলির নির্দেশনা চেয়ে আবেদন করেন বাদীরা। নিম্ন আদালত থেকে মামলা দুটি স্থানান্তরে সংবিধানের ১১০ অনুচ্ছেদ অনুসারে হাইকোর্টে ওই আবেদন দুটি করা হয়। তারেক মাসুদের স্ত্রী ক্যাথেরিন মাসুদ এবং মিশুক মনিরের স্ত্রী কানিজ এফ কাজী ও তাদের ছেলে ২০১৩ সালের ১ অক্টোবর হাইকোর্টে ওই দুটি আবেদন করেন। যার প্রাথমিক শুনানি নিয়ে একই বছরের ৩ অক্টোবর হাইকোর্ট রুল দেন।

রুলে সংবিধানের ১১০ অনুচ্ছেদ অনুসারে মামলা দুটি কেন উচ্চ আদালতে বদলি করা হবে না—তা জানতে চাওয়া হয়। পাশাপাশি মামলা দুটির নথি তলব করা হয়। রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১৪ সালের ২৯ অক্টোবর মানিকগঞ্জ জেলা ও মোটর ক্লেইমস ট্রাইব্যুনালে করা মামলা দুটি হাইকোর্টে বদলির আবেদন মঞ্জুর করে রায় দেন হাইকোর্ট। পরবর্তী সময়ে বিচারপতি জিনাত আরার নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চে বিষয়টি শুনানির জন্য পাঠান প্রধান বিচারপতি।

রোববার হাই কোর্টে চুয়াডাঙ্গা ডিলাক্স পরিবহনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী আব্দুস সুবহান তরফদার। বীমা কোম্পানি রিলায়েন্স ইন্সুরেন্স কোম্পানির পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার ইমরান এ সিদ্দিকী, ব্যারিস্টার এহসান এ সিদ্দিকী, শিশির মনির ও সৈয়দ মুহাম্মদ বুরহান উদ্দিন।

তারেক মাসুদের পরিবারের পক্ষে শুনানি করেন ড. কামাল হোসেন। সঙ্গে ছিলেন ব্যারিস্টার সারা হোসেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ইসরাত জাহান।

বিচারপতি জিনাত আরা ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের বেঞ্চ এ মামলার রায় ঘোষণা শুরু করে গত বুধবার সকালে। বুহস্পতিবার ও রোববার দুপুর পর্যন্ত রায় পড়া চলে এবং এরপর আদালত ক্ষতিপূরণের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে।

মিশুক মুনীর মিশুক মুনীর রায়ের পর সারা হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, দীর্ঘ পাঁচ বছরের লড়াইয়ের আজ সমাপ্তি টানা হল। মৃত্যুর জন্য ক্ষতিপূরণ দাবি করে তারেক মাসুদের স্ত্রী, ছেলে ও মা মামলাটি করেছিলেন। আজকে রায় পেয়েছি।

রায়ের বরাত দিয়ে এই আইনজীবী বলেন, স্বামীর স্নেহ বঞ্চিত হওয়ায় এবং স্বামী-স্ত্রীর প্রাকৃতিক জীবন থেকে বঞ্চিত হওয়ায় এ ক্ষতিপূরণের প্রথম দাবিদার তারেক মাসুদের স্ত্রী ক্যাথরিন মাসুদ। যত্ন, সুরক্ষা, পিতৃস্নেহ থেকে বঞ্চিত হওয়ায় দ্বিতীয় দাবিদার তারেক মাসুদের ছেলে নিষাদ মাসুদ এবং সামাজিক নির্ভরতা থেকে বঞ্চিত হওয়ায় তারেক মাসুদের মা নুরুন নাহার এ ক্ষতিপূরণের তৃতীয় দাবিদার। তারা এ টাকাটা ক্ষতিপূরণ হিসেবে পাবেন।

রিলায়েন্স ইন্সুরেন্স কোম্পানির আইনজীবী শিশির মনির সাংবাদিকদের বলেন, রায়ের অনুলিপি পেলে তা বিশ্লেষণ করে তারা পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন।

সড়ক দুর্ঘটনায় যারা কাছের মানুষদের হারিয়েছে, তাদের সবার প্রতি সমবেদনা জানিয়ে ক্যাথরিন মাসুদ রায়ের পর বলেন, এ রায়ের মধ্য দিয়ে আইনগতভাবে এটা স্বীকৃত হল যে, তথাকথিত দুর্ঘটনা আসলেই দুর্ঘটনা নয়। এর পেছনে চালক ও কোম্পানির দায় আছে। এমনকি ইন্সুরেন্স কোম্পানিরও দায় আছে। এখন থেকে আশা করি অনেকেই ক্ষতিপূরণ পাবে।

মানিকগঞ্জের সেই দুর্ঘটনায় মিশুক মনিরের স্ত্রী মঞ্জুলী কাজী ও ছেলে সুহৃদ মুনীরের করা মামলাটি আগামী ৪ ফেব্রূয়ারি হাই কোর্টে শুনানির জন্য রাখা হয়েছে।

২০১৩ সালে মুক্তির গান ও মাটির ময়না চলচ্চিত্রের জন্য আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদ তখন তার নতুন ছবি ‘কাগজের ফুল’ এরশুটিং শুরুর কাজ করছিলেন। সাংবাদিকতার সাবেক শিক্ষক মিশুক মুনীর তখন টেলিভিশন চ্যানেল এটিএন নিউজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। কাগজের ফুল’ এর লোকেশন দেখতেই তারা মানিকগঞ্জে গিয়েছিলেন।

তারেক মাসুদের প্রোডাকশন ম্যানেজার ওয়াসিম ও কর্মী জামাল এবং মাইক্রোবাসের চালক মুস্তাফিজও নিহত হন ওই দুর্ঘটনায়।

আহত হন ওই মাইক্রোবাসে থাকা তারেকের স্ত্রী ক্যাথরিন মাসুদ, চিত্রশিল্পী ঢালী আল-মামুন ও তার স্ত্রী দিলারা বেগম জলি এবং তারেকের প্রোডাকশন ইউনিটের সহকারী সাইদুল ইসলামও।

ওইদিন মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার জোকা এলাকায় ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে সড়ক দুর্ঘটনার সময় এই গাড়িতেই ছিলেন তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীর। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে জনসচেতনতা তৈরিতে সেই গাড়ি দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তৈরি করা হয়েছে ‘সড়ক দুর্ঘটনা স্মৃতি স্থাপনা’।

সংবাদটি শেয়ার করুন

September 2024
S M T W T F S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
2930