এসবিএন নিউজ, হোসাইন আহমদ সুজাদ: সিলেট বিএনপির সম্মেলন ৬ ফেব্রুয়ারীকে ঘিরে চাঙ্গা হয়েছেন সিলেট জেলা ও মহানগর বিএনপির নেতারা। ইতিমধ্যে জেলা ও মহানগরে শীর্ষ পর্যায়ে নেতৃত্বের জন্য দৌড়ঝাপ শুরু করেছেন মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। এতোদিন ঝিমিয়ে থাকা সিলেট বিএনপিকে চাঙ্গা করতে কেন্দ্রীয় বিএনপি আগামী ৬ ফেব্রুয়ারী সিলেট জেলা ও মহানগর বিএনপির কাউন্সিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
চলমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সাংগঠনিকভাবে নতুন উদ্যমে ঘুরে দাঁড়াতেই এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। গত ২ বছর যাবত চলছে জেলা এবং মহানগর বিএনপির আহবায়ক কমিটির কার্যক্রম। এই আহবায়ক কমিটি অনেক ক্ষেত্রে সফলতা অর্জন করলেও সরকার বিরোধী আন্দোলনে উল্লেখযোগ্য কোন ভূমিকা না থাকায় হতাশ হয়ে যান তৃণমুল নেতা কর্মীরা।
তবে এবারের সম্মেলনে ত্যাগী ও দলের নিবেদিত প্রাণদের যথাযথ মূল্যায়নের মাধ্যমে যোগ্য নেতৃত্বে সঠিক নেতাদের স্থান দেওয়া হবে বলে ধারনা নেতা কর্মীদের। যার ফলে সম্মেলনে চমক হিসেবে থাকছেন ৯০’র স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন ও বিএনপির বিভিন্ন দূঃসময়ের ত্যাগী ও পরিক্ষীত সাবেক ছাত্রদলের একঝাঁক নেতৃবৃন্দ।
এমনকি দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকেও যারা বিগত দিনে আন্দোলনে কোন ভূমিকা পালন করেননি তাদেরকে কাউন্সিলের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের গোপন নির্দেশেই বাদ দেয়া হবে।
এ সকল অযোগ্য ও দলীয় গুপ্তচরদের নামের তালিকাও আছে কেন্দ্রীয় বিএনপির কাছে। কিন্তু সিলেটের বিভিন্ন উপজেলায় দলীয় লেবাসধারী গুপ্তচররা আওয়ামীলীগের এজেন্ট হয়ে নানা পর্যায়ে কোন্দল সৃষ্টি করে রেখেছে, তাদেরকেও রাখা হয়েছে কেন্দ্রীয় মাইনাস ফর্মূলার ব্লাক লিষ্টে।
এবারের জেলা বিএনপি সম্মেলনে সভাপতি পদের জন্য লড়বেন সাবেক এমপি দিলদার হোসেন সেলিম, জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট আব্দুল গফ্ফার, মুক্তিযোদ্ধা দল কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রাজ্জাক, কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য আবুল কাহের শামীম।
সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য লড়বেন কেন্দ্রীয় সেচ্ছাসেবক দলের সহ-সভাপতি এডভোকেট শামসুজ্জামান জামান, সাবেক জেলা ছাত্রদলের সভাপতি এমরান আহমদ চৌধুরী, জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আলী আহমদ।
সাংগঠনিক সম্পাদক পদের জন্য লড়বেন কেন্দ্রীয় ছাএদলের সাবেক সহ-সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান পাপলু জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রব চৌধুরী ফয়সল, দক্ষিণ সুরমা উপজেলা বিএনপির নির্বাচিত সাবেক সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম তাজুল, ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সাবেক সহ-সভাপতি আব্দুল আহাদ খান জামাল (বর্তমানে কারাঘারে) ও ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সদস্য এডভোকেট হাসান পাটোয়ারি রিপন।
মহানগর বিএনপির কাউন্সিলে সভাপতি পদের জন্য লড়বেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য ডা.শাহরিয়ার হোসেন চৌধুরী, মহানগর বিএনপির সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি নাসিম হোসাইন, মহানগর বিএনপির সাবেক সাধারন সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম জালালি পংকি।
সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য লড়বেন কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি ও জেলা ছাত্রদলের সাবেক সফল সভাপতি ও সিলেট রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি সাবেক সাধারন সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম, সিলেট সিটি কাউন্সিলর ফরহাদ চৌধুরী শামীম, সিটি কাউন্সিলর রেজাউল হাসান কয়েস লোদী।
সাংগঠনিক সম্পাদক পদে লড়বেন সিলেট সিটি কাউন্সিলর সৈয়দ তোৗফিকুল হক হাদি, সাবেক মহানগর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক হুমায়ুন কবীর শাহিন, মিফতা সিদ্দীকি, এমদাদ হোসেন চৌধুরী, আজমল বক্ত সাদেক, সাবেক সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও কারাবন্দি হুমায়ুন আহমদ মাসুক।
কেন্দ্রীয় বিএনপির একাধিক নেতা সিলেট বাংলা নিউজকে জানান, সিলেট বিএনপির ব্যর্থ নেতাদেরকে গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে মাইনাস করতেই কাউন্সিলের মাধ্যমে শুদ্ধি অভিযান চালানো হবে। কাউন্সিলের মাধ্যমেই রাজপথের যোগ্য সৈনিকদের বেছে নিতে চায় কেন্দ্রীয় বিএনপি নেতারা।
জানা যায়, ২০১৪ সালের এপ্রিল মাসে এডভোকেট নূরুল হককে আহবায়ক করে জেলা কমিটি ও একই বছর ডা. শাহরিয়ার হোসেন চৌধুরীকে আহবায়ক করে ৩৩ সদস্য বিশিষ্ট মহানগর কমিটি ঘোষণা করা হয়।
এরপর জেলা বিএনপি সিলেটের ১৩টি উপজেলা ও ৪টি পৌরসভা মিলিয়ে আহবায়ক কমিটি এবং মহানগর বিএনপি গত বছর একি দিনে সিলেট নগরীর ২৭টি ওয়ার্ডের আহবায়ক কমিটি ঘোষণা করে। যা সিলেট বিএনপি’র ইতিহাসে প্রথম ওয়ার্ড কমিটি।
২০০৯ সালের ২৫ নভেম্বর কাউন্সিলের মাধ্যমে এম ইলিয়াস আলীকে সভাপতি, এডভোকেট আব্দুল গাফফার সাধারণ সম্পাদক ও আলী আহমদকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় বিএনপি।
পরবর্তীতে ২০০৯ সালের ৮ নভেম্বর এম এ হক সভাপতি, আব্দুল কাইয়ুম জালালি পংকি সাধারণ সম্পাদক ও রেজাউল হাসান কয়েস লোদীকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে মহানগর বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করেছিল কেন্দ্রীয় বিএনপি।
এরপর সিলেটের রাজনীতিতে সাইফুর গ্রুপ ও ইলিয়াস গ্রুপ নামে দু’টি ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। অগোছালো হয়ে পড়ে সিলেট বিএনপি।
এবারের কাউন্সিলে জেলা বিএনপির ১৩টি উপজেলা ও ৪টি পৌরসভার ১৭টি ইউনিটের ৩ জন করে ৫১ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন পছন্দের প্রার্থীদেরকে।
একই ভাবে সিলেট নগরীর ২৭টি ওয়ার্ডের ৮১ জন ভোটার একি দিনে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।
এদিকে সিলেট মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব বদরুজ্জামান সেলিম সিলেট বাংলা নিউজ কে বলেন, শান্তিপূর্ণভাবে প্রত্যেক ভোটার যাতে তাদের মূল্যবান ভোট প্রয়োগ করতে পারে এ জন্য যতোটুকু পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন তা করবে মহানগর বিএনপি।
অনুষ্টিতব্য কাউন্সিলে প্রধান অতিথি হিসেবে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ কেন্দ্রীয় বিএনপির শীর্ষপর্যায়ের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থাকবেন বলে জানিয়েছে বিএনপি একাধিক সূত্র।
সংবাদটি শেয়ার করুন