অনলাইনে ৭৩ % নারী হয়রানির শিকার

প্রকাশিত: ৬:০৮ পূর্বাহ্ণ, ডিসেম্বর ৩, ২০১৫

অনলাইনে ৭৩ % নারী হয়রানির শিকার

এসবিএন ডেস্ক: ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম সম্প্রতি বলেছেন বাংলাদেশে যেসব নারী ইন্টারনেট ব্যবহার করেন তাদের ৭০ শতাংশের বেশি নানাভাবে অনলাইনে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। এক্ষেত্রে বেশিরভাগ ঘটনাই ঘটছে ফেসবুককে কেন্দ্র করে। বিষয়টি মোকাবেলার জন্য বাংলাদেশ সরকার ফেসবুকের সাথে বৈঠক করবে।

বাংলাদেশে বর্তমানে এক কোটি সত্তর লাখ ফেসবুক ব্যবহারকারী রয়েছে। এদের মধ্যে নারী ব্যবহারকারীর সংখ্যা কত সে বিষয়ে হালনাগাদ কোন পরিসংখ্যান নেই। কয়েকবছর আগে এক পরিসংখ্যানে বলা হয়েছিল বাংলাদেশে যারা ফেসবুক ব্যবহার করছেন তাদের মধ্যে ২২ শতাংশ নারী।

কয়েক বছর আগে চট্টগ্রামের নাসিমা আক্তারের (ছদ্মনাম) বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। এরপর তিনি আরেকজনকে বিয়ে করেন। সংসারের শুরুটা ভালোই চলছিল। কিন্তু দ্বিতীয় বিয়ের পর তার প্রথম স্বামী নাসিমা আক্তারের কিছু ব্যক্তিগত ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে দেন। এজন্য তার প্রথম স্বামী নাসিমা আক্তারের নামেই আরেকটি ভুয়া ফেসবুক এ্যাকাউন্ট খুলেছেন।

কেউ হয়তো ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠালো কিন্তু আমি অ্যাকসেপ্ট (গ্রহণ) করলাম না। তখন কেউ কেউ আমার ম্যাসেজ বক্সে বাজে মেসেজ পাঠায়।

এ নিয়ে নাসিমা আক্তার থানায় মামলাও করেছেন। সাবেক স্বামী, প্রেমিক কিংবা সম্পূর্ণ অপরিচিত ব্যক্তির মাধ্যমে ফেসবুকে হয়রানির শিকার হচ্ছেন অনেকেই।

ঢাকার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী সাদিয়া ইয়াসমিন বলেন ফেসবুকে তিনি এমন কিছু পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন যা অপ্রীতিকর।

তবে তার অনেক বান্ধবী তারচেয়েও বেশি নিপীড়নের শিকার হয়েছে বলে জানালেন সাদিয়া ইয়াসমিন।

তিনি বলেন, “কেউ হয়তো ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠালো কিন্তু আমি অ্যাকসেপ্ট (গ্রহণ) করলাম না। তখন কেউ কেউ আমার ম্যাসেজ বক্সে বাজে মেসেজ পাঠায়।”

অনলাইনে যেসব নারী হয়রানির শিকার হচ্ছেন তাদের কেউ কেউ অভিযোগ দায়ের করতে আসেন ঢাকার তেজগাঁওতে উইমেন সাপোর্ট এন্ড ইনভেস্টিগেশন সেন্টারে।

এখানকার অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার আসমা সিদ্দিকা মিলি বলছেন তিনি প্রতিমাসে গড়ে ১৫টির মতো অভিযোগ পান। অভিযোগ গ্রহণের পর সেগুলো তদন্তের জন্য গোয়েন্দা পুলিশের সহায়তা নেয়া হয় বলে তিনি জানান।

সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে নারীদের হয়রানি নিয়ে গবেষণা করেন সমাজবিজ্ঞানী সাদেকা হালিম। তিনি বলেন ফেসবুকে ছবি কিংবা ভিডিওকে কেন্দ্র করেই এ ধরনের হয়রানি বেশি হচ্ছে।

সাদেকা হালিম বলেন , “ অনেক নারী ফেসবুকে ছবি আপলোড করছে। কিন্তু কারো যদি সেই নারী সম্পর্কে বিদ্বেষ সৃষ্টি হয়, তখন তার ছবিটা ফটোশপ করে পর্ণো তৈরি করা হচ্ছে। ”

অনেক নারী ফেসবুকে ছবি আপলোড করছে। কিন্তু কারো যদি সেই নারী সম্পর্কে বিদ্বেষ সৃষ্টি হয়, তখন তার ছবিটা ফটোশপ করে পর্ণো তৈরি করা হচ্ছে।

বাংলাদেশে অনলাইন বা ফেসবুকের মাধ্যমে হয়রানি বন্ধ করতে পুলিশের প্রযুক্তিগত সক্ষমতা এবং দক্ষতা কতটা রয়েছে সেটি নিয়ে অনেকের সন্দেহ আছে।

তবে প্রযুক্তির বাইরেও এ বিষয়টি মোকাবেলা করতে হলে নারীদের আরো বেশি সচেতন হওয়া দরকার বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞানের অধ্যাপক সুরাইয়া পারভীন।

সরকারি পরিসংখ্যান বলছে ফেসবুকে যেসব নারী হয়রানির শিকার হয় তাদের মধ্যে মাত্র তিনভাগের একভাগ আনুষ্ঠানিক অভিযোগ করতে চায়। বাকিরা বিষয়টিতে পুলিশের কাছে কোন অভিযোগ করতে চায়না।

খবর বিবিসির।