অভিশাপ দাও তাদের

প্রকাশিত: ৫:১২ অপরাহ্ণ, মে ২৪, ২০১৮

অভিশাপ দাও তাদের

রুমা মোদক

হায় জীবন,যে জীবন শিল্পের, মঞ্চের,দোয়েল ফড়িংয়ের সাথে তার হয় নাকো দেখা…
না, দেখা হয়না। সত্যি হয়না। যে জীবন শিল্পের,মঞ্চের কিংবা মিডিয়ার তাঁকে আলো নিবে গেলে দাঁড়াতে হয় রুক্ষ ইট পাথরের পথে, উদোম ভাতের হাড়ি আর মেকাপ মুছে ফেলা মুখভর্তি ব্রন আর একনেগুলোর সামনে। মঞ্চের আলোর সামনে বসে থাকা সুধীজন জানেনা সন্ধান উজ্জ্বল আলোর নিচে হাসা, কাঁদা, মাতিয়ে রাখা মানুষগুলোর হাভাতে জীবন আর যুদ্ধের কথা!
তাজিনের সাথে খুব গাঢ় বন্ধুত্ব ছিলো না আমার। মঞ্চের সহযাত্রী হিসাবে হয়তো দু একদিন সেগুনবাগিচার শিল্পকলায় পরিচয়, আবার ভুলে যাওয়া আবার পরিচয়।
কিন্তু তারও আগে তাজিন আমাদের কাছে টেলিভিশনের রঙীন জগতের রঙীন তারকা।
আহা! রাঙানো স্বপ্নালু জীবন! আহারে !!
তাজিনের মৃত্যুর পর জানা গেলো কী বিষাদ বেদনার অন্ধকার গ্রাস করে ছিলো তাঁর ব্যক্তিযাপন ।
বাদ দিলাম শৈশবের পিতৃহীন সংগ্রামের কথা। মাঝখানে এক তারকার হঠাৎ ধুমকেতুর মতো জ্বলে ওঠা জ্বলজ্বলে জীবন।
বড় চতুর কৌশল প্রয়োজন এই জীবনের,আখের গোছানোর মতো কৌশল।
নইলে শিল্পী, যার মেকাপ করা মুখের জৌলুস রাতে ঘুমাতে দেয়না কতো শতো জনকে, তাঁর মা দুলাখ টাকা চেক বাঊন্সের দায়ে জেল খাটে।আর হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করা দরবেশ স্যাটেলাইটের গৌরব গায়ে মেখে উন্নয়নের জয়গান গায়। এদেশে সাঈদী মায়ের জানাজার জন্য প্যারোলে মুক্তি পায়, আর তাজিনের প্রাণহীন দেহ যায় কাশিমপুর কারাগারে মাকে দেখতে।
যতো পড়ছি, বিমর্ষ হচ্ছি, যতো পড়ছি অস্তিত্বের সংকটে পড়ছি। আমরা যারা আখের গোছাতে জানিনা শিল্পের নামে আমরা সবাই বুঝি একেকজন ‘তাজিন’।
ফেসবুকের পাতা ভেসে যাচ্ছে মাতমে, তুমি ভালো থেকো পরপারে। আহা!
আমি বলি, তাজিন তুমি ভালো থেকো না। প্রাণভরে অভিশাপ দিও আমাদের মুখোশ পরা মানুষগুলোকে।যাদের কাছে তোমার প্রয়োজন শুধুই প্রয়োজনের। যারা তোমার প্রয়োজনের খবর রাখেনি কিংবা রেখেও বেমালুম অস্বীকার পুর্বক জারি রেখেছে নিজের ভোগ-বিলাস।
যাদের কাছে সোকল্ড মিডলক্লাস মূল্যবোধ তুচ্ছ করে তোমার আমার উদোম ভাতের হাড়িটা দেখিয়ে বলতে পারি না, এই তোমার শিল্পের বড়াই, এই তোমার উন্নয়নের জোয়ার! অভিশাপ দাও তাদের।