আকাশ দিগন্ত

প্রকাশিত: ৫:০৫ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ১২, ২০১৭

আকাশ দিগন্ত

রোকসানা লেইস
ঠিকানা জানতে চেয়েছিলে। বালুকাবেলায় লিখে রেখেছিলাম। জোয়ারের জল ধুয়ে নিয়ে গেছে। জলপাই বনের সীমানা শেষ হলে ধানী জমি ডানে রেখে হাঁটতে থাকবে সামনে । ভয় পেওনা, পিছন ফিরে দেখ না। এগিয়ে যেতে হবে দৃঢচেতা পদক্ষেপে।
যেখানে ত্রিনেত্র নদীর সঙ্গম, সেখান থেকে বায়ে বেঁকে বাঁশবনের নিচ দিয়ে, অনেকটা মেঠো পথ পার হতে হবে। জমির ফসল হাসবে তোমাকে দেখে। আনন্দটুকু শুষে নিও, সঞ্চয়ে রেখো।
সূর্য লাল টিপ পড়ে হাসছে, দিগন্ত বরাবর চোখ রেখে সোজা যেতে হবে। শিমুলের বন পেরিয়ে, ধূধূ মাঠ। বটপাকুড়ের পাশ কাটিয়ে আরো দূরে হাঁটতে হবে। গা শিরশির ভয় জাগতে পারে, মন খারাপ না করে মনোবল ঠিক রেখে এগিয়ে যেও। খুব বেশী ক্লান্তি পেয়ে বসলে, খানিক জিরিয়ে নিতে পারো।
পেছনে চাঁদের আলো মেলে রাখবে চোখ, নিশি গন্ধা ফুলের ঘ্রাণে মন উথাল পাতাল করবে। হারিয়ে যেওনা ফুলের গন্ধু অনুসরণ করে। পাতার খসখস শব্দ , রাতের কথা গুঞ্জরণ তুলতে পারে; আনন্দিত না শিহরিত হবে তা তোমাকেই ভেবে নিতে হবে। কুহুক মন জ্বালতে পারে আগুনের শিখার মতন। হারিয়ে যেতে পারে ভাবনা। শূন্যতা ভর করে বিচলিত করতেই পারে অনুভব।
মিটিমিটি তারা জ্বলবে ভালোবেসে। দু একটা জোনাকি আলোর গান গেয়ে উঠবে। শনশন বাতাস কথা বলবে কানে কানে। এসবের মাঝে হৃদয়পুর জেগে থাকবে, ভাবনার আগল হাতে ধরে। কোনটা বেশী প্রয়োজনীয়। ঠিকানা খুঁজে এগিয়ে যাওয়া নাকি ফিরে যাওয়া পেছনের পথে। আলৌকিক পদধ্বনী বিমূর্ত ভাবনাগুলো অনেক রকম স্তর এনে দিবে বাঁকের সামনে না পিছনে কোন দিকে! দ্বিধান্তিত খণ্ডিত মন, হতেই পারে দ্যোদুল্যমান…….তারপরও
ঘুরে দাঁড়িও না। পিছনটা মুছে গেছে ততক্ষণে।কিছুই আর আগের মতন পাবে না। ভয়ে অন্তরআত্মা খাঁচা ছাড়া হতে পারে। এমন অভাবনীয় দৃশ্য দেখে। এটাই ভালো হবে সামনের পথে এগিয়ে যাওয়া। যতদূর যাও, ঠিকানা না পাও, নতুন কোন খিড়কি বা দরজা এর মধ্যে খুলে যেতে পারে। কুঁড়ে বা প্রাসাদের দেখা পেতেও পারো। নদীর পার ধরে হাঁটলে অনেকটা বাঁক ঘুরতে হবে। পাহাড় ডিঙ্গাতে চাইলে ঢাল বেয়ে নামতে হবে। দু দিকেই যেতে পার। এক সময় নগরটা তোরণ খুলে অপেক্ষা করবে তোমার আসার। ভালো হয় যদি খুব ভোরে পৌঁছাতে পারো। শুভ সূচনা ভোরের সাথেই হয়। শহরের রাস্তাগুলো সাজানো হবে, ঝাঁট দিয়ে চলে যাওয়ার পরে। তখনও সুপ্তির কুলে অনেক মানুষ। কিন্তু তাদের জন্য তৈরি করছে সুন্দর, ক্লিষ্ট কিছু মানুষ। যদিও তাদের ঠিক মানুষ ভাবা হয় না। একদল ফিরে যাচ্ছে সারা রাতের ক্লান্তি নিয়ে। একদল সাজিয়ে তুলছে নতুন প্রভাত। সুখের মানুষগুলো দিন শুরু করবে বলে।
দিনটা সুন্দর হবে এমনই ভাবনা। কিন্তু তা হতে পারে আকাশের মতন উদার বা সমুদ্রের মতন উত্তাল। হতে পারে গহীন অন্ধকার বা তুমুল ঝড়ের।
প্রবল বৃষ্টির ছাপটায় ভিজতে ভিজতে সুর করে মেঘমাল্লার তান ধরো। সময়টা আনন্দময় হবে বিদ্যুতের তালে তালে।
যদি বা ঘুমিয়ে পরো পথের ক্লান্তি নিয়ে,জেগে উঠে আবার নতুন ভাবে শুরু করো পথ চলা।
ধ্রবতারা জাগবে পথের দিশা নিয়ে। সম্মুখে এগিয়ে যাওয়া ছাড়া উপায় নেই। অচেনা মায়া হাত বাড়িয়ে কাছে টানবে। ভালোবেসে জড়িয়ে রাখতে চাইবে। বনের হিংস্র প্রাণীর মতন মানুষ, কাছে আসতে পারে সোহাগের আহ্বানে। জল তরঙ্গের গান গেয়ে। যদি সঠিক দিক, ভুল করে থেমে যাও; হয় তো ভালো কিছু অর্জন হবে না, তবে অভিজ্ঞতা পরের রাস্তা চিনতে সুবিধা করে দিবে। হয়তো খানিক সময় কেটে যাবে অপচয়ে। এভাবে পথ চিনে একদিন ঠিক, ঠিকানা পেয়ে যাবে। যে ঠিকানা ধুয়ে গেছে জলের গভীরে।
মন নিবেদিত রাখবে ধ্যানের মতন কিন্তু এ পথ চলায়। যদি এদিক ওদিক ঘুরে ঘুরে অপচয়ে ক্ষয় হয়ে যায় সঞ্চয়। ভুগতে হবে অনেক জরা ব্যাধী কষ্টের কাছে পরাজিত হয়ে।
তোমাকে ভাবনা জানানোর কোন উপায় নেই আর। ঠিকানা খুঁজে পেয়ে পৌঁছাতে্ যদি পারো কোনদিন তবে মিলন হবে। আনন্দধারা উছলে উঠবে।সাতরঙ ছড়াবে রঙধনু।
ঘিরে থাকবে সুমধুর সুরের তারার আলো। ক্ষয় নেই ভয় নেই অন্ধকার নেই আলোর হাস্যধারা ঝরে পরবে অনুক্ষণ। অপেক্ষার ক্লান্তি হারাবে দূর বহুদূর। ভুলে যাবে কোন এক দূর্গম পথ পারি দিয়েছো একা তিমির সাথে করে। অজানা আর উজান চলা ছিল আশংকায় টানটান।
তখন সব বেলা হারিয়ে মধু চন্দ্রিমা হাসবে আর হাসতেই থাকবে। তার আগে এই লম্বা চলা অজানায় ভাসা অপেক্ষার ক্লান্তি দীর্ঘ সেতু হয়ে বেঁধে রাখবে।

লাইভ রেডিও

Calendar

March 2024
S M T W T F S
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31