আফগানিস্তানের নতুন প্রধানমন্ত্রী মোল্লা আখুন্দের উত্থান যেভাবে

প্রকাশিত: ৮:৫৬ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ৯, ২০২১

আফগানিস্তানের নতুন প্রধানমন্ত্রী মোল্লা আখুন্দের উত্থান যেভাবে

আফগানিস্তানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ঘোষণা করেছে তালেবান। সেই সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মোল্লা হাসান আখুন্দের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। বর্হিবিশ্বের অনেকের ধারণা ছিল তালেবানের রাজনৈতিক শাখার প্রধান মোল্লাহ আব্দুল গনি বারাদারই হচ্ছেন তালেবানের প্রধানমন্ত্রী। তবে সরকার ঘোষণার পর সেই হিসাব-নিকাশ পাল্টে গেছে।

কাবুল দখলের পর দোহা থেকে তালেবানের ক’জন নেতা যখন কান্দাহারে হাজির হন, তখন মোল্লাহ হাসান আখুন্দকেও সেখানে দেখা যায়। তিনিই যে সরকারের প্রধান হবেন তখনো বর্হিবিশ্বের কেউ ভাবতেই পারেনি।

তবে মোল্লা হাসান আখুন্দের বর্হিবিশ্বে তেমন পরিচিতি না থাকলেও তালেবানে ব্যাপক প্রভাব রয়েছে।

বিবিসি বাংলাকে লন্ডনে আফগান সাংবাদিক ও আফগানিস্তানের রাজনীতির বিশ্লেষক সাইয়েদ আব্দুল্লাহ নিজামী বলেন, আফগানিস্তানের বাইরে অনেক মানুষ অবাক হলেও, আফগানিস্তানে বা তালেবানের নেতা-কর্মীদের ভেতর এ নিয়ে তেমন কোনো বিস্ময় নেই।

তার মতে, মোল্লাহ হাসান আখুন্দ তালেবানের মূল নেতৃত্বের অত্যন্ত প্রভাবশালী একজন সদস্য এবং তালেবানের মধ্যে নেতৃত্ব এবং মাঠ পর্যায়ে তার গ্রহণযোগ্যতা, মর্যাদা-সম্মান অদ্বিতীয়।

আফগান সাংবাদিক বলেন, গত ২০ বছরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে লড়াইতে মোল্লাহ আখুন্দ ছিলেন তালেবানের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নেতা।

তিনি জানান, যুক্তরাষ্ট্র ও জাতিসংঘের সন্ত্রাসীর তালিকায় মোল্লাহ আখুন্দের নাম রয়েছে বলে আমেরিকার সঙ্গে আলোপ-আলোচনা চলার সময় তাকে এতদিন সামনে আনা হয়নি। কিন্তু সংগঠনের ভেতর তার প্রভাব মোল্লাহ বারাদার বা অধিকাংশ নেতার চেয়ে সবসময়ই বেশি।

যে শহরে জন্ম মোল্লা হাসান আখুন্দের

আফগানিস্তানের নতুন নেতা মোল্লা হাসান আখুন্দের জন্ম কান্দাহারে। সেখানেই মাদ্রাসায় তার পড়াশোনা।

তার সত্যিকার বয়স নিয়ে বিভ্রান্তি রয়েছে। ধারণা করা হয়, তার বয়স ৬০ এবং ৭০ এর মাঝামাঝি। তবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞা তালিকা অনুযায়ী তার বয়স ৭৬। তবে বয়স নিয়ে মত-বিরোধ থাকলেও তালেবানের বর্তমান শীর্ষ নেতৃত্বের মধ্যে বয়সে মোল্লা আখুন্দ সবচেয়ে বড়।

আফগান গৃহযুদ্ধের সময় ১৯৯৪ সালে কান্দাহারে মোল্লা ওমরের নেতৃত্বে যে ক’জন মাদ্রাসা-পড়ুয়া জাতিগত পশতুন যুবক তালেবান আন্দোলনের জন্ম দিয়েছিলেন, মোল্লাহ হাসান আখুন্দ ছিলেন তাদের অন্যতম।

১৯৯৬ সালে তালেবান কাবুল দখল করে যখন সরকার গঠন করেছিল, তখন তিনি সেই সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হন। বাইরের বিশ্বের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে সে সময়কার তালেবান সরকারের অবশ্য তেমন কিছু করার ছিল না, কারণ মাত্র তিনটি দেশ – পাকিস্তান, সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত – তাদের স্বীকৃতি দিয়েছিল।

পরে উপ-প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন মোল্লা আখুন্দ। যেহেতু মোল্লাহ ওমর ছিলেন আমির, ফলে ২০০১ সালে ক্ষমতা হারানোর আগ পর্যন্ত কার্যত তিনিই ছিলেন সেই তালেবান সরকারের প্রধান। মোল্লাহ ওমরের অত্যন্ত বিশ্বস্ত সহচর ছিলেন মোল্লা আখুন্দ।

২০০১ সালে ক্ষমতা হারানোর পর পাকিস্তানে পালিয়ে যাওয়া তালেবান নেতারা বালুচিস্তানের কোয়েটায় যে নেতৃত্ব পরিষদ গঠন করেন – যেটি রাহবারি শুরা বা কোয়েটা শুরা নামে পরিচিত – তাতে অন্যতম প্রধান ভূমিকা রাখতে শুরু করেন মোল্লা আখুন্দ।

রাজনৈতিক কৌশল থেকে শুরু করে সামরিক কৌশল– সেই থেকে তালেবানের সব বিষয়ের কেন্দ্রে তিনি রয়ে গেছেন।

তালেবানের বর্তমান শীর্ষ নেতা হিবাতুল্লাহ আখুন্দজাদার সঙ্গে তার সম্পর্কও অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ – তালেবানের নির্ভরযোগ্য সূত্র উদ্ধৃত করে তাদের এক খবরে এমন কথা জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

সংগঠনের সবাই তাকে খুব সম্মান করে, বিশেষ করে আমির-উল-মুমিনিন (হিবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা)।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

লাইভ রেডিও

Calendar

March 2024
S M T W T F S
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31