উন্নয়নে উজ্জীবনে শেখ হাসিনা

প্রকাশিত: ১২:৩১ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২১

উন্নয়নে উজ্জীবনে শেখ হাসিনা

 

 

জাহিদা আক্তার

দুই বছর আগে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ বিপুল ভোটে জয়লাভ করে। টানা তৃতীয়বারের মতো পাঁচ বছরের জন্য দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পায় আওয়ামী লীগ। দলটি প্রথম ২০০৮ সালের নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর থেকে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক বড় বড় প্রকল্প নিয়ে কাজ শুরু করে। পরবর্তীতে তাদের উন্নয়ন জনগণের চোখে আরও দৃশ্যমান হয়। দেশের সাধারণ মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তনে কাজ করে যাচ্ছে এই সরকার। শেখ হাসিনার নেতৃত্বগুণে দেশ আজ উন্নয়নের বিশ্বনেতৃত্বে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দুই বছর পার হলো। জয়লাভের পর থেকে উন্নয়নমুখী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে যাচ্ছে সরকার। এই দুই বছর ধরে টানা ১২ বছর দেশ পরিচালনা করছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার।

দৃশ্যমান উন্নয়ন: আওয়ামী লীগ সরকারের অগ্রযাত্রায় বদলে যাচ্ছে বাংলাদেশের রূপ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের উন্নয়নমুখী নানা পরিকল্পনার সুফল এখন মানুষের দোরগোড়ায়। মানুষের গড় আয়ু, জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন, বিভিন্ন কাজে ডিজিটালাইজেশন, সবই সম্ভব হয়েছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বের গুণে। বিগত বারো বছরে দেশের উন্নয়নে আওয়ামী লীগ সরকার নিরলসভাবে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এক নজরে দেখে নেওয়া যাক একাদশ সংসদের সরকার গঠনের পরের সুফলগুলো।

১. দেশের দারিদ্র্য হার সাড়ে ২০ শতাংশে নেমে এসেছে। ২০১৮ সালের জুন মাস শেষে এই হার ছিল ২১ দশমিক ৮ শতাংশ।

২. বর্তমানে শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার হার ১৭ শতাংশ। ২০১৯ সালে প্রাথমিকে ঝরে পড়ার হার ছিল ১৭ দশমিক ৯ শতাংশ এবং ২০১৮ সালে ১৮ দশমিক ৬ শতাংশ।

৩. বিদ্যুৎ উৎপাদনে সরকারের সাফল্য আগের চেয়ে বহুগুণ বেশি। বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২৩ হাজার ৭৭৭ মেগাওয়াট। ২০১৯ পর্যন্ত বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতা ছিল ২২ হাজার ৫৬২ মেগাওয়াট।

৪. সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো বিবিএস’র তথ্য অনুসারে গড় আয়ু বেড়ে ৭২ দশমিক ৬ বছর দাঁড়িয়েছে। এর আগে ২০১৮ সালের হিসাবে গড় আয়ু ছিল ৭২ দশমিক ৩ বছর।

৫. বাংলাদেশ আইসিটি খাতে রফতানি শুরু করেছে। গত বছর প্রায় ১০০ কোটি ডলার সমপরিমাণের অর্থ এ খাত থেকে অর্জন হয়েছে। চলতি বছরের লক্ষ্যমাত্রা ৫০০ কোটি ডলার।

৬. বিনামূল্যে পাঠ্যবই বিতরণ।

৭. বিশ্বের ৫৭তম দেশ হিসেবে বাংলাদেশ মহাকাশে ‘বঙ্গবন্ধু ১’ স্যাটেলাইট পাঠিয়েছে।

৮. দৃশ্যমান স্বপ্নের পদ্মা সেতু

৯. মেট্রোরেলের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে।

১০. ৩০ জুন শেষ হতে যাওয়া বিদায়ী ২০১৯-২০ অর্থবছরের দুই দিন বাকি থাকতেই (২০১৯ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২০ সালের ২৮ জুন) ১৮ দশমিক ০৩ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।

পদ্মা সেতু: স্বপ্নের পদ্মা সেতু নিজেদের অর্থায়নে দৃশ্যমান হয়েছে। গত ১০ ডিসেম্বর সেতুর সর্বশেষ স্টিলের স্প্যান বসানো হয়েছে। এই সেতুর নদী অংশের মোট দৈর্ঘ্য হলো ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার। সেতুর উপরের অংশ দিয়ে চলবে যানবাহন আর নিচ দিয়ে ট্রেন। উপরের অংশ হলো ২২ মিটার, যেখানে ৪ লেনে বিভক্ত হবে সড়ক। এই সেতু উন্মুক্ত হলে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের যোগাযোগের এক যুগান্তকারী উন্নয়ন হবে। বিদ্যুৎ, গ্যাস এবং রেলের সংযোগ স্থাপনের মাধ্যমে উন্নয়নের নতুন বিপ্লব ঘটাবে এই সেতু।

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র: দুই হাজার চারশ’ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের লক্ষ্যে ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে পাবনার রূপপুরে রাশিয়ার একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করে সরকার। বিদ্যুৎকেন্দ্রটির প্রথম ইউনিট ২০২৩ সালে এবং দ্বিতীয় ইউনিট ২০২৪ সালের অক্টোবরে উৎপাদনের সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। এক লাখ এক হাজার ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে রাশিয়ার সহযোগিতায় বাংলাদেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ হচ্ছে পাবনার রূপপুরে।

রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র: মোংলা-খুলনা মহাসড়কের পাশে রামপালে প্রায় ১৮৩৪ একর জমির ওপর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ করছে বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড। এই প্রকল্পে ব্যয় হবে ১৬ হাজার কোটি টাকা। চলতি বছরের শেষে রামপাল থেকে বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে আসতে শুরু হবে।

পায়রা বন্দর: দেশের একমাত্র সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রামে চাপ কমাতে পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়ায় রাবনাবাদ চ্যানেলে পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার। এই প্রকল্পটির কাজ বেশ গতিতে এগিয়ে চলছে। বন্দর থেকে ঢাকামুখী যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের কাজ ইতোমধ্যে অর্ধেক সম্পন্ন হয়েছে। ২০২৩ সালের মধ্যে ১৬ মিটার গভীরতায় চ্যানেল ড্রেজিং সম্পন্ন করে পূর্ণাঙ্গ বন্দর সুবিধা গড়ে তোলা হবে।

মেট্রোরেল: ঢাকার যানজট কমাতে মেট্রোরেলের মতো বড় প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। অল্প সময়ের মধ্যে এই প্রকল্পের কাজ আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত সম্পন্ন হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই প্রকল্পকে মোট আট প্যাকেজে ভাগ করা হয়েছিল। এরমধ্যে ৫ ও ৬ প্যাকেজের আওতায় মতিঝিল পর্যন্ত মোট ৭টি স্টেশন নির্মাণ করা হবে। প্রকল্পটি শেষ হলে প্রতি ৪ মিনিট পরপর ১ হাজার ৮০০ যাত্রী নিয়ে চলবে মেট্রোট্রেন। ঘণ্টায় চলাচল করতে পারবেন প্রায় ৬০ হাজার যাত্রী। এই পথে ২০ কিলো পাড়ি দিতে সময় লাগবে মাত্র ৪০ মিনিটের মতো।

শেখ হাসিনার অদম্য নেতৃত্ব: ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হওয়ার পর আওয়ামী লীগের কার্যক্রম কিছুটা স্থবির হয়ে পড়ে। এরপর ১৯৮১ সালে দলের কাউন্সিলে বিদেশ থাকা অবস্থায় শেখ হাসিনা দলের সভাপতি মনোনীত হন। এরপর থেকে টানা ৩৯ বছর ধরে আওয়ামী লীগের মতো বড় দলের সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছেন তিনি। তার নেতৃত্বে ২০০৮ সালের নির্বাচনে জয় লাভের পর টানা এখন পর্যন্ত সরকার পরিচালনা করে আসছেন। বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে এক অপ্রতিরোধ্য গতিতে। সব প্রতিবন্ধকতা সমস্যা-সংকট ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে বাংলাদেশ আজ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল রাষ্ট্র পা দিয়েছে। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি, একাত্তরের ঘাতক যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, সংবিধান সংশোধনের মধ্য দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পুনঃপ্রতিষ্ঠা, সাবমেরিন, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন, কর্ণফুলী টানেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, নতুন নতুন উড়াল সেতু, মহাসড়কগুলো ফোর লেনে উন্নীত করা, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, মাথাপিছু আয় ২০৬৪ ডলারে উন্নীত, জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৮.২, ফোর-জি মোবাইল প্রযুক্তির ব্যবহার চালুসহ অসংখ্য ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জন করেছে বাংলাদেশ।

করোনা মহামারি মোকাবিলা: একবিংশ শতকের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো বর্তমানে করোনাভাইরাস মোকাবিলা করা। এই ভাইরাস মোকাবিলা না করতে পারলে মানবসভ্যতা বিপন্ন হতে পারে। দ্বিতীয় ধাক্কায় এই ভাইরাস অনেক দেশে মহামারির আকার ধারণ করেছে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে রাজধানী থেকে একেবারে গ্রাম পর্যন্ত কোভিড-১৯ মোকাবিলায় বিশেষ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। যার ফল আমরা ভোগ করছি। অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের মৃত্যুর হার অনেক কম। দেশে ভাইরাসটি শনাক্ত হওয়ার পর এটির সংক্রমণ রোধে দেশ লকডাউন ঘোষণা করা হয়। এ সময় স্বল্প আয়ের মানুষের স্বাস্থ্য, অন্ন ও অর্থনীতি মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৩১ দফা নির্দেশনা, প্রায় সোয়া লাখ কোটি টাকার প্রণোদনা, ১ কোটি রেশন কার্ডের বিপরীতে খাদ্য সহায়তা, প্রায় সাড়ে চার কোটি জনগণকে ত্রাণ সহায়তাসহ ৩০০ কোটি টাকার কৃষি উপকরণ সরবরাহ করেছে আওয়ামী লীগ সরকার। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুযায়ী চিকিৎসা সুরক্ষা সরঞ্জাম সরবরাহ করা ও চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের ট্রেনিংয়ের যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। ১টি আরটি পিসিআর ল্যাব থেকে পর্যায়ক্রমে ৬৮টি ল্যাব স্থাপন করা হয়। একই সঙ্গে ভেন্টিলেটর, হাই-ফ্লো ন্যাসাল ক্যানুলা, অক্সিজেন, আইসিইউ বেডসহ আইসোলেশন সেন্টার, কোভিড চিকিৎসায় ডেডিকেটেড হাসপাতাল সংখ্যা বৃদ্ধি করা হচ্ছে। করোনাভাইরাস মহামারি মোকাবিলায় ১০ হাজার কোটি টাকা থোক বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বৈশ্বিক মহামারি করোনায় তার নেওয়া পদক্ষেপ জাতিসংঘ, বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সাময়িকী ফোর্বসসহ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রশংসিত হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

গৃহহীনদের ঘর প্রদান: জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে সরকার গৃহহীনদের আধাপাকা ঘর নির্মাণের একটি বড় কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। এতে সারা দেশের ৮ লাখ ৮২ হাজার ৩৩টি ঘরহীন পরিবারকে নতুন ঘর তৈরি করে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। আগামী বছর ১৭ মার্চের মধ্যে এসব পরিবারের কাছে ঘরগুলো হস্তান্তর করা হবে। দেশকে আরও গতিশীল করতে শেখ হাসিনার বিকল্প নেই। তিনি দেশকে উন্নয়নের মহাসড়কে তুলেছেন। ২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করা এখন প্রধান লক্ষ্য তাঁর। সেটির জন্য দেশের মানুষের উচিত সরকারের সফলতার পথে সহযোগিতা করা। যেন আওয়ামী লীগ সরকার দেশ ও জাতির উন্নয়নে আরও বেশি কাজ করতে পারে। সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠিত হোক জাতির পিতার কন্যার নেতৃত্বে মাধ্যমে, এটিই আমাদের কাম্য।