একগুচ্ছ জোহরা রুবী

প্রকাশিত: ৯:৩৫ পূর্বাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২, ২০২১

একগুচ্ছ জোহরা রুবী

 

বাতাস এসে বলল কানে

প্রতীক্ষার প্রহর গুনে গুনে হেঁটেছ কতটা পথ!
প্রহরীর মত খোলা চোখ কতটা স্বপ্নে জড়িয়েছিল তোমার হৃদয়!
বাতাসে ভেসে আসা কতটা ঘ্রাণ নীরবে গেঁথেছ হৃদয়ে!
কতদূর পথ পাড়ি দিলে আকাশ মিলবে দিগন্তের বলয়ে!
নিয়মের ছকে কাঁপা ওষ্ঠে
হঠাৎ চমকে দিল দুরন্ত হাওয়া
ওল্টালো প্রাণের পাতা।
হিম হিম পরশে ফাল্গুনী আবেশে
কানে কানে বলে দিল ভালবাসার কথা।চারিদিকে ভ্রমরের গুনগুন
ফোটে সন্ধ্যামালতী, নয়নতারা
দুটি হাত জড়িয়ে নিবে একটি জীবন,
ঝলমলিয়ে উঠবে তারাভরা অন্তরীক্ষ!
হাসবে বকুল হাস্নাহেনা আর
জোছনা ভরা রাত।
মিলনের গানে জেগে উঠবে
ফুল, পাখি আর চিত্তের অবিরাম ঝর্ণাধারা।
প্রত্যাশার প্রতিটি পরতে পরতে
ঝরে পড়বে কুসুম বৃষ্টি আর আনন্দধারা।

২০.৯.২০

একাদশী চাঁদ

 

অষ্টপ্রহর একটু একটু করে বেড়ে উঠি আমি
ছুঁয়ে দেব বলে বেঁধে নেব ছলে প্রণয়টা হবে আজি
তোমায় ভেবেছি যতবার আমি ভেবেছ তুমি কি তত!
অবুঝের মত বার-বার মনে জেগে উঠে সেই ক্ষত
খুব কাছে পাব অনুভবে আমি দেখেছি তোমার ছায়া
আঁটসাঁট হয়ে ছুটে চল তুমি ,যেন অধরাই মায়া
বাতাসের তোড়ে ফুরসতটুকু তুলোর মতন ওড়ে-
পেছনে ফিরেছ! কোথাও কি কবে! প্রশ্নটা জাগে ঘোরে-
পেছনে ফেরার মর্মটা তুমি বুঝবেনা কোন দিন-
গহীনে রেখেছি শতেক প্রহর বুকে বেদনার বীন
অধীর অধম বেহায়াপনায় নিয়েছি তালিম বেশ
কষ্ট নদীর গাঢ় অরণ্যে নিজেকেই করি শেষ
বনসাই প্রেম যেন অমানিশা, বেদনার খেয়া ঘাটে-
দেখেছ কি কেউ তুলি আঁকা প্রেম খাঁটি ছিল কোন কালে!
দিতে হয় পাড়ি গিরিসম পথ দৃঢ় শপথের মাঝে
একাদশী চাঁদ উচাটন আজ ধোঁয়াটে মেঘের ভাঁজে।

নার্সিসাস

পাখির ডানায় স্বপ্ন চুপিচুপি ছুঁয়ে দেয় তারা
তুলে আনে একরাশ মুগ্ধতার গতিময় পথ
তুলোর মতন ওড়ে জেগে ওঠে কবিতার পাড়া
ফুল হয়ে ফুটে ওঠে অবিশ্রান্ত গাছের পাতারা
প্রজাপতি মন নাচে বয়ে যায় কুমারী তটিনী
কাঁচা বয়সের সুখ তুলে আনি রংধনুর খামে
আঁতিপাঁতি করে খুঁজি বেহুলার জীবন কাহিনী
ছন্দের প্রদীপ জ্বালি শপথের শতদল নামে
বাঁক নেয় শব্দরাজী আলোকিত আপন আলয়ে
উত্তাল তরঙ্গে নৃত্য করে ঢেউ গুনে মিছেমিছি
ঝুলে থাকে বিন্দু বিন্দু নিহারীকা বাতাসের ঠোঁটে
কাব্যরসে হামাগুড়ি গড়াগড়ি উতলা মৌমাছি
ডেকে যায় হেঁকে যায় তারুণ্যের উচ্ছ্বসিত বাণী
মায়াবী নিশীথে জাগি কাঁদি হাসি গোপন আহ্লাদে
মুগ্ধ নার্সিসাসে পাড়ি দেই নদ সমুদ্র বনানী
আকন্ঠ জড়িয়ে পড়ি শব্দ শব্দ নৈপুণ্যের ফাঁদে।

০৯১২২০২০

অনু কবিতা – এক

চৈতালি বায় দখিন হাওয়ায় গড়াগড়ি মায়ার
ইচ্ছেগুলো সাঁতার কাটে ডিঙায় নদী পাহাড়
মেঘেরা সব দলবেঁধে আজ ছুটে এদিক ওদিক
নয়ন জুড়ায় প্রেমের ভেলায় সুর তুলে চারদিক।

অনু কবিতা -দুই

মনাকাশ জুড়ে কত ছবি ভাসে এইতো সেদিন

অথই স্মৃতির মালা গাঁথি, সুরে কুহকের বীন

ছুঁয়ে থাকে মনপ্রাণ অহর্নিশ ডেকে ডেকে ওঠে

পৌঁছুতে পারিনা রিক্ত দীর্ঘশ্বাস কুয়াশার মাঠে।

অনু কবিতা- তিন

বিষন্ন বায় বেসুরো নূপুর
দূর জোনাকির আলো

আলো সীমানার কাছে যত যাই
জড়ায় আঁধার কালো

একলা উদাস ব্যথা নীলাকাশ
আকীর্ণ সব স্মৃতি

পাহাড় বুকের ক্রন্দন ধ্বনি
কোন সে বিষাদ গীতি!

ভুলের আকাশে নেমেছে সন্ধ্যা
বিষাদের সুরে সুরে

দূরে কোলাহল কুহেলিকা মন
রুদ্ধ লিপির দ্বারে।

 

ক্লান্তিহীন ছায়া

একটা ছায়ার সাথে পরিচয় সেই কবে থেকে,
বশীভূত করার মন্ত্রটায় লেপ্টে ছিলাম, আজও আছি
বদলেছে রূপ, বদলেছে চেহারার মানচিত্র আর হাসি
উথাল-পাথাল তারুণ্যে রংচটা স্বপ্নের ফাঁক গলে চুমু খেত সেই ছায়াটি
একগাদা প্রিয় জিনিস ছুঁড়ে দিয়ে উধাও!
সুখ সমুদ্রে হাবুডুবু গড়াগড়ি আর ছায়াটার মায়ায় বুদ হয়ে পূর্ণতার ঝোপে টুপ করে চুপ
খোলা চোখে সুনসান স্বপ্ন কুটিরে ঝিম মেরে নৈঃশব্দের বেলকনিতে সটান
ছায়াটার কায়ায় স্বতঃস্ফূর্তভাবে ক্রমাগত মমতারা জন্ম নেয়
ভরপুর মমতায় মাঝে মাঝে প্লাবিত হই,
ছায়াটিকে ঘিরে রাখি ঘূর্ণিঝড়ের মত মৌচাকের মতো
ছায়াটির কোমল হাতে একে একে জন্ম নেয় আমার মতো বশীভূত কায়ার দল
নির্বিঘ্নে ছুটে যায় তার শর্তহীন ভালবাসার বৃষ্টিতে
শীতল জলধারায়
তুমূল আনন্দে বন্ধনের স্রোতে
একদা ঝলমলে ছায়াটির ছোঁয়ায় আমি সহ চারপাশ ঝলমলিয়ে উঠত
ইদানীং
বয়ষ্ক ছায়াটি শিশুর হাসিতে বসত করে পুতুলের মত নড়েচড়ে, চমকে দেয়
ধমকে দেয় আশ্বাস দেয়
লেপ্টে থাকা কায়ার দলকে ক্লান্তিহীন ভাবে।

১৩.১১.২০২০

ভালবাসি অবিরাম সুইটহার্ট

আমাদের দিনগুলি শুধু ভালবাসার
আমাদের সব দিন কাছে যে আাসার,
আমাদের দিনগুলি দুরন্ত উচ্ছ্বল
অপেক্ষায় প্রতীক্ষায় কাটে অনর্গল,,
ফুটফুটানি, প্রাণভোমরা কত্তো নামে ডাকো
মধ্যমণি একজনই হয়! ভালবাসার সাঁকো!
বিশেষ দিনটি বিশেষ করা শিখেছি তোমার কাছে,,
তারুণ্যটাও পার করেছি তোমার চমক ছুঁয়ে,,
আজও তুমি পার, চমকে দিতে খুব,
এই গল্পের হয়না শেষ, সবসময়ই শুরু।

 

ভালবাসি অবিরাম সুইটহার্ট ❤️🧡💛💚💙💜

প্রতিচ্ছবি

জলের স্বচ্ছতায় তোমার প্রতিচ্ছবি অপরূপ হয়ে উঠে
নরম চাদরে পেতে দাও তোমার শরীর
কতই না প্রশান্তির বাহারে
টুপটাপ ঝরাও তোমার কষ্ট, বার্ধক্য, জীর্ণতা
স্বপ্নের সিঁড়ি বেয়ে গড়িয়ে যাওয়া প্রহরের
সাথে
লজ্জাবতী’র মত নুয়ে পড় গুটিয়ে নাও
প্রতীক্ষার বাসর সাজিয়ে
জলের শরীর আলো তাপে বন্ধুত্বে নীরবে নিভৃতে মেখে নেয় তোমার আজন্ম সৌরভ
জল দ্রুম রচনা করে কাব্য, অনবদ্য গল্প আর মিশে থাকে পরম মমতায় বুকের ওমে
স্বয়ং আফ্রোদিতি যেন দিব্য বর দিয়ে গেছে সেই কবে!
চন্দ্রালোকে সোনালী স্বপ্নে মশগুল যুগল আলোআঁধারি বেসামাল তুলতুলে ভালবাসায় মত্ত হয়ে উঠে অহর্নিশ
তারই বহমান ধারা যেন বয়ে যায় রয়ে যায় দুজনের মাঝে
অনিন্দ্য এক শিল্প মাত্রাহীন সৌন্দর্যের পাড় ধরে বহুদূর পাড়ি দিয়ে
গভীর স্বপ্নময় রূপকথার রাজ্যে
ধ্রুপদী গল্প হয়ে বেঁচে থাকে আজন্ম।

আটআটদু’হাজারকুড়ি

পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণ

এক আঁজলা চৈতি ফুল ভাসিয়ে দিলাম দিঘির জলে
যে যার মতো খুঁজে নিল পথ, ডুব দিল
জলতরঙ্গে
ভেসে গেল যোজন যোজন দূরে
বায়ুতরঙ্গে ভেসে বেড়াল চৈতি ফুলের সুবাস,
শ্যাওলা পড়া দিঘির ঘাটে
পিছলে পড়া তোমার প্রতিচ্ছবি
তুলে নিয়ে ফিরে এলাম,
কতটা কাল, অহন নিশি কেটেছে
দীঘল সবুজ ছায়া মায়াভরা
এই পরিত্যক্ত ঘাটে!
তারাভরা রাতে তারা গুনে গুনে স্পর্শ করেছি অন্তরীক্ষ!
হাতের মুঠোয় সাজিয়েছি নিজস্ব অবনী,
সমস্ত শরীর বেয়ে উঠানামায় ব্যাকুল ছিল অজানা এক শিহরণ
হৃদপিণ্ডের অলিগলিতে তখন ভেসে বেড়াত বিশুদ্ধ অম্লজান
শৈবাল ঘেরা বাতিল ঘাটের সুখ
আজ পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণ।
মুসাফির হয়ে অলখ মায়াজালে সিনান করি
অনর্গল
এভাবেই, অনন্তকালের কাছে জমা পড়ে প্রচ্ছন্নতা সব।

২১. ০৯.২০

সেজেছিল সাঁঝ

সৌরভে সৌরভে কথা হল আজ, এতটা বুঝিনি,
ভাষাটা যে চোখেরই
ছিল —
নীরব চাহনি শান্ত দিঘীর গভীর জলে
ডুবে গেল কিছুক্ষণ
নীরবতায় শেষ হল কথন
হৃদয় আঙিনা জুড়ে স্বপ্ন মাখামাখি
বসন্ত আগমনী সুর
সময়টা মিলিয়ে গেল —
হাওয়াই মিঠায়
সেজেছিল সাঁঝ মোহনীয়, নিভাঁজ
নিয়ন বাতির আলোয় ভেজা চারপাশ।

০৫.১০.২০২০

একটি গোলাপের টানে

একটি গোলাপের টানে ছুটে যেতেই
চোখটা অন্ধ হয়ে গেল
টেনে নিয়ে গেল যেথায়
সেখানে আমি আজও দাঁড়িয়ে আছি,
মৃদু হাওয়ার মাঝে ছড়িয়ে পড়া খুশবু
আমার প্রাণটাকে জড়িয়ে নিল সেদিন।
একলা একা পথের সাথী
চুপ করে ডুব দিয়ে নিয়ে এল
এক একটা গোলাপ,
সেইদিন থেকে ফুটছি সুবাস নিয়ে
পাশাপাশি কাছাকাছি থেকে
জেনে বুঝে, হাত ধরে হেঁটে
ভালবাসি বলে, গোপন ব্যথায় ডেকে,
ভরসার পরশটা বুলিয়ে,
বারবার দাঁড়িয়ে থাকি,
একই ছায়াতলে,একই সীমানায়
অসীম অনুরাগে।।

 

গহীনের কথামালা

মনে পড়ে
তোমায় বেশি চোখ বুজলে পরে
মন বাগানে
ঘুরি দুজন প্রজাপতির ঘোরে
নীরব ভাষায়
চলে আলাপ চোখের ভাষাও তাই
চোখের আড়াল
হলেই তুমি আঁধার নেমে যায়।
এমন করেই
কাটছে দিন বাড়ছে মনের জ্বালা
কাল বোশেখের
প্রবল ঝড় পরায় দুঃখ মালা
হারিয়ে গেলে
ঝড়ের তোড়ে জানিনাতো কোথায়!
মনঅলিন্দে
তোমার আসন দিব্যি থাকে ঠায়।
সময় তোমার
হয় না এখন ঘরসংসার চাপে
নিজের তরেও
পাওনা সময় এ কথা কি মিছে!
যতন করে
অনুভবে তুলে রাখি তোমায়
ভালবাসার
প্রথম ছোঁয়া স্বপ্নপুরে ধায়
দুঃখগুলো
পুষ্পমাল্য সুখগুলো আজ ছাই
জীবন আমার
নয়তো ফাঁকা চলবে এমনটাই!

চার এগার ঊনিশ

পোষা স্বপ্নগুলো

শিরিষফুল হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছ জেনে
টুপ করে ঝরে গেলাম তোমার মনবনে।
আমার জন্য পথ চেয়ে সে কি প্রতীক্ষা!
নয়ন জুড়ে দেখি তোমার কোমল মুখটা।
পরান বোঝাই সুখের নেশায় আছো চক্ষু মুদি
আসমানী নীল শাড়ির সাথে শুভ্র রেশমি চুড়ি।
খোঁপার কাঁটায় গুঁজে দেয়া কাঁঠালচাঁপার সুবাস
প্রাণ ভরে নিলে তুমি বুক ভরা শ্বাস।
চোরাকাঁটা জড়িয়ে নিল শাড়ীর নরম পাড়
আলতো করে ছাড়িয়ে নিলে বাড়িয়ে দিলে হাত।
গুটিয়ে নিল লাজুকলতা ঘোমটা টেনে হায়!
জমে গেল ভালবাসা তুমুল মুগ্ধতায়।
অন্তঃপুরের ভাবনাগুলো বেঁচে থাকার আলো
জিইয়ে রাখে মিইয়ে যাওয়া পোষা স্বপ্নগুলো।

ছাব্বিশ তিন দুহাজার কুড়ি

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

লাইভ রেডিও

Calendar

March 2024
S M T W T F S
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31