এ দেশ সাম্প্রদায়িকতাকে কবর দিয়ে সৃষ্টি হয়েছে।

প্রকাশিত: ১২:৪৬ অপরাহ্ণ, আগস্ট ৫, ২০১৯

এ দেশ সাম্প্রদায়িকতাকে কবর দিয়ে সৃষ্টি হয়েছে।

নবীরুল ইসলাম বুলবুল

বড় বেশি সাম্প্রদায়িক চর্চা চলছে নোবেলকে নিয়ে। নোবেল জাতীয় সংগীত বদলানোর কথা কোথাও বলেনি। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হিন্দু নন, ব্রাহ্ম। যারা বলছেন, হিন্দুর লেখা বলে, নোবেল জাতীয় সংগীত বদলাতে চায়, তারা মিথ্যাচার করছেন।

আজ আবার একজন আগবাড়িয়ে বলছেন, জাতীয় পতাকা বদলানোর দাবীও নাকী আসছে। তার বিবেচনায় জাতীয় পতাকার ডিজাইনার হিন্দু, সুতরাং এই দাবী অচিরেই তোলা হবে। এ জাতীয় কল্পিত অগ্রীম আশংকা পাগলকে সাঁকো না নাড়াতে বলার মতো। এ দেশের যারা শত্রু তারা চিহ্নিত। তাদের ক্ষমতা নেই এ দেশের কিছু বদলায়। তবুও তাদের হাতে বিতর্কের প্রসংগ ধরিয়ে দিতে যারা তৎপর, তারা কি এদেশের সত্যিকার কল্যাণকামী! বেশ সন্দেহ দেখা দিয়েছে।

একজন অসাম্প্রদায়িক মানুষকে সাম্প্রদায়িক হয়ে উঠতে দেখা যাচ্ছে। মূলত খোলস ঢাকা সাম্প্রদায়িক মনোভঙ্গি আজ যেন বেরিয়ে পড়তে শুরু করেছে। তাদের লেখায় এবং দেখায় মনে হচ্ছে, বাংলাদেশে হিন্দুর কোনকিছু আর অবশিষ্ট থাকার উপায় নেই। মুসলিম মানেই যেনো সাম্প্রদায়িক। এ এক অবাককর পরিস্থিতি।

নোবেল জাতীয় সংগীতের সাথে আরেকটি গানের তুলনা করে তার বিবেচনামত মত দিয়েছে। তার মতের সাথে আমরা কেউ একমত নই। “আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি”, দেশকে ভালোবাসার এর চেয়ে শক্তিশালী সংগীত আর হতে পারে না। নোবেলের মতামতের মধ্যে সাম্প্রদায়িকতার কোন ছোঁয়া নেই, তবুও প্রসংগটিকে সাম্প্রদায়িকতার দিকে ঠেলে দেয়ার হেতু কী!

এ দেশ সাম্প্রদায়িকতাকে কবর দিয়ে সৃষ্টি হয়েছে। সৃষ্টি করেছে এ দেশের হিন্দু মুসলিম খ্রীস্টান বৌদ্ধ যার যার সামর্থ মত আত্মবলিদানে সাম্প্রদায়িক পরিচিতি বিলুপ্ত করে, বাঙালিত্বের চরম বিকাশের মধ্য দিয়ে। জাতীয় পতাকার ডিজাইনার হিন্দু বলে তা বদলের চেষ্টা করা হবে মর্মে ভবিষ্যৎ বাণীতে ইংগিত করা হচ্ছে, এ দেশের মুসলিমগণ সাম্প্রদায়িক আর বাংলাদেশকে ভালোবাসার দায়িত্ব কেবল অন্য কারো। এ ধরণের মনোভাব, বাঙালিকে আবার হিন্দু মুসলমানে বিভাজন করে দেবে। এতে কারো কল্যাণ হবে না, ক্ষতি হবে কেবল দেশের।

মামুলি বিষয়ের উপর মিথ্যে আরোপ করে ফুলিয়ে ফাফিয়ে একজন সামান্য সংগীত শিল্পীকে দেশদ্রোহী বানিয়ে দেশে অকারণ শান্তি বিনষ্টের চেষ্টা করা হচ্ছে। তার গাওয়া গানটি জাতীয় সংগীতের সাথে মোটেও তুলনীয় নয়। গানটির মধ্যে আপত্তিকর উপাদান আছে। সুরের যা ভংগী তা নতুন প্রজন্মের কাছে নতুনত্ব দিতে পারে, কিন্তু সামগ্রিক দেশবাসীর মনে রেখাপাত করার মত গান সেটি কোনক্রমেই নয়।

দেশকে তুলেধরার গান কোনটি, তা নোবেলের মতামতের উপর নির্ভর করে না। জাতীয় সংগীত নিয়ে এতো উদ্বিগ্ন হওয়ার হেতু দেখি না, বরং মাত্রাতিক বাড়াবাড়ি দেখে, কবি শামসুর রাহমান এর কবিতা “কান নিয়ে গেল চিলে” র কথা মনে পড়ছে। বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ যে দেশের স্রষ্টা, আমাদের প্রিয়বোন জননেত্রী শেখ হাসিনা যে দেশের কাণ্ডারী সে দেশে জাতীর পিতার পছন্দের জাতীয় সংগীত কোথাকার কোন নোবেলের কথাতেই বদলে যাবে! তারিফ করতে হয়, ঐ সব উর্বর-চিন্তক দেশপ্রেমিকদের, যারা অকারণ অশান্তি ও সাম্প্রদায়িকতা উস্কে দিচ্ছেন এই মওকায়।

মুক্তিযুদ্ধে ১৬/১৭ বয়সী যোদ্ধার কীর্তি পর্যন্ত যাওয়ার দরকার নেই, মুক্তিযুদ্ধ চোখের সামনে ঘটেছে, মুক্তিযুদ্ধে হাত লাগানোর সামান্য অভিজ্ঞতা নিয়ে দেশকে ভালোবাসতে শিখেছি। যারা মুক্তিযুদ্ধ দেখেনি, তারা মুক্তিযুদ্ধে কে কি করেছে, তা যখন দেখিয়ে দিতে চায়, তখন তাদের অর্বাচিনতার প্রতি করুণার উদ্রেক হওয়া ছাড়া আর উপায় কী!

দেশকে ভালোবাসলে মিথ্যে প্রসংগে জলঘোলা না করাই উত্তম। সাম্প্রদায়িকতাকে ইনিয়েবিনিয়ে না উষ্কানোই কল্যাণকর।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

লাইভ রেডিও

Calendar

April 2024
S M T W T F S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930