কারা বঙ্গবন্ধু ও বাকশালের পতন কামনা করেছিল ?

প্রকাশিত: ১১:৫৪ পূর্বাহ্ণ, মার্চ ২৫, ২০২৩

কারা বঙ্গবন্ধু ও বাকশালের পতন কামনা করেছিল ?

সৌমিত্র দেব

 

উপনিবেশিক আমলে একজন ডেপুটি কমিশনারকে দিয়ে একটা জেলা নিয়ন্ত্রণ করতো ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ । তাই এর গাল ভরা বাংলা করেছিল জেলা প্রশাসক।  ডেপুটি সেক্রেটারি মানে যেমন উপ সচিব তেমনি ডেপুটি কমিশনার মানে উপ কমিশনার । তিনি জেলা প্রশাসনের দায়িত্বে থাকলেও জেলার প্রশাসক নন । সাংবিধানিক ভাবে তিনি প্রজাতন্ত্রের একজন কর্মচারী । তিনি এমন কি জনগণের সেবক হবারও যোগ্যতা রাখেন না । জনগণের সেবক হবার দাবিদার হলেন জন প্রতিনিধিরা । কিন্তু দেখা গেল প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা দেশের আসল মালিক জনগণের  নিজেদেরকে ।

স্বাধীনতার ৩ বছর পরেই এই উপনিবেশিক রাষ্ট্র ও প্রশাসনিক কাঠামোর অসারতা বুঝেছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ।

তাই তিনি স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য প্রগতিশীল ও সমাজতান্ত্রিক কাঠামো গড়ে তুলতে বাকশাল কর্মসূচী নিয়েছিলেন । কিন্তু সেটা বাস্তবায়নের আগেই ঘাতকেরা তাঁকে হত্যা করে।
তিনি শোষিতের পক্ষ নিয়েছিলেন । কৃষক শ্রমিকের কথা বলতেন।

তাঁর অবস্থা চিলির আলেন্দের মতো হলেও তিনি সাম্রাজ্যবাদের কাছে মাথা নত করেন নি।

বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি এবং জাতীয় লীগ নিয়ে গঠিত একটি রাজনৈতিক ফ্রন্ট ছিল।এটি বাংলাদেশের অধুনালুপ্ত একটি রাজনৈতিক দল যা সচরাচর বাকশাল নামে উল্লিখিত। ১৯৭৫ সালের ২৪ জানুয়ারি বাংলাদেশের সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীবলে বহুদলীয় সংসদীয় সরকার পদ্ধতি পরিবর্তন করে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয় এবং দেশের সমগ্র রাজনৈতিক দল বিলুপ্ত করে বাকশাল নামক এই একক রাজনৈতিক দল গঠন করা হয়। দলটি দ্বিতীয় বিপ্লব নামক তত্ত্বের অধীনে সংস্কারগোষ্ঠীর একটি অংশ হিসেবে রাষ্ট্র সমাজতন্ত্রের পক্ষে মত দেয়। দ্বিতীয় বিপ্লবের উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য বাকশাল ছিল সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী পরিষদ।

শেখ মুজিব বাকশালকে দ্বিতীয় বিপ্লব হিসাবে ঘোষণা করেছিলেন।

ডা. এস এ মালেকের বক্তব্য হচ্ছে, গ্রামে গ্রামে বহুমুখী সমবায় প্রতিষ্ঠা করে মালিক তার জমি দেবেন এবং রাষ্ট্রের অর্থে ভূমিহীন কৃষক সেই জমিতে আবাদ করবেন। সেই উৎপাদিত ফসল তিন ভাগে ভাগ হবে। আর শিল্প কারখানা পরিচালনায় শ্রমিকের প্রতিনিধি রেখে তাদের অধিকার নিশ্চিত করা। এই দু’টি কর্মসূচিই ছিল বাকশালের অন্যতম প্রধান বিষয়।

ডা. মালেক উল্লেখ করেছেন, জেলায় জেলায় গভর্ণরের নেতৃত্বে কাউন্সিল গঠন করে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ করার পদক্ষেপও নেয়া হয়েছিল।

“প্রথম কথা হচ্ছে, গণতন্ত্রের বিকেন্দ্রীকরণ। তিনি চেয়েছিলেন গণপ্রশাসন। সেজন্য তিনি নির্বাচিত প্রতিনিধি দিয়ে গভর্নরের নেতৃত্বে কাউন্সিল করেছিলেন। জেলায় জেলায় এই গভর্ণর কাউন্সিলে প্রশাসনসহ সর্বশ্রেনির লোককে রেখেছিলেন। সুতরাং ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ হবে।”

“দুই নম্বর হচ্ছে, বহুমুখী সমবায় সমিতি। যেখানে তিনি ভূমিহীনদের স্বার্থ রক্ষা করবেন। সুতরাং এই যে বলা হয় একদলীয় শাসন,এটা ঠিক নয়। মাওসেতুং বা লেনিনের মতো বিপ্লব ওভাবে হয়নি। এটা হয়েছে তিনি পিপলস ডেমোক্রেসি প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন।”

ডা. মালেক আরও বলেছেন, “তিনি স্পষ্ট বলেছিলেন, কোনো দেশের মন্ত্রটন্ত্র আমি আমদানি করবো না। পালার্মেন্টে যখন কেউ কেউ এর বিরুদ্ধে বক্তব্য করলেন, তখন তিনি বলেছিলেন, ‘আমি সেন্টিমেন্ট বুঝি। আই উইল গো ফর ফ্রেশ ম্যান্ডেট‌। আমি এটা সাময়িক সময়ের জন্য করছি এখনকার দুর্যোগ পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য। সবকিছু ঠিক হলে আমি আবার গণতন্ত্রে ফিরে আসবো।’ এটা তিনি বলেছিলেন।”

এই গণমুখি পদক্ষেপ নেবার কারণেই সামরিক ও বেসামরিক সকল কায়েমী স্বার্থবাদী মহল বঙ্গবন্ধু ও বাকশালের পতন কামনা করে।