কালি মন্দির নির্মাণ কাজে অনিয়মের অভিযোগ মৌলভীবাজারে।

প্রকাশিত: ১১:১১ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ৮, ২০২২

কালি মন্দির নির্মাণ কাজে অনিয়মের অভিযোগ মৌলভীবাজারে।

 

মৌলভীবাজার জেলা প্রতিনিধি

মৌলভীবাজার শহরে সরকারি বরাদ্দে পুরাতন কালী মন্দির নির্মাণ কাজে ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। সংশ্লিষ্ট কমিটি ও দায়িত্বরত প্রকৌশলীকে না জানিয়ে ঠিকাদার মন্দিরের ঢালাই কাজ শুরু করায় নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দিয়েছে এলাকাবাসী। শুরু হওয়া ঢালাই ভেঙ্গে দরপত্র মোতাবেক পুনরায় কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।

এই বিষয়ে জানা যায়,ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অধিনে হিন্দু কল্যাণ ট্রাস্টের ১৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে শহরের সেন্ট্রাল রোডের পুরাতন কালীবাড়ী ভেঙে নতুন মন্দির নির্মাণের কার্যক্রম শুরু হয়। মন্দিরের কাজ পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘বাবা গাছপীর এন্টারপ্রাইজ’ এবং দায়িত্বে ছিলেন ঠিকাদার জয়নাল চৌধুরী।

স্থানীয়রা জানান, ঠিকাদার জয়নাল চৌধুরী কাজের দাযিত্বরত ইঞ্জিনিয়ার ও কার্যকরী কমিটির সদস্যদের না জানিয়ে গোপনে নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে মন্দিরের ছাঁদের একাংশ ঢালাই করে ফেলেন।এলাকাবাসী ও কার্যকরী কমিটির সদস্যরা উপস্থিত হয়ে তাৎক্ষণিক কাজ বন্ধ করে দেন। সাথে সাথে বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়। পরে ৮ জানুয়ারী শনিবার সরজমিন পরিদর্শন শেষে কাজ বন্ধ রেখে নির্মাণাধীন ছাঁদ ভেঙে পুনরায় নির্মাণের নির্দেশ দিয়েছেন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাবরিনা রহমান ও ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অধিনস্থ নির্বাহী প্রকৌশলী হরিকিঙ্কর মোহান্ত।

কার্যকরি কমিটি ও সংশ্লিষ্ট ইঞ্জিনিয়ার সূত্রে জানা যায়, সিডিউলে আছে ১.৫.৩ অনুপাতে সিমেন্ট, বালু ও খোয়া দেওয়া। কিন্তু সেখান ১:৪:৮ দিয়ে ছাঁদ ঢালাই দেওয়ার হয়। অন্যদিকে ছাদে ৩ সুতা রডের পরিবর্তে ২ সুতা রড ব্যবহার করা হয়েছে। তা দেখতে পেয়ে এলাকাবাসী নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দিয়েছে। পরে কার্যকরী কমিটি মন্দিরের দায়িত্ব প্রাপ্ত প্রজেক্ট ইঞ্জিনিয়ার মিন্টু দেবকে জানান। মিন্টু দেব উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানালে, কাজ বন্ধ রেখে পুনরায় ছাঁদ নির্মাণের নির্দেশ দেন।

কালী মন্দিরের দায়িত্ব প্রাপ্ত প্রজেক্ট ইঞ্জিনিয়ার মিন্টু দেব জানান, ঠিকাদার কাউকে না জানিয়ে গোপনে নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে মন্দিরের ছাঁদের একাংশ ঢালাই করে ফেলেন। এখানে নিয়ম ছিলো আমাকে ও কার্যকরি কমিটিকে জানানো। এটা না করে তিনি যে কাজ করেছেন সেটা অন্যায় এবং অপরাধ। বিষযটি ধর্ম মন্ত্রণালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী হরিকিঙ্কর মোহান্তকে জানানো হয়েছে। নির্বাহী প্রকৌশলী বলেছেন নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করে ছাঁদ নির্মাণ হওয়ায়, এই ছাঁদ টেকসই হবে না। এটা ভেঙে নতুন করে ছাঁদ ঢালাই ও অন্যান্য কাজ সঠিকভাবে করতে হবে। এবং ঠিকাদারের বিরুদ্ধে নিয়ম অনুযায়ী শাস্তিমুলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। নির্মাণ কাজের বিল বাকি রয়েছে সে বিষয়েও ভাবা হবে।
নিন্মমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করার অভিযোগ করেন এলাকাবাসী বশির মিয়া, মিনু মিয়া, সুব্রত বৈদ্য, রাজ সরকার।
তারা জানান, একটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের স্থায়ী কাজ এটি। এই কাজ সরকারি বরাদ্দের। এখানে ঠিকাদার দ্বারা এই পুকুর চুরি হলে বাকিগুলোর কি অবস্থা হবে। ইঞ্জিনিয়ার ও কার্যকরী কমিটির চলমান কাজে ঠিকমতো তদারকি না করায় এই অবস্থা বলেও অভিযোগ করেন তারা।

মৌলভীবাজার কেন্দ্রীয় কালীবাড়ীর কার্যকরী কমিটির সভাপতি মনবীর রায় মঞ্জু এবং সাধারন সম্পাদক নিলিমেষ ঘোষ বলু জানান, ঠিকাদার আমাদের না জানিয়ে ছাঁদ ঢালাই শুরু করেন। নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করা হচ্ছে এমন অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নির্মাণ কাজ বন্ধ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে আমরা নিয়মিত তদারকি করছি। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে আনা হয়েছে । তারা আশ্বাস দিয়েছেন আংশিক নির্মানাধীন ঢালাই ভেঙ্গে দরপত্র মোতাবেক কাজ করা হবে।
“বাবা গাছপীর কন্সট্রাকশন’ নামে প্রতিষ্ঠান এর দায়িত্ব প্রাপ্ত ঠিকাদার জয়নাল চৌধুরীকে ফোন দিলে, ফোন রিসিভ করে এ বিষয়ে তিনি কথা বলতে অনিহা প্রকাশ করেন ।
মৌলভীবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাবরিনা রহমান নির্মাণাধীন মন্দির পরিদর্শন করে জানান, নির্মাণ কাজ দেখেছি, কাজ নিম্নমানের হচ্ছে। নির্দেশ দেয়া হযেছে নির্মিত ছাঁদ ভেঙে নতুন করে ঢালাই কাজ করতে হবে।
পাশাপাশি কার্যকরি কমিটি থেকে প্রতিদিন দু’জন রেখে দেখাশোনার নির্দেশ দিয়েছেন বলে তিনি জানান।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

লাইভ রেডিও

Calendar

March 2024
S M T W T F S
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31