২রা মে ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৯শে বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৭:০০ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ৩০, ২০২০
কামরুজ্জামান হিমু
গত ২৯ অক্টোবর লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম বুড়িমারীতে কোরআন অবমাননার দায়ে মানসিক ভারসাম্যহীন এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যা করে আগুনে তার মৃতদেহ পুড়িয়ে দিয়েছে স্থানীয় উগ্র ধর্মান্ধ কিছু মানুষ। বর্বর, মধ্যযুগীয় এ ঘটনার সাথে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার ও বিচার দাবি করে বিবৃতি দিয়েছেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মাসুদ রানা এবং সাধারণ সম্পাদক রাশেদ শাহরিয়ার। বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন- ‘একটি সভ্য সমাজে এভাবে মানুষ হত্যা অকল্পনীয়। সারাদেশের বিবেকবান মানুষ এতে হতবাক হয়ে গেছে। দেশে যেকোন অপরাধ সংগঠিত হলে তার বিচার প্রচলিত আইন অনুযায়ী হওয়া উচিত। কিন্তু লালমনিরহাটের ঘটনায় পরিলক্ষিত হল আইনের কোন তোয়াক্কা না করে পিটিয়ে একজন মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষকে হত্যা করা হল। স্থানীয়ভাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে থাকা পুলিশ, প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি, সরকারি দলের নেতাকর্মী কেউই এই ঘটনার দায় এড়াতে পারে না। উত্তেজিত জনতাকে নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব ছিল তাদের অথচ পুরো ঘটনায় তারা ছিল নির্বিকার।’
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ আরও বলেন -‘ গত কয়েক বছরে রাস্তাঘাটে পিটিয়ে মানুষ হত্যার ঘটনা বেড়েছে। এসব ঘটনা বৃদ্ধির কারণ বিচারহীনতার সংস্কৃতি। ভোটারবিহীন নির্বাচনের মাধ্যমে জোরপূর্বক ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত আওয়ামিলীগ সরকার ভিন্নমত দমনে রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন বাহিনীর দ্বারা বিচারবহির্ভূত হত্যা,গুম-খুন, নির্যাতন করছে। অপরদিকে সরকার দলীয় অপরাধীরা নানা অপরাধ করেও ক্ষমতার জোরে পার পেয়ে যাচ্ছে। এসবের ফলে জনগণের প্রচলিত বিচার ব্যবস্থার প্রতি আস্থা হারিয়ে গেছে। ফলে সকল অপরাধের সুষ্ঠু বিচারের জন্য রাষ্ট্রকে বাধ্য করতে জনমত গড়ে তোলা উচিত।’
নেতৃবৃন্দ আরও বলেন-‘ আমাদের দেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ধর্মীয় উগ্রতা বাড়ছে। পুঁজিবাদী শোষণের ফলে সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক সংকট, বেকারত্ব চরমে পৌঁছেছে। করোনা মহামারী এ পরিস্থিতিকে আরও তীব্র করেছে। ফলে এ অবস্থায় সাধারণ মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে খাদ্য, চিকিৎসা, কাজের দাবিতে রাস্তায় নামবে এটাই স্বাভাবিক । কিন্তু শাসকগোষ্ঠী পরিকল্পিতভাবে মানুষের মাঝে বিভেদ তৈরির জন্য ধর্ম-বর্ণ-জাতি ভিত্তিক উন্মাদনা তৈরি করছে। মহান মুক্তিযুদ্ধে সাম্প্রদায়িক পাকিস্তানি শাসকদের বিরুদ্ধে রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্ম। কিন্তু স্বাধীনতার পর থেকে পুঁজিবাদী শোষণ টিকিয়ে রাখার স্বার্থে প্রত্যেক সরকার সাম্প্রদায়িক রাজনীতির আশ্রয় নিয়েছে। বর্তমান অবৈধ সরকার তার সকল অপরাধ ঢাকতে ঢাল হিসেবে ধর্মকে ব্যবহার করছে। ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে মানবিক মূল্যবোধ, যুক্তিবাদী মন গড়ে তোলার বদলে বাড়ছে যুক্তিহীন উন্মাদনা। আর এই উন্মাদনার বলি হল লালমনিরহাটের মানসিক ভারসাম্যহীন সাবেক কলেজ শিক্ষক।’
নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে লালমনিরহাটের ঘটনায় সরাসরি জড়িতদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবি জানান এবং স্থানীয় পুলিশ, প্রশাসন, জনপ্রতিনিধিদের নির্বিকারত্বের কারণ অনুসন্ধানের দাবি জানান।
এদিকে
লালমনিরহাট জেলার পুলিশ জানিয়েছে, পাটগ্রাম এলাকায় শত শত মানুষ একজন ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যার পর তার মৃতদেহ আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে।
পুলিশ কর্মকর্তারা বলেছেন, এক মসজিদে আছরের নামাজের পর ঐ ব্যক্তি ধর্মের অবমাননা করেছেন, এমন গুজব ছড়িয়ে পড়লে শত শত মানুষ জড়ো হয়ে তাকে পিটিয়ে হত্যা করে।
এখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বলে পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
শত শত মানুষ জড়ো হয়ে পিটিয়ে ঐ ব্যক্তিকে হত্যা করে তার মৃতদেহে আগুন দেয়ার ঘটনাটি ঘটেছে পাটগ্রামের বুড়িমারি ইউনিয়নে।
পিটিয়ে একজনকে হত্যা এবং রক্তাক্ত একটি মৃতদেহ আগুন দিয়ে পোড়ানোর ভিডিও ইতোমধ্যে সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।
লালমনিরহাট জেলার পুলিশ সুপার আবিদা সুলতানা বলছেন, যতটুকু শুনেছি দু’জন লোক মসজিদে হোন্ডা (মোটরসাইকেল) নিয়ে নামাজ পড়তে এসেছিল। আসরের নামাজ। তো নামাজ পড়া শেষে, যে কোনো কারণেই হোক তাদের সঙ্গে মসজিদে যারা ছিল, তাদের সাথে কথা কাটাকাটি হয়। ওনারা নাকি একটা শেলফে পা দিয়েছিলেন। তো সেটা নিয়ে কেউ বলছেন কোরআন শরীফের ওপর পা পড়েছে- এরকম একটা গুজব হয়তো ছড়িয়ে পড়েছে।”
পুলিশ সুপার আরও বলেন, “তখন অনেক লোকজন জড়ো হয়ে যায়। সেসময় পুলিশ আসে। এর মধ্যে ইউনিয়ন পরিষদের একজন মেম্বার তাকে নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের একটা রুমের মধ্যে আটকে রাখে। পরে পুলিশ আসলে হ্যান্ডওভার করবে এরকম। পুলিশ আসার মধ্যেই অনেক লোক জড়ো হয়ে ইউনিয়ন পরিষদের গ্রিল ভেঙে বিভিন্ন দিক দিয়ে লোকজন ঢোকে।
”দুজন ছিল। তাদের একজনকে জোর করে নিয়ে যায়। ওসি একজনকে রেসকিউ করে সরিয়েছে। আরেকজনকে তারা ওইখানে পিটিয়ে মেরেছে। লাশটা তারা নিয়ে গেছে এবং আগুন দিয়েছে,” বিবিসিকে বলেন পুলিশ সুপার আবিদা সুলতানা।
তিনি আরও জানান, সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করে তারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়েছেন।
যে ব্যক্তিকে সেখানে হত্যা করা হয়েছে, তার পরিচয় সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু তারা এখনও জানতে পারেন নি।
তবে সেই ব্যক্তির সাথে থাকা একজন, পুলিশ যাকে রক্ষা করতে পেরেছে, তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।
RED TIMES LIMITED
116-117, Concord Emporium,
Kataban, Dhaka-1205.
Mobile: 017111-66826
Email: redtimesnews@gmail.com