‘নিরপরাধ’ ড. ইউনুসকে বিবৃতি আনতে শত কোটি খরচ করতে হয় কেন?

প্রকাশিত: ৮:৫৪ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২, ২০২৪

‘নিরপরাধ’ ড. ইউনুসকে বিবৃতি আনতে শত কোটি খরচ করতে হয় কেন?

বিশ্বজিৎ দত্ত

২০০৬ সালে মুহাম্মদ ইউনূস নোবেল শান্তি পুরস্কার লাভ করেন। তখন থেকে ভাবা হয়েছিল তিনি বুঝি দেশের জন্য সম্মান বয়ে আনবেন। কিন্তু তার বিরুদ্ধে মামলা হওয়ার পরে সেই ধারণা ভেঙে যায়।

একজন নোবেল জয়ী অর্থনীতিবিদ, তিনি দেশের অর্থনীতি নিয়ে কাজ করবেন, শ্রমিকদের বেতন-ভাতা নিয়মিত দেবেন সেই জায়গায় তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে শ্রম আদালতে। কারা মামলা করেছে? শ্রমিকরা। এটা খানিকটা পীড়া দেয়।
সেই পীড়ার আকার আরও বড় হয় যখন জানা যায়, এই যেন এত এত বিদেশি ড. ইউনুসের পক্ষে বলছেন, পৃথিবীর এত এত জায়গায় ড. ইউনুস সম্পর্কে ইতিবাচক কলাম লেখা হচ্ছে সবকিছুর পেছনে অর্থ জড়িত। অর্থাৎ কেউই বিনামূল্যে বা নিজ থেকে প্রণোদিত হয়ে ড. ইউনুস সম্পর্কে লেখেননি বা বলেননি।
ড. ইউনূস ‘অন্যায় আচরণের শিকার’—এমন অভিযোগ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে খোলা চিঠি লিখেছিলেন বিশ্বের ৪০ বিশিষ্ট ব্যক্তি। যা গত ৭ মার্চ মার্কিন দৈনিক ওয়াশিংটন পোস্টে বিজ্ঞাপন আকারে প্রকাশ করা হয়। ভাবা যায়? তারা একজন অর্থনীতিবিদের জন্য নিজ থেকে প্রণোদিত হয়ে লিখবেন। তা না হয়ে, সেই লেখা বিজ্ঞাপন আকারে প্রকাশ করা হয়েছে।
প্রবাদ আছে, ধর্মের ঢোল বাতাসে নড়ে। ড. ইউনুসের যদি নিষ্ঠাবান কেউ হতেন তবে তার যে নেটওয়ার্ক, সেই নেটওয়ার্কের কারণে বিশ্বের বিভিন্ন অর্থনীতিবিদরা স্বেচ্ছায় কথা বলবেন, প্রতিবাদ করবেন। তা ঘটেনি। ঘটেছে উল্টো ঘটনা। ড. ইউনুস বিশ্বের বিভিন্ন বিশিষ্ট ব্যক্তিদের বাধ্য করেন তার পক্ষে লিখতে, কথা বলতে এবং বাংলাদেশ সরকারকে চাপ দিতে।
এটা জানার পর কি আর মনে হবে একজন অর্থনীতিবিদ, যিনি নোবেল শান্তি পুরস্কার পেয়েছেন তিনি আসলেই দেশের সম্মান বয়ে এনেছেন? অবশ্যই না।
২৯ জানুয়ারি ২০২৪ সোমবার ওয়াশিংটন পোস্টের এ-৭ নম্বর পৃষ্ঠায় ড. ইউনুসের বিজ্ঞাপনটি প্রকাশিত হয়। ড. ইউনুসের পক্ষে প্রকাশিত বিজ্ঞাপনটি ছিল ৫ কলাম ১৯ ইঞ্চি। সাদাকালো পাতায় প্রতি কলাম ইঞ্চি বিজ্ঞাপনের জন্য তারা ৮০৭ ডলার চার্জ করে। ফলে এর পেছনে খরচ হয়েছে কমপক্ষে ৭৬ হাজার ডলারের বেশি, অর্থাৎ বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৮৫ লাখ টাকারও। এটি শুধু বিজ্ঞাপন প্রকাশের খরচ। বিজ্ঞাপন বানাতে অর্থাৎ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নাম ব্যবহার করতে আলাদা টাকা দিতে হয়েছে। যে বিজ্ঞাপনী সংস্থা এ বিজ্ঞাপনটি তৈরি করেছে, অর্থাৎ যারা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ম্যানেজ করেছে, তাদের ফি আলাদা। এইভাবে হিসাব করলে ২৯ জানুয়ারি ২০২৪ সোমবার ওয়াশিংটন পোস্টে ড. ইউনুসের যে বিজ্ঞাপন প্রকাশিত হয়েছে তার মোট খরচ বাংলাদেশি টাকায় প্রায় কোটি টাকার বেশি।
কোটি টাকা খরচ করে ড. ইউনুস দুইটা বিষয় পরিষ্কার করলেন। প্রথমত, মানুষ হিসেবে তিনি আসলে অসৎ। দ্বিতীয়ত, বাইরের দেশে ড. ইউনুসের মতো একজন ব্যক্তি যেভাবে দেশকে তুলে ধরলেন তাতে, দেশের ভাবমূর্তি ক্ষূণ্ন হলো।
এবার ফিরি সেই বিবৃতি প্রসঙ্গে। বিশ্বের ৪০ বিশিষ্ট ব্যক্তি যে বিবৃতি দিয়েছেন তা কিন্তু বিজ্ঞাপন আকারেই প্রকাশিত হয়েছে। এই যে বিজ্ঞাপন আকারে তা প্রকাশিত হলো। এর খরচ আসলে কত? ধারণা করা হচ্ছে এই বিবৃতিতেও প্রায় কয়েক কোটি টাকা খরচ হয়েছে। কারণ ২৯ জানুয়ারি ২০২৪ সোমবার ওয়াশিংটন পোস্টের প্রকাশিত বিজ্ঞাপন আর ৭ মার্চ মার্কিন দৈনিক ওয়াশিংটন পোস্টে প্রকাশিত বিজ্ঞাপন কিন্তু এক নয়।
বিশ্বের ৪০ বিশিষ্ট ব্যক্তিদের রাজী করাতেও নিশ্চয় বিশাল অংকের টাকা খরচ করতে হয়েছে। টাকার অঙ্কের হিসাবে এই ৪০ জন বিশিষ্ট ব্যক্তিদের রাজী করাতেই কয়েক কোটি টাকা খরচ হয়ে যাওয়ার কথা এবার সেই বিবৃতি লেখা, ডিজাইন, এজেন্সি ম্যানেজ করা, বিজ্ঞাপনদাতার সাথে আলাপ করা, বিজ্ঞাপন দেওয়া সব মিলিয়ে এই অঙ্ক আমাদের ধারণারও বাইরে।
প্রসঙ্গ ছিল ‘নিরপরাধ’ ড. ইউনুসকে বিবৃতি আনতে শত কোটি খরচ করতে হয় কেন? কেন খরচ করতে হয় তা নিশ্চয় এখন পরিষ্কার হলো।

বিশ্বজিৎ দত্ত, গণমাধ্যমকর্মী