পরকীয়ায় কোরবানী হলেন যুবদল নেতা ?

প্রকাশিত: ১:৪৭ পূর্বাহ্ণ, জুন ১৫, ২০২১

পরকীয়ায় কোরবানী হলেন যুবদল নেতা ?

পাবনা শহরের শালগাড়িয়ায় বহুল আলোচিত যুবদলনেতা অপহরণ, হত্যা ও লাশ গুমে সরাসরি জড়িত থাকার অভিযোগে আরও এক দম্পতিকে গ্রেপ্তার করেছে পিবিআই। গতকাল রোববার রাতে পিবিআইয়ের একটি দল পাবনা জেলার ফরিদপুর উপজেলার ধানুয়াঘাটা বাজার থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে।

গ্রেপ্তার হওয়া দম্পতি হলেন আটঘরিয়া উপজেলার গঙ্গারামপুর গ্রামের মো. কাসেম মণ্ডল (৫০) ও তাঁর স্ত্রী শিউলি বেগম (৪২)। আজ সোমবার দুপুরে তারা হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন।

পিবিআই পাবনার পুলিশ সুপার মো. ফজলে এলাহী জানান, গত ৩১ মার্চ সন্ধ্যায় পাবনা শহরের শালগাড়িয়া গোরস্তানপাড়ার তোফাজ্জল হোসেনের ছেলে ও পাবনা জেলা যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান আলী (৪০) নিখোঁজ হন। এ বিষয়ে শাহজাহানের পরিবার গত ১ এপ্রিল পাবনা সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে। পরে ৫ এপ্রিল দুপুরে আটঘরিয়া উপজেলার গঙ্গারামপুর এলাকার মো. কাসেম মণ্ডলের বাড়ির টয়লেটের সেপটিক ট্যাংক থেকে একটি লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরিবারের লোকজন ওই লাশ শাহজাহানের বলে শনাক্ত করে। এ বিষয়ে অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ভিকটিমের ভাই মো. আব্দুল গফুর এজাহার দায়ের করলে মামলাটি প্রথমে পাবনা সদর থানা পুলিশ তদন্ত শুরু করে। পরবর্তী সময়ে পিবিআইয়ের ওপর তদন্তভার ন্যস্ত হয়।

পিবিআইয়ের তদন্তকারী কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) মো. সবুজ আলী বলেন, শাহজাহান আলীর সঙ্গে একই এলাকার যুথী আক্তার আদুরির (২৮) পরকীয়া চলছিল। পরকীয়ায় টানাপোড়েনের একপর্যায়ে শাহজাহানের প্রতি অতিষ্ঠ হয়ে আদুরি তাঁকে হত্যার পরিকল্পনা করেন।

সবুজ আলী আরও বলেন, আসামি আদুরি তার পরিবারসহ যে বাসায় ভাড়া থাকতেন তার মালিক চট্টগ্রামে বসবাস করেন। ওই বাসার দেখাশোনাসহ সার্বিক দায়িত্ব ছিল ভিকটিম শাহাজাহানের ওপর। আদুরির ভাড়া বাসা সংলগ্ন নয়ন ফটোস্ট্যাটের দোকানটিও ভিকটিম শাহজাহানের। সেই সুবাদে তাদের মধ্যে মাঝেমধ্যে দেখা-সাক্ষাৎ হতো। পরে মোবাইল ফোনে কথা বলতে বলতে তারা পরকীয়ায় জড়ান। শাহজাহান ব্যক্তিজীবনে অবিবাহিত ছিলেন। ভিকটিম শাহজাহান আদুরিকে স্ত্রীর মতো ব্যবহার করতে চাইতেন। কিন্তু আদুরি একপর্যায়ে শাহাজাহানের প্রতি প্রচণ্ড অতিষ্ঠ ও বিরক্ত হয়ে সব ঘটনা তাঁর পরিবারকে খুলে বলেন। তখন আদুরি তাঁর স্বামী জাহাঙ্গীর আলম, তাদের পরিবারেরই মো. ইব্রাহীম, বোন শিউলি ও দুলাভাই কাসেম মণ্ডলের সঙ্গে শাহজাহানকে হত্যার পরিকল্পনা করেন।

পরিকল্পনার অংশ হিসেবে আদুরির স্বামী জাহাঙ্গীর আলম ভিকটিম শাহজাহানকে হত্যার জন্য ১০টি ঘুমের বড়ি কিনে দেন তাঁকে। নীলনকশা অনুযায়ী আদুরি ভিকটিমকে হত্যার জন্য শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের প্রলোভন দেখান। পরে ৩১ মার্চ সুকৌশলে আটঘরিয়া থানার গঙ্গারামপুরে দুলাভাই কাসেম মণ্ডলের বাড়িতে নিয়ে যান। ওই বাড়িতে আদুরি ও বোন শিউলি পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক খাবারের মধ্যে ১০টি ঘুমের বড়ি মিশিয়ে ভিকটিমকে খাওয়ান। ওই খাবার খেয়ে ভিকটিম ঘুমিয়ে পড়লে আদুরি, তাঁর স্বামী জাহাঙ্গীর আলম, কাসেম, শিউলি ও ইব্রাহীম ভিকটিমকে অচেতন অবস্থায় হাত-পা চেপে ধরে গলার রশি পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন। একপর্যায়ে তারা লাশ গুম করতে বস্তাবন্দি করেন। পরে কাসেম মণ্ডলের বাড়ির টয়লেটের সেপটিক ট্যাংকে ফেলে দিয়ে খড়-কুটা দিয়ে ঢেকে রাখেন। এরপর আসামিরা বিভিন্ন স্থানে পালিয়ে যান বলে জানান।

উল্লেখ্য, এই মামলার ঘটনায় এর আগে আসামি মো. ইব্রাহীম প্রামাণিক (৩২), আদুরী (২৮) ও তার স্বামী মো. জাহাঙ্গীর আলমকে (৩৮) ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়। আদালতে হত্যাকাণ্ডে সরাসরি সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে তারা জবানবন্দি দেন।

গ্রেপ্তারকৃত আসামি কাসেম মণ্ডল ও শিউলিকে আজ সোমবার আদালতে সোপর্দ করা হলে তারা শাহাজাহানকে সুকৌশলে অপহরণ, হত্যা ও লাশ গুম করার ঘটনায় জড়িত বলে স্বীকার করে জবানবন্দি দেন।

পিবিআই পাবনার পুলিশ সুপার মো. ফজলে এলাহী বলেন, মূলত পরকীয়ার কারণেই শাহজাহান খুন হয়েছেন। এই মামলার সব আসামিই ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেওয়ায় খুব শিগগির চার্জশিট প্রদান করা সম্ভব হবে।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

লাইভ রেডিও

Calendar

March 2024
S M T W T F S
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31