প্রকৃত লেখক একটু অহংকারী হন।

প্রকাশিত: ১২:৪৯ অপরাহ্ণ, মে ১৯, ২০২৩

প্রকৃত লেখক একটু অহংকারী হন।

 

জাকির তালুকদার

 

প্রকৃত লেখক একটু অহংকারী হন।
এই অহংকার তার আত্মর্যাদা রক্ষার বর্ম।
অহংকার তিনি অন্য লেখককে দেখান না।
শুধু যেসব অনুষ্ঠান বা প্রতিষ্ঠান তার জন্য যথাযোগ্য সম্মানের ব্যবস্থা করে না, তাদের দেখান।
রবীন্দ্রনাথের কাছে গান্ধী আসতেন। নেহরু আসতেন। রবীন্দ্রনাথ যেতেন না। আমার কাছে রাষ্ট্রপতি আসবেন না নিশ্চয়ই। তবে আমিও তাঁর কাছে যাব না।
যে সাহিত্যের অনুষ্ঠানে মন্ত্রী, এমপি, প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের নামের নিচে লেখকের নাম থাকে, প্রকৃত লেখক সেই অনুষ্ঠানে যান না। প্রকৃত লেখক কারো কাছে কোনো পদ-পদবি-প্রজেক্ট পেতে যান না। নিজের কোনো সুপারিশ নিয়ে যান না।
অনেক পদধারী ব্যক্তি লেখকের বন্ধু এবং গুণগ্রাহী থাকেন। লেখক তাদের সাথে আড্ডা দেন, সময় কাটান, কিন্তু নিজের জন্য কিছু চান না। সেই কারণেই বন্ধুত্ব মর্যাদাপূর্ণ থাকে।
প্রকৃত লেখক কখনো মন্ত্রী, এমপি, সরকারদলীয় নেতা, সচিব, ডিসি, ইউএনও বা কোনো বিভাগের কর্মকর্তাকে নিজের লেখা বই উপহার দিতে যান না। তাদের সাথে ফটো তুলে ফেসবুকে পোস্টান না।
প্রকৃত লেখক গ্রুপ, জোট, ঘোঁট পাকান না। ওসব তৃতীয় শ্রেণীর লেখকরা করেন। উদ্দেশ্য থাকে পরস্পরের পিঠ চুলকানি আর কোনো স্বার্থসিদ্ধি।
লেখকদের সংগঠন কোনোদিন লেখক তৈরি করতে পারে না। তবে সংগঠন দরকার হয় অন্যায়ের প্রতিবাদ করার জন্য, প্রকৃত গুণীদের সম্মান জানানোর জন্য। তবে তারা সচরাচর স্পন্সর নেন না। নিজেদের চাঁদায় অনুষ্ঠান করেন। অন্যদিকে জোট-ঘোঁট পাকানো লোকদের উদ্দেশ্যই থাকে অনুষ্ঠানে কাকে কাকে আনলে তাদের কাছ থেকে বিনিময়ে কিছু স্বার্থসিদ্ধি করা যাবে, স্পন্সর পাওয়া যাবে– এমন বেগুণীদের নিয়ে অনুষ্ঠান করা।
যে মিডিয়া বা পত্রিকা বা প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান লেখকদের যথাযোগ্য সম্মান দেয় না, লেখার চাইতে পদধারীর ওজন দেখে, তোষামোদির লেখা প্রকাশ করে, প্রকৃত লেখক সেগুলোর দিকে ফিরেও তাকান না।
এই অহংকার আসে নিজের কলমের শক্তির ওপরে আস্থা থেকে। তবে তা বোকা বা মূর্খের আস্থা নয়।
[লেখক বলতে কবি, কথাসাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক, নাট্যকার, গীতিকার– সবাইকে বোঝানো হয়েছে।]