প্রধানমন্ত্রীর পাশে আবার মাল মুহিত

প্রকাশিত: ১২:১৭ পূর্বাহ্ণ, জুন ১৫, ২০১৯

প্রধানমন্ত্রীর পাশে আবার মাল মুহিত

সৌমিত্র দেব

তিনি এখন আর অর্থমন্ত্রী নন,অর্থ উপদেষ্টা নন, এমনকি সংসদ সদস্যও নন ।তবু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাজেট-উত্তর সংবাদ সম্মেলনে আজ ঠিক তার পাশের আসনেই বসেছিলেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত । আজ বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
বাজেটের পরের দিনটি অর্থমন্ত্রী বাজেটের খুঁটিনাটি বিষয় সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন- এমনটা এতদিন হয়ে আসলেও এদিন তিনি অসুস্থ থাকায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংবাদ সম্মেলন করে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।
এরআগে গতকাল বৃহস্পতিবার বর্তমান সরকারের নতুন মেয়াদের প্রথম বাজেট উপস্থাপনকালে অর্থমন্ত্রী অসুস্থ বোধ করলে প্রধানমন্ত্রী তাঁর পক্ষে বাজেট বক্তৃতার বাকি অংশ পাঠ করে ব্যতিক্রমী নজির সৃষ্টি করেন।
টানা ১০ বছর প্রধানমন্ত্রীর পাশে দাঁড়িয়ে বাজেট বক্তৃতা করেছেন আবুল মাল আব্দুল মুহিত । এবার মন্ত্রী পরিষদ ঘোষণার পর বিদায় সম্বর্ধনায় সাবেক অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট প্রণয়নে তিনি বর্তমান অর্থমন্ত্রীকে সহযোগিতা করবেন । বাজেটের বিশাল আকার দেখে তার কথার মিল পাওয়া যাচ্ছে । সম্প্রতি তিনি গণমাধ্যমে খোলাখুলি বলেছেন , ‘আমার তৈরি করা কাঠামোতেই নতুন বাজেট তৈরি করছেন বর্তমান অর্থমন্ত্রী। এখানে বরাদ্দের ফিগার এবং সরকারের নতুন কর্মসূচি ছাড়া নতুন কিছু নাই। বাজেট ভালো হবে, এটি আমার বিশ্বাস।’
এটি দেশের ৪৮তম এবং বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের তৃতীয় মেয়াদের প্রথম বাজেট। দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বাজেট এটি।
‘সমৃদ্ধ আগামীর পথযাত্রায় বাংলাদেশ : সময় এখন আমাদের, সময় এখন বাংলাদেশের’ শ্লোগান সম্বলিত এ প্রস্তাবিত বাজেটে মোট রাজস্ব আয় ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৭৭ হাজার ৮১০ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সূত্রে আয় ধরা হয়েছে ৩ লাখ ২৫ হাজার ৬শ’ কোটি টাকা। এছাড়া, এনবিআর বহির্ভূত সূত্র থেকে কর রাজস্ব ধরা হয়েছে ১৪ হাজার ৫শ’ কোটি টাকা। কর বহির্ভূত খাত থেকে রাজস্ব আয় ধরা হয়েছে ৩৭ হাজার ৭১০ কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত বাজেটে পরিচালনসহ অন্যান্য খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ লাখ ২০ হাজার ৪৬৯ কোটি টাকা। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে ২ লাখ ২ হাজার ৭২১ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে।
প্রস্তাবিত বাজেটে সার্বিক বাজেট ঘাটতি ১ লাখ ৪৫ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা দেখানো হয়েছে, যা জিডিপির ৫ শতাংশ। এ ঘাটতি অর্থায়নে বৈদেশিক সূত্র থেকে ৬৮ হাজার ১৬ কোটি টাকা, অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ৭৭ হাজার ৩৬৩ কোটি টাকা। অভ্যন্তরীণ উৎসের মধ্যে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ৪৭ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা এবং সঞ্চয়পত্র ও অন্যান্য ব্যাংক বহির্ভূত উৎস থেকে ৩০ হাজার কোটি টাকা সংস্থানের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
প্রস্তাবিত বাজেটে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৮ দশমিক ২ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া প্রস্তাবিত বাজেটে মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।
সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত, কৃষি মন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, বাণিজ্য মন্ত্রী টিপু মুন্সী, শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন,পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্ণর ফজলে কবির মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।
অর্থ সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন।
অনুষ্ঠানে মন্ত্রি পরিষদ সদস্যবৃন্দ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাবৃন্দ, সংসদ সদস্যবৃন্দ, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, সচিব সহ পদস্থ কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
পূর্বঘোষণা অনুযায়ী, শুক্রবার বিকেল ৩টায় এ সংবাদ সম্মেলন শুরু করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি ১০ শতাংশ অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা নেয়া হয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেট সেই লক্ষ্যমাত্রার পথে বাংলাদেশকে নিয়ে যাবে।
তিনি বলেন, বাজেট ঘাটতি জিডিপির ৫ শতাংশের মধ্যে রাখা হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, কৃষি খাতের উন্নয়নে ২০ শতাংশ প্রণোদনা অব্যাহত থাকবে।
ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দেয়া হবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের ৯৩ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। উৎপাদন ক্ষমতা এখন ২১ হাজার ১৬৯ মেগাওয়াট। শতভাগ মানুষ বিদ্যুৎ পাবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা আমরা অর্জন করবো। সে লক্ষ্যে কাজ করছে সরকার।
গ্রামের উন্নয়নে সরকারের বিশেষ দৃষ্টি অব্যাহত থাকবে জানিয়ে তিনি বলেন, গ্রাম হবে আধুনিক শহর।
তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়ন আরও গতি পাবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দ্রুততম সময়ে ফাইভ-জির ব্যবস্থা করা হবে।
দেশের নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা হবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে তিন কোটি নতুন কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে।
কৃষিখাতে সরকারের ভর্তুকি-প্রণোদনা অব্যাহত থাকবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন ফসলের উৎপাদন বাড়াতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ ও প্রণোদনা থাকবে। কৃষি ভুর্তকি, ঋণ ও কৃষিপণ্য রফতানির ক্ষেত্রে প্রণোদনাও থাকবে।
তিনি জানান, নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে এবারের বাজেটে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দাবির প্রেক্ষিতে বন্ধ থাকা এমপিওভুক্তির কাজ শুরু হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এবার স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। স্বাস্থ্য উন্নয়নের মাধ্যমে চিকিৎসা ও অন্যান্য সামাজিক সুবিধা নিশ্চিতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ৮টি মেডিকেল কলেজে নিউক্লিয়ার মেডিসিন ইনস্টিটিউট খোলা হবে।
প্রস্তাবিত বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) জন্য ২ লাখ ২ হাজার ৭২১ কোটি টাকার বরাদ্দ রাখা হয়েছে বলে প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।
এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ১ লাখ ৩০ হাজার ৯২১ কোটি টাকা এবং বৈদেশিক সহায়তা থেকে ৭১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা ব্যয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। নতুন এডিপিতে পদ্মা সেতু ও পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগসহ সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে পরিবহন খাতে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে দেশের উন্নয়ন কর্মকা- ও বাজেট নিয়ে বিভিন্ন সংস্থার প্রতিক্রিয়া প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বদরবারে বাংলাদেশের উন্নয়ন কর্মকা- প্রশংসিত হলেও কারও কারও এটা ভালো লাগে না। আসলে ‘ভালো না লাগা পার্টি’র কিছুই ভালো লাগে না।
কিছু সংস্থার পক্ষ থেকে প্রতিক্রিয়ায় বলা হচ্ছে, প্রস্তাবিত বাজেটে স্বচ্ছল ও উচ্চ আয়ের মানুষকে বেশি সুবিধা দেওয়া হয়েছে।
এ ধরনের প্রতিক্রিয়ার বিষয়ে একজন সাংবাদিকের একটি প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা কী গবেষণা করেন আমি জানি না। এতো সমালোচনা করেও আবার বলবে, আমরা কথা বলতে পারি না। আমার কথা হচ্ছে, সাধারণ মানুষ খুশি কি-না। তারা লাভবান হচ্ছে কি-না, এটাই দেখার বিষয়। আজকে আমাদের এগারোতম বাজেট। এটা দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বাজেট। এর সুফল সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছাবে।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

লাইভ রেডিও

Calendar

March 2024
S M T W T F S
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31