মনু নদীর হাজার কোটি টাকার প্রকল্প নিয়ে কিছু কথা………

প্রকাশিত: ২:২০ পূর্বাহ্ণ, জুন ২১, ২০২২

মনু নদীর হাজার কোটি টাকার প্রকল্প নিয়ে কিছু কথা………

এম খছরু চৌধুরী

 শুধুমাত্র উজানের ঢলে ২০১৮ সালের অপ্রত্যাশিত প্রলয়ঙ্করী ও সর্বনাশা বন্যার পর মনু নদের বন্যাপ্রতিরোধী স্থায়ী  বাঁধ  মেরামত, নদী খনন তথা নদী শাসন ইত্যাদি প্রকল্পে সরকার প্রায় ১ হাজার কোটি টাকার এক বিশাল কর্মযজ্ঞ হাতে নেন।

হাওর কাউয়া দীঘির মনু ব্যারেজ প্রকল্প বাদ দিলে এককভাবে মৌলভীবাজার জেলায় ইতিপূর্বে এত বড় ধরণের আর কোনো বরাদ্দ হয়েছিল বলে আমার জানা নেই।

 

 

পাউবি সূত্রের তথ্যমতে ২০২১ সাল থেকে শুরু হওয়া এ কার্যক্রম সম্পাদনের মেয়াদ ২০২৩ সাল পর্যন্ত। তারমানে দাঁড়ায়, অর্ধেকের বেশী সময় গত হলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। টিকাদারী প্রতিষ্ঠানগুলো স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, জনগণের দৃষ্টির আড়ালে থেকে কি কি কাজ সম্পন্ন করলেন তা বুঝার সাধ্য নেই আমার মত অনেকের। সিলেট ও সুনামগঞ্জের বন্যাজনিত মানবিক বিপর্যয়ে প্রতিমূহুর্তে ভয়ের মধ্যে আছি – কখন যে জেলা শহরের রক্ষাবাধ ভাঙছে, মনু বা কুশিয়ারার ব্যারিবাধ ভেঙে যায় কি না? কেটে দেয়া হয় কি না? আজ উপজেলা আওয়ামী লীগ এর সাধারণ সম্পাদক ও মনসুরনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিলন বখত্ এর সাথে গিয়েছিলাম মনু নদের টাল-মাটাল অবস্থা দেখতে।

উপস্থিত পাউবির কর্মকর্তা, সাংবাদিক, টিকাদারী প্রতিষ্ঠানের লোকজন ও টেংরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান টিপু খান সহ সমবেত গণ্যমান্যদের সামনে আতংকিত স্থানীয় জনগণের অভিযোগের অন্ত ছিলোনা। বাঁধের ২ দিকে ডাম্পিং এর বালুর বস্তা যথা সময়ে তো দেয়াই হয়নি, উপরন্তু এখন বস্তার বালু নদীতে ফেলে দিয়ে টিকাদারী প্রতিষ্ঠানের লোকজন ডাম্পিং বস্তার সংখ্যা পরিমাণে বাড়াচ্ছেন!

মনু নদের ড্রেজিং ৮০ বা ৯০ কিলোমিটারের বেশী হবে না। আর আগের স্থায়ী বাধের প্রয়োজনীয় মেরামত ও জায়গা বিশেষে ডাম্পিং সহ বাধ মেরামত ই হলো মূল কাজ। এটা করতে হয় শুকনো মৌসূমে। নানা ধরণের তালবাহানা করে টিকাদারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কালক্ষেপণের উদ্দেশ্য ই থাকে বর্ষা মৌসূম আসলে বন্যার অজুহাত দেখিয়ে, ভুলবাল হিসেব দেখিয়ে কাজের নয়-ছয় করে বিল হাতিয়ে নেয়া। অনেক টিকাদারকে বলতে শুনেছি – পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাজ মানে ৮০ ভাগ লাভ! আসলে যদি তাই হয়, তাহলে এটা কাজের নামে জনগণের অর্থ লুটপাট বৈ আর কিছু নয়! এ দূর্ভোগের-দূর্ভাগ্যের স্ট্র্যাটেজিতে চলছে আমাদের দেশ!

অপরিকল্পিত, অদূরদর্শী, অব্যস্থাপনার অপরিনামদর্শী উন্নয়ন প্রকল্প জনগণের দূর্ভোগ দূর্গতি বাড়িয়ে তুলছে। বৃহত্তর সিলেটের বন্যার মূলের কারণ এটি। বন্যার ভয়াল অবস্থার প্রেক্ষিতে সরকারের যে সকল রতি-মহারতিরা বলছেন, পানির প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হলে বাধ বা সড়ক কেটে দিন, ব্রীজ ভেঙে দিন – তাদেরকে এ কারণেই জবাবদিহির আওতাধীন করা উচিৎ যে, এটা কেন তারা আগে ভাবেনি?

আমরা ভালো করে জানি, দেশপ্রেম বিবর্জিত উন্নয়নে জনদূর্ভোগ বাড়ে বৈ কমে না! এটা ভাটির দেশ। ভাটির দেশের সড়ক যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয় করতে হয় গবেষণা লব্ধ জ্ঞানের আলোকে। বিশেষজ্ঞগণের মতামত নিয়ে। এর কোনোকিছু-ই হয়নি এদেশে। গত দু’দিন বৃষ্টিপাত না হলেও উজানের ঢলে মনু নদের পানি বাড়ছে, কুশিয়ারার পানিও বাড়ছে। একটা কথা স্পষ্টত বলতে চাই, প্রায়শ: বছরে বর্ষা মৌসূমে যখন বন্যার আশঙ্কা দেখা দেয় তখনই শহর রক্ষার নামে একদল লোক সদা তৎপর হয়ে ওঠেন। অবস্থা বেগতিক দেখলে হাওর কাউয়া দিঘীর দিকে মনুর বাঁধ কেঁটে দেন। এতে করে রাজনগর উপজেলার হাজার হাজার হেক্টরের ফসলী জমি, ফসল, ঘরবাড়ি, মাছ, গবাদিপশু ও মোরগের খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়! ধ্বংস হয় রাস্তা-ঘাট! একই সংসদীয় নির্বাচনী আসনের অধীনে থাকায় বন্যাপরবর্তীতে আবার যে বরাদ্দ আসে সেখানে হিস্যা থাকে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার সাথে সমানে সমান অনুপাতে। এটা যুক্তির বিচারে অন্যায়। আমাদের রাজনগরবাসীর উচিৎ হবে, এবার এরকম কিছু হলে আন্দোলন সংগ্রামের জন্য প্রস্তত থাকা।