মহামারীর প্রেক্ষাপটে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি জরুরি নয় ঃমির্জা ফখরুল

প্রকাশিত: ৬:৩০ অপরাহ্ণ, জুন ৯, ২০২০

মহামারীর প্রেক্ষাপটে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি জরুরি নয় ঃমির্জা ফখরুল

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, করোনাভাইরাস মহামারীর প্রেক্ষাপটে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি জরুরি নয় । মানুষের জীবন-জীবিকা রক্ষায় সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি।

আসছে অর্থবছরের বাজেট সামনে রেখে মঙ্গলবার ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে দলের প্রস্তাবনা তুলে ধরতে গিয়ে
তিনি বলেন, “করোনা সংকটকালে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির দিকে জোর না দিয়ে মানুষের জীবন রক্ষা ও জীবিকার বিষয়টি সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে। করোনা সংক্রমণ রোধ করতে না পারলে কোনোভাবেই অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধার করা সম্ভব নয়। স্বাস্থ্যখাতে এহেন ঝুঁকি থাকলে অর্থনীতির স্বস্তির কোনো অবকাশ নেই।

‘তিন বছর মেয়াদী পুনরুদ্ধার পরিকল্পনার আলোকে’ মহামারী পরিস্থিতি উত্তরণে মধ্যমেয়াদি বাজেট কাঠামোয় মুদ্রা ও রাজস্ব নীতির সমন্বয়ে নতুন ব্যবস্থা, অর্থনীতির সংকোচন রোধে কর্মসংস্থান ধরে রাখা, আয় সংকোচন রোধে ব্যবস্থা এবং নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সর্বোচ্চ জোর দেওয়ার সুপারিশ করেছে বিএনপি।

মহামারী মোকাবিলায় ৪ এপ্রিল দলের পক্ষ থেকে ৮৭ হাজার কোটি টাকার আর্থিক সহায়তার যে প্যাকেজ প্রস্তাব করা হয়েছিলে তাকে বাজেট প্রণয়নের প্রাথমিক ভিত্তি হিসেবে বিবেচনা নেওয়া আহ্বান জানান বিএনপি মহাসচিব।

প্রত্যেকের জন্য পারিবারিক চিকিৎসক, নার্স ও অবকাঠামোসহ স্বাস্থ্যখাতে সামগ্রিক ব্যয়ের জন্য বাজেটে জিডিপির পাঁচ শতাংশ বরাদ্দ দিয়ে দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে স্বাস্থ্য ভাতার আওতায় আনার সুপারিশ তুলে ধরেন তিনি।

মির্জা ফখরুল বলেন, “অর্থনীতি সংকুচিত হওয়ায় আয়কর ও মূল্য সংযোজন কর কমবে, ফলে রাজস্ব আদায় আশানুরূপ হবে না। বাজেট ঘাটতি অর্থায়নের জন্য বিদেশি ঋণের ওপর জোর দিতে হবে।

“বাজেট ঘাটতি ও জিডিপির তুলনায় ঋণের অনুপাত সহনীয় কোঠায় রাখতে হবে। শুধু মুদ্রানীতি দিয়ে তারল্য যোগানের মাধ্যমে মহামারীর সংকট থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যাবে না, প্রয়োজন সক্রিয় রাজস্ব নীতির।”

মহামারী পরিস্থিতির কাণে বাজেট অর্থায়নে স্বাভাবিকের চেয়ে বাড়তি যে ঘাটতি হবে তা পূরণে একগুচ্ছ সুপারিশ তুলে ধরেছে বিএনপি।

এগুলো হলো- অপ্রয়োজনীয় ব্যয় হ্রাস, বিদ্যুৎখাতে ক্যাপাসিটি চার্জ ও ভর্তুকি বাদ দেয়া, অতিরিক্ত জনবলের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া, দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় উৎস থেকে বিদেশি অনুদান বৃদ্ধি, স্বল্প সুদে ও গ্রেস পিরিয়ডসহ দীর্ঘমেয়াদি বিদেশি ঋণ নেওয়ার চেষ্টা করা, অভ্যন্তরীণ ব্যাংকিং খাত থেকে ঋণ না নেওয়া, ট্রেজারি বিল ও সঞ্চয়পত্রের ঋণ পরিশোধে ব্যয় বাড়ানো, বৈদেশিক মুদ্রার আমদানি তহবিল গঠন, সহজে কর আদায়ের খাত বের করা, দেশে কর্মরত অনিবন্ধিত প্রায় আড়াই লাখ বিদেশির কাছ থেকে ওয়ার্ক পারমিট ও আয়কর বাবদ অর্থ আদায়, ট্রান্সফার প্রাইসিং সেল (টিপিসি) সক্রিয় করে বহুজাতিক কোম্পানিগুলো থেকে কর বৃদ্ধি, কারেন্সি সোয়াপ, বার্টার ব্যবস্থা চালু, পুঁজিবাজার বর্হিগমন নিয়ন্ত্রণ ও মুদ্রাস্ফীতি পরিস্থিতি কঠোরভাবে মনিটরিং করার মাধ্যমে বাজেটে অর্থ সংকুলানের ব্যবস্থা করা।

আর্থিক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করে খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি, বিদেশে অর্থপাচার, ভর্তুকি বৃদ্ধি ও দুর্নীতির বিস্তার ঠেকাতে সরকার ব্যর্থ বলে সমালোচনা করেন মির্জা ফখরুল।

তিনি বলেন, “কোভিড-১৯ বিশ্বব্যাপী সমাজ, অর্থনীতি, রাজনীতি সব কিছুর মধ্যে এক ধরনের পরিবর্তনের আভাস দিচ্ছে। আমুল পরিবর্তন না করলে অর্থনীতি অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থবির হয়ে যাবে এবং সামাজিক স্থিতিশীলতায় বড় ধরনের আঘাত আসবে। এই পরিবর্তন কীভাবে ঘটবে তা নির্ভর করবে রাষ্ট্রের সঙ্গে জনগণের সম্পর্কের ওপর, অর্থাৎ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় জনগণের কাছে সরকার কতটুকু জবাবদিহি থাকবে তার ওপর।

“বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের জনগণের কাছে জবাবদিহিতা নেই। কারণ তারা জনগণের ভোটের তোয়াক্কা করে না। একটি প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের কারণে সরকারের কোনো বৈধতা নেই। তারপরও এই মহাসংকটের সময়ে বৃহত্তর স্বার্থে আমরা দল-মত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ জাতীয় প্রয়াসের আহ্বান জানাচ্ছি।”

মহামারীর সংকট মোকাবিলায় ব্যর্থতা ও সামাজিক-রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক পরিণতির দায় সরকারকেই নিতে হবে বলে মন্তব্য করেন বিএনপি মহাসচিব।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

লাইভ রেডিও

Calendar

April 2024
S M T W T F S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930