মালয়েশিয়ার ডিটেনশন ক্যাম্পে ৩ জন বাংলাদেশি মারা গেছেন

প্রকাশিত: ৯:২৯ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ২, ২০২১

মালয়েশিয়ার ডিটেনশন ক্যাম্পে  ৩ জন বাংলাদেশি মারা গেছেন

মালয়েশিয়ার ডিটেনশন ক্যাম্পে বাংলাদেশিসহ ১০৫ জন বিদেশি মারা গেছেন। দেশটির অভিবাসন বিভাগের তথ্যানুযায়ী, ২০২০ সাল থেকে ২৩ আগস্ট পর্যন্ত ইমিগ্রেশন ডিটেনশন সেন্টার, পুলিশ হেফাজত ও কারাগারে বন্দি অবস্থায় ১০৫ জন বিদেশির মৃত্যু হয়। সম্প্রতি সংসদে দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দাতুক সেরি হামজা জয়নুদ্দিন এ তথ্য জানান।

মৃত্যুর দিক থেকে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে ইন্দোনেশিয়ার নাগরিকদের। এরপরে রয়েছে ভারত, মিয়ানমার, পাকিস্তান, কম্বোডিয়া, কানাডা, নাইজেরিয়া ও ভিয়েতনামের নাগরিকরা। এদের মধ্যে তিনজন বাংলাদেশিও রয়েছেন।

চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২৩ আগস্ট পর্যন্ত ইমিগ্রেশন ডিটেনশন সেন্টারে ৬৫ জন বন্দির মৃত্যু হয়। এর মধ্যে ২০ জন ফিলিপিনো, দুইজন ভারতীয়, দুইজন ভিয়েতনামি ও বতসোয়ানা, ইন্দোনেশিয়া, ইরান ও মিয়ানমারের একজন করে মারা গেছেন।

 

স্থানীয় সময় শুক্রবার (১ অক্টোবর) এক বিবৃতিতে অভিবাসন বিভাগের মহাপরিচালক খায়রুল জাজাইমি দাউদ ডিটেনশন ক্যাম্পে মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এদিকে মালয়েশিয়ায় বিভিন্ন কারণে অবৈধ হয়ে আটক ও অভিবাসন আইন লঙ্ঘনের দায়ে সাজা ভোগ করছেন প্রায় এক হাজার ৬৭৮ জন বাংলাদেশি। এর মধ্যে অনেকে সাজা ভোগ করে বিভিন্ন ডিটেনশন ক্যাম্পে দেশে ফেরার অপেক্ষায় রয়েছেন। তবে বন্দির সংখ্যা দুই হাজারেরও বেশি হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বন্দিদের সঙ্গে স্বজনদের সাক্ষাতের কোনো সুযোগ নেই। যতদিন ভেতরে থাকবেন ততদিন বাইরের পৃথিবীর সঙ্গে যোগাযোগ করার কোনো সুযোগ থাকে না। এছাড়া ভেতরে বন্দিদের সঙ্গে আদতে কী হচ্ছে বাইরে এসে কেউ প্রকাশ করতে চান না। বিভিন্ন জটিলতার কারণে অনেক সময় সাজার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও কেউ কেউ যথাসময়ে দেশে ফেরত যেতে পারেন না। পর্যাপ্ত তথ্য প্রমাণাদির অভাব, পাসপোর্টের মেয়াদ না থাকা, সঙ্গে কোনো কাগজপত্র না থাকা, বিমানের টিকিট কিনতে না পারা, দূতাবাস থেকে সময়মত কাগজপত্র (টিপি) না পাঠানো ইত্যাদি কারণে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়।

তবে দূতাবাস সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেরি হওয়ার মূল কারণ হচ্ছে, যারা পাসপোর্ট ছাড়া আটক হন তাদের তথ্য ডিটেনশন সেন্টারে পাঠাতে হলে আগে দেশ থেকে তার নিজ এলাকার প্রশাসন থেকে প্রমাণ জোগাড় করতে হয়, যা সময়সাপেক্ষ। এটা সম্পন্ন করতে অনেক সময় লেগে যায়। আবার দেখা গেছে সব ডকুমেন্ট আছে কিন্তু, টিকিট কেনার পয়সা নেই।

 

বন্দিদের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মালয়েশিয়ায় আটকের পর সাজা হলে নানা ভোগান্তিতে পড়তে হয়। কাগজপত্র সংগ্রহসহ নিজ দেশে ফেরা পর্যন্ত এ ভোগান্তির কোনো শেষ নেই। যিনি বন্দী আছেন, মালয়েশিয়ায় তার কোনো স্বজন নেই ও বাইরের পৃথিবীর সঙ্গে তার সংযোগ না থাকায় দূতাবাস থেকে ডকুমেন্ট সংগ্রহ পারেন না। একইভাবের বিমান টিকিটও ক্রয় করতে পারেন না। এসব অসঙ্গতির কারণে নিজ দেশে প্রত্যাবর্তনে মাসের পর মাস অপেক্ষা করতে হয় তাদের।

স্বজনদের দাবি, বন্দিদের যেন সরকারি খরচে দেশে ফিরিয়ে নেওয়া হয়। যেমনটি গত সপ্তাহে মিয়ানমারের জান্তা সরকার করেছেন। জান্তা সরকার সামরিক বিমান পাঠিয়ে তার দেশের বন্দিদের ফিরিয়ে নিয়ে গেছে।

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, অবৈধ হয়ে কিংবা অভিবাসন আইন লঙ্ঘনের দায়ে আটক হলে প্রথমে তাদের ১৪ দিনের রিমান্ডে রাখা হয়। এরপর তাদের আদালতে হাজির করে সাজা দেওয়ার মাধ্যমে জেলখানায় পাঠানো হয়। সাজা শেষ হলে ডিটেনশন সেন্টারে রাখা হয়। এরপর অনির্দিষ্টকালের জন্য দেশে ফেরার অপেক্ষায় থাকতে হয়।

দূতাবাস সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যাবতীয় প্রক্রিয়া মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করে। যাদের বৈধ পাসপোর্ট আছে তাদের ইমিগ্রেশন সরাসরি দেশে ফেরত পাঠিয়ে দেয়। এক্ষেত্রে হাইকমিশনের কোনো কাজ নেই। এর মধ্যে কেবল যাদের বৈধ ট্রাভেল ডকুমেন্ট নেই বা পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ তাদের ট্রাভেল পারমিট নিতে হয়। তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে ট্রাভেল পারমিট (টিপি) ইস্যু করা হয়।

এক্ষেত্রে ব্যক্তি যে ক্যাম্পে থাকেন সেই ক্যাম্পের মাধ্যমে টিপি আবেদন হাইকমিশনে পাঠায়। হাইকমিশন আবেদনে উল্লিখিত তথ্য ও পাসপোর্টের তথ্য যাচাই করে নাগরিকত্ব নিশ্চিত হয়ে টিপি ইস্যু করে। হাইকমিশন থেকে নিয়মিত ক্যাম্প ভিজিট করে বাংলাদেশি নাগরিক সাক্ষাৎকার নিয়ে দ্রুত দেশে পাঠানো হয়।

এদিকে, মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিকরা অনেক সময় বাংলাদেশি পরিচয় দিয়ে ট্রাভেল পারমিট নেওয়ার আবেদন করে বলে জানা যায়। তাদের আবেদন যাচাই করে বাতিল করে দেওয়া হয়। করোনায় আক্রান্ত হওয়া ও নিয়মিত ফ্লাইট চলাচল না থাকায় দেশে ফেরত পাঠানোর এ কার্যক্রম অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে বিলম্বিত হয়।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

লাইভ রেডিও

Calendar

April 2024
S M T W T F S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930