মেয়াদ শেষে পদ ছাড়তে হবে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানদের

প্রকাশিত: ১০:৪২ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ২২, ২০২১

মেয়াদ শেষে পদ ছাড়তে হবে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানদের

 

 

 

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ সিটি করপোরেশনের মেয়রদের মতো পাঁচ বছর মেয়াদ পূর্ণ হলেই জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানদেরও পদ ছাড়তে হবে। মামলার মারপ্যাঁচে মেয়াদোত্তীর্ণ চেয়ারম্যানরা আর ক্ষমতা আঁকড়ে থাকতে পারবেন না। এজন্য সরকার উপজেলা চেয়ারম্যানদের মেয়াদ শেষ হলেই অন্তর্বর্তীকালীন ‘প্রশাসক’ নিয়োগ দেবে। তারা পরবর্তী নির্বাচন পর্যন্ত জেলা পরিষদের দৈনন্দিন কাজ চালিয়ে যাবেন। তারা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করবেন।

 

 

 

এমন বিধান রেখেই বিদ্যমান জেলা পরিষদ আইন ২০০০-এর সংশোধনী আনা হচ্ছে। এ লক্ষ্যে সরকার ‘জেলা পরিষদ (সংশোধন) আইন’ ২০২১ প্রণয়ন করেছে। আজ সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ভার্চুয়াল মন্ত্রিসভার বৈঠকে আইনটি অনুমোদন পেতে পারে। এ আইন অনুমোদন পেলে পদে থেকে চেয়ারম্যানরা আর জেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

 

 

 

এ বিষয়ে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেছেন, দেশের উন্নয়নে জেলা পরিষদ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। এটিকে আরও শক্তিশালী এবং কার্যকর করতে আইনে সংশোধনী আনা হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা এবং উপজেলা পরিষদ আইনকেও যুগোপযোগী করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে জেলা পরিষদ আইন সংশোধনের কাজ চূড়ান্ত করা হয়েছে, যা মন্ত্রিপরিষদ সভায় উত্থাপনের অপেক্ষায় রয়েছে।

 

 

 

মন্ত্রী আরও বলেন, কয়েকটি জেলায় ১৩-১৬টি উপজেলা রয়েছে। আবার কোনো কোনো জেলায় তিনটি অথবা পাঁচ থেকে ১০টি উপজেলা রয়েছে। কিন্তু সব জেলা পরিষদ সদস্য সংখ্যা ২০ জন। অন্যদিকে প্রতিটি জেলার আর্থিক সক্ষমতা সমান নয়। তাই সংশোধিত আইনে প্রতিটি উপজেলা থেকে একজন করে সদস্য এবং তিনটি উপজেলা থেকে একজন নারী সদস্য নিয়ে জেলা পরিষদ গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে পৌরসভা থেকে মেয়র বা প্রতিনিধি জেলা পরিষদে সদস্য থাকবেন।

 

 

 

সংশ্নিষ্ট সূত্র বলছে, বাংলাদেশ সংবিধানের ৫৯(১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘আইন অনুযায়ী নির্বাচিত ব্যক্তিদের সমন্বয়ে গঠিত প্রতিষ্ঠানসমূহের ওপর প্রজাতন্ত্রের প্রত্যেক প্রশাসনিক একাংশের স্থানীয় শাসনের ভার প্রদান করা হইবে। ইতিমধ্যে আইনের দ্বারা ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা পরিষদকে প্রশাসনিক ইউনিট ঘোষণা করা হয়েছে। পৌরসভা/সিটি করপোরেশনও এর অন্তর্ভুক্ত। পরে নির্বাচনের বিধান রেখে প্রতিটি ইউনিটের জন্য আলাদা আলাদা আইন করা হয়। এই আইন অনুযায়ী ইউনিয়ন, উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনের নির্বাচনও হয়েছে। কিন্তু জেলা পরিষদের নির্বাচন বিষয়ে কিছু বলা ছিল না।

 

 

 

পরবর্তী সময়ে ১৯৮৮ সালে প্রথম জেলা পরিষদগুলোতে চেয়ারম্যান হিসেবে সরাসরি নিয়োগ দেওয়া হয় সংসদ সদস্যদের। ১৯৯০ সালে এরশাদ সরকারের পতনের পর ১৯৯১ সালে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানদের নিয়োগ বাতিল করা হয়। তখন থেকে একজন সরকারি কর্মকর্তার নিয়ন্ত্রণে চলছিল জেলা পরিষদ। দীর্ঘ ১৮ বছর পর ২০০৯ সালে জেলা পরিষদে প্রশাসক হিসেবে স্থানীয় নেতাদের নিয়োগ দেয় আওয়ামী লীগ সরকার।

 

 

 

সংশোধনী আইনে বলা হয়েছে- জেলা পরিষদ আইন-২০০০-এর ধারা ৫-অনুযায়ী নির্বাচিত জেলা পরিষদের মেয়াদ প্রথম সভার তারিখ থেকে পাঁচ বছরের জন্য রেখে দেওয়া হবে। বর্তমান জেলা পরিষদের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও নবনির্বাচিত পরিষদের প্রথম বৈঠকে বসার আগ পর্যন্ত পুরোনো পরিষদ তাদের দায়িত্ব পালন করবে। এই ধারায় প্রস্তাবিত সংশোধনীতে বলা হয়েছে, স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন-২০০৯ অনুযায়ী, সিটি করপোরেশনের মেয়াদ উত্তীর্ণ হলে সরকার ‘প্রশাসক’ নিয়োগ দেয়। তাই জেলা পরিষদেও এমন বিধান থাকা প্রয়োজন। জেলা পরিষদ মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার ক্ষেত্রে প্রশাসক নিয়োগ কিংবা সরকারের অনুমোদনক্রমে আগের পরিষদ কার্যক্রম চালিয়ে যাবে। কোনো জেলা পরিষদ মেয়াদ উত্তীর্ণ হলে পরিষদ গঠন না হওয়া পর্যন্ত পরিষদের কার্যাবলি সম্পাদনের জন্য একজন উপযুক্ত ব্যক্তি বা প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিযুক্ত কর্মকর্তাকে প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দিতে পারবে সরকার। নিয়োগকৃত প্রশাসকের মেয়াদকাল বা প্রশাসকের অপসারণ সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নিয়ন্ত্রিত হবে।’

 

 

 

বিদ্যমান আইনের ৩৯(১) উপধারার নিয়ম অনুযায়ী ‘সচিব’ পদটি থাকছে না। এর বদলে ‘নির্বাহী কর্মকর্তা’ পদবি হবে। কারণ সচিব পদটি প্রশাসনের সর্বোচ্চ পদ। কিন্তু সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ‘সচিব’ পদনাম থাকায় সেটি বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করে। তাই ‘সচিব’ পদটি পরিবর্তন করা হচ্ছে। বিদ্যমান আইন অনুযায়ী, প্রতি জেলায় ১ জন চেয়ারম্যান, ১৫ জন সদস্য ও ৫ জন নারী সদস্য অর্থাৎ মোট ২১ সদস্যের পরিষদ রয়েছে। সংশোধনে প্রতিটি জেলায় একেকটি উপজেলার একজন করে সদস্য এবং সদস্য সংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ নারী সদস্য থাকবে।

 

 

 

বিদ্যমান আইনের ৪৯ নম্বর ধারা অনুযায়ী, উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে সিটি করপোরেশন (যদি থাকে), উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদ বা কোনো ব্যক্তির পরামর্শ বিবেচনায় নিতে পারে। সংশোধনীতে এ ধরনের পরামর্শ ‘সরকারের পূর্বানুমোদনক্রমে নিতে হবে। বিদ্যমান আইনে দুটি উপধারা সংশোধনীতে যোগ করা হচ্ছে। ৩৩ নম্বর ধারায় নতুন একটি উপধারা যোগ করে সংশ্নিষ্ট উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউএনও, সিটি করপোরেশন মেয়রের প্রতিনিধিরা পদাধিকার বলে জেলা পরিষদের বৈঠকে অংশ নেওয়ার সুযোগ পাবেন। এর মাধ্যমে সংশ্নিষ্ট সিটি করপোরেশন (যদি থাকে), পৌরসভা, এলজিইডির উন্নয়ন কাজের সঙ্গে জেলা পরিষদের উন্নয়ন কাজের সমন্বয় ও দ্বৈততা এড়ানোর জন্য এই ধারা যুক্ত করা হচ্ছে। তবে বৈঠকে অংশ নিলেও উল্লিখিত প্রতিনিধিদের ভোটাধিকার থাকবে না। অন্যদিকে জেলা পরিষদের বাৎসরিক প্রতিবেদন সরকারের কাছে পেশ করতে হবে।

 

 

লাইভ রেডিও

Calendar

March 2024
S M T W T F S
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31