মৌলভীবাজারের ইছাছড়া গীর্জা ভাংচুর ও ধর্মীয় অবমাননার মামলায় ৫ আসামীর কারাদণ্ড

প্রকাশিত: ২:৪৬ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ২২, ২০২৪

মৌলভীবাজারের ইছাছড়া গীর্জা ভাংচুর ও ধর্মীয় অবমাননার মামলায় ৫ আসামীর কারাদণ্ড
কপিল দেব, মৌলভীবাজার:
মৌলভীবাজার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ৫ নং আমলী আদালতে কুলাউড়ার ইছাছড়া গীর্জা ভাংচুর ও ধর্মীয় অবমাননার অভিযোগ দায়ের করা মামলায় ৫ জন আসামীকে কারাদণ্ড ও জরিমানা দিয়েছেন জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ৪র্থ আদালত।
রবিবার (২১ এপ্রিল ) দুপুরে জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ৪র্থ আদালতের বিচারক মো: ইসমাইল হোসেন এ রায় প্রদান করেন।
কারাদণ্ড ও জরিমানা প্রাপ্ত আসামিরা হলেন, মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার ট্রাট্রিউলী এলাকার মৃত আব্দুছ সত্তারের ছেলে রফিক মিয়া ও  বশির মিয়া, রহমান আলীর ছেলে হারুন মিয়া, আব্দুল মছব্বির মিয়ার ছেলে  সৈয়দ আব্দুল বাছিত,উসমান আলীর ছেলে উস্তার আলী।
রায় প্রদান কালে উস্তার আলী আদালতে উপস্থিত ছিলেন এবং রফিক মিয়া,বশির মিয়া, হারুন মিয়া আব্দুল বাছিত পলাতক ছিলেন।
আদালতে রায় প্রদানের সময় বাদী পক্ষে অ্যাডভোকেট ডাডলী ডেরিক প্রেন্টিস ও অ্যাডভোকেট, মাহবুবুর রহমান,অ্যাডভোকেট আবুল হাসান, অ্যাডভোকেট সুরাইয়া আক্তার ও আসামীদের পক্ষে এডভোকেট আব্দুল মতিন উপস্থিত ছিলেন।
বাদী পক্ষে অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান  ও মামলা সূত্রে জানা যায়, কুলাউড়া উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নে অবস্থিত ইছাছড়া পুঞ্জি। অনুমান ৫০টি খাসিয়া আদিবাসী পরিবার বংশ পরম্পরায় স্মরণাতীত কাল থেকে এই পুঞ্জিতে বসবাসরত। পুঞ্জির অন্যতম বাসিন্দা ছিলেন জেসপার আমলেরং, যিনি ঘটনার সময় মূলত ক্যান্সার আক্রান্ত মুমূর্ষ রোগী ছিলেন। আসামী রফিক মিয়া জেসপার আমলেরং এর অসুস্থতার সুযোগে ভুয়া দলিল সৃজন করে এবং ২০২০ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর রাতের আঁধারে জেসপারের মালিকানাধীন ৫ একর পরিমাণ টিলা ভূমি পানজুম দখল করে নেয়। সেখানে ঘর বানিয়ে শ্রমিক নিয়োগ করে পান উত্তোলন শুরু করে। অসুস্থ জেসপার আমলেরং এবং তার পক্ষে কুবরাজ আন্ত পুঞ্জি উন্নয়ন সংগঠনের নিরন্তর চেষ্টা ও তদবির, প্রশাসনের বিভিন্ন ছরে, আবেদন নিবেদন, প্রতিবাদ বিক্ষোভের এক পর্যায়ে প্রায় ২ মাস পর বিগত ০৯/১১/২০২০ তারিখে দুপুর ১২.০০ টায় কুলাউড়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তাসহ পুলিশ প্রশাসন, র‍্যাব-৯ এর উপস্থিতিতে রফিক বাহিনীর দখল থেকে বর্ণিত পান জুম উদ্ধার করে জেসপারের নিকট পুনরায় হস্তান্তর করেন। প্রশাসনের কর্মকর্তারা বিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার কিছুক্ষন পরপরই রফিক বাহিনী পুনরায় সংগঠিত হয়ে সন্ধ্যা ৭.০০ টার সময় বর্ণিত জুম দখলের জন্য পাল্টা হামলা চালিয়ে পুঞ্জিবাসীকে আহত করে এবং ইছাছড়া ক্যাথলিক গীর্জাঘরে হামলা করে গীর্জা ভাংচুর এবং অপবিত্র করে। কিন্তু পুঞ্জি অধিবাসীরা সংগঠিত থাকায় রফিক গং সেই জুম আর দখল করতে পারেনি।
পরবর্তীতে ০৯/১১/২০২০ তারিখে রফিক মিয়ার বাহিনীর উক্ত হামলা, মারামারি, গীর্জা ঘর ভাংচুর এবং ধর্মীয় অবমাননার অভিযোগে পুঞ্জিবাসী কুলাউড়া থানায় অভিযোগ দায়ের করলেও কুলাউড়া থানা কর্তৃপক্ষ মারামারি সংক্রান্তে মামলা রেকর্ড করেন। গীর্জাঘর ভাংচুর এবং ধর্মীয় অবমাননার অভিযোগে দন্ডবিধির ২৯৫ এবং ২৯৫ (ক) ধারা রেকর্ড করেননি। পরবর্তীতে পুঞ্জিবাসীর পক্ষে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ৫নং আমল আদালতে নালিশ আকারে রফিক মিয়া সহ মোট ১২ জন আসামীর বিরুদ্ধে গীর্জাঘর ভাংচুর এবং ধর্মীয় অবমাননার অভিযোগে ২৯৫ এবং ২৯৫ (ক) ধারায় মামলা দায়ের করলে বিজ্ঞ আদালত পিবিআইকে তদন্তের আদেশ দেন। তদন্তে সত্যতা পাওয়া গেলে পিবিআই আসামীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পত্র দাখিল করে এবং মামলাটি বিচারের নিমিত্তে জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ৪র্থ আদালতে প্রেরণ করেন।
আদালতের বিচারক ৫ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে আসামিদের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমানিত হলে এ রায় প্রদান করেন।
বাদী পক্ষে অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান জানান, বিজ্ঞ আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ সন্দেহাতীত ভাবে প্রমাণিত হওয়ায় প্রত্যেক আসামিদেরকে ১ বছরের কারাদণ্ড ও প্রত্যেককে ১০০০/- টাকা জরিমানা করে রায় প্রদান করেন। রায় ঘোষণার সময় ১জন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি আদালতে উপস্থিত ছিলেন ও ৪ জন আসামি পলাতক ছিলেন।
মামলার রায় ঘোষণার পর মামলার বাদী এবং ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তিবর্গ, লক্ষীপুর মিশনের ফাদার জোসেফ গোমেজ, বৃহত্তর সিলেট আদিবাসী অধিকার সুরক্ষা নাগরিক কমিটির সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক যথাক্রমে অ্যাডভোকেট ডাডলী ডেরিক প্রেন্টিস ও অ্যাডভোকেট আবুল হাসান, কুবরাজ আন্তঃ পুজি সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ফ্লোরা বাবলী তালাং আদালতের প্রদত্ত রায়ে সন্তুষ্টি প্রদান করেন।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

লাইভ রেডিও

Calendar

May 2024
S M T W T F S
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031